অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আমেরিকায় পিএইচডি করতে গিয়ে আত্মহত্যা করলেন চুয়েট শিক্ষক অভিজিৎ

0
.

পিএইচডি করতে আমেরিকায় গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিজিৎ হিরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের মারকিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ রুমে আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনো জানা যায়নি।

সুইডেন জনকোপিং, বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র কক্সবাজারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন তার ফেসবুকে অভিজিৎ হীরার আত্মহত্যার নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন।  নীচে কমেন্টসে তিনি এ সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি বিদেশী অনলাইন নিউজের লিংক শেয়ার করেছেন।

দেলোয়ার হোসেন তার পোস্টে লিখেছেন-“প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ছে৷ এর মধ্যে বিকালে খবর পেলাম মারকুয়েট ইউনিভার্সিটিতে এক বাংলাদেশি ছাত্র নিজের ল্যাবে আত্মহত্যা করেছে৷ নাম অভিজিৎ হীরা, পিএইচডি করছিল সেখানে৷ আত্মহননের আগে তিনরাত ল্যাবেই কাটিয়েছে৷ কিছু একটা বের করার চেষ্টা করছিল নিশ্চয়, হয়ত চাপ ছিল তার উপর অনেক কিন্তু সফল হয়নি৷ এখবর পড়ার পর মনে হল ঠান্ডা আরো বেড়ে গেছে৷ শরীর ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল৷
ভাবতেছিলাম, পড়াশোনার কী পরিমাণ চাপ থাকলে এক ছাত্র আত্মহত্যাকে শ্রেয় মনে করে! আমার নিজের পিএইচডি শুরুর আগে আমেরিকায় অনেক পিএইচডি স্টুডেন্টকে হিমশিম খেতে দেখেছি৷ সুপারভাইজার, প্রফেসরের চাপ ও খামখেয়ালি আচরণের কথা শুনেছি৷ নিজে পিএইচডি শুরুর পর বুঝেছি, এই জীবন আমি চাইনি৷ এই সীমাহীন চাপ বহন করে প্রাপ্তি কী?
অভিজিৎ হীরার জন্য খুব খারাপ লাগল৷ আহা না জানি কত স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকা এসেছিল৷ না জানি তার বাবা-মা কত স্বপ্ন দেখেছিল৷ সেই স্বপ্ন পূরণের বদলে স্বপ্নের দেশ থেকে অভিজিৎ লাশ হয়ে ফিরবে কে জানত!”

.

চুয়েট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে তিনি পিএইচডি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মারকিউট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান অভিজিৎ । সেখানে তার পড়াশোনার বিষয় ছিল ইলেকট্রিকাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিসটেন্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। গবেষণায় ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক ও এনক্রিপশন টেকনোলজি নিয়ে ইতোমধ্যেই ১২টি পাবলিকেশন সম্পন্ন করেছেন তিনি।

মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করছিলেন। তার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে চুয়েট পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য, অভিজিৎ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলি কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ২০১৮ সালে চুয়েটে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছিলেন তিনি।

এদিকে চুয়েটের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অভিজিৎ হীরা গতকাল সকালে যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ২৭ বছর। তিনি গোপালগঞ্জের টুঠামান্দ্রা গ্রামের মৃনাল কান্তি হীরার সন্তান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মারকুয়িট ইউনিভার্সিটিতে (Marqueete University) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে “ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যান্ড অ্যানক্রিপশন টেকনোলজি” (Wireless Networks and Encryption Technology) বিষয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত ছিলেন।

তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম মহোদয় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

এক শোকবার্তায় চুয়েট ভিসি বলেন, “জনাব অভিজিৎ হীরা একজন মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চুয়েটের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। পাশাপাশি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”

এদিকে জনাব অভিজিৎ হীরার মৃত্যুতে চুয়েট শিক্ষক সমিতি শোক জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনা এবং পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি (সোমবার), সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে অভিজিৎ হীরা স্মরণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।