অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

মুজিববর্ষের নামে কোটি টাকার প্রতারণা, কথিত ‘বনবন্ধু’ ইকবাল গ্রেপ্তার

0
.

মুজিববর্ষে গাছ লাগানোর কথা বলে ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত চিঠি পাঠিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জাহিদুর রহমান ইকবাল নামের একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার কেরেছ পুলিশ। গ্রেপ্তার ইকবাল নিজেকে ‘বনবন্ধু’ বলে পরিচয় দিতেন।

বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুণ-অর-রশীদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে ২৭০টি সিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪টি, মুজিব বর্ষের লোগা ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত চিঠি ৫০০টি, সিপিইউ দুটি, প্রিন্টার দুটি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দুটি, ল্যাপটপ একটি, মোবাইল দুটি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার ইকবাল ওরফে বনবন্ধু গত ৩০ বছর ধরে কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রতারণা করে আসছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিব বর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন। এগুলো ব্যবহার করে তিনি প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর মাধমে তিনি তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।

,

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইকবাল ‘বনবন্ধু জাহিদুর ট্রি প্লান্টেশন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দিতেন। মুজিববর্ষে তিনি বিভিন্ন জায়গা গাছ লাগাবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিতেন। ইকবাল প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। অবৈধভাবে সিল তৈরি ও সংরক্ষণ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পাঠিয়েছেন। কনসালটেন্ট গ্রুপ লিমিটেড, এসএম ই কনসালটেন্ট লিমিটেড, ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামক তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। তিনি কোম্পানিগুলোর কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন লোন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করতেন এই প্রতারক।

ডিসি হারুন বলেন, ইকবাল ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতির পিতার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করতেন, যা জাতির পিতার ছবির অবমাননার শামিল। এছাড়াও এনবিআর, আয়করের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে লোন প্রসেসিং, বাংলাদেশ ট্রি প্লান্টেশন ফাউন্ডেশন নামে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে বৃক্ষরোপণের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে আমরা শত শত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম তিনি তখন বলেন আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক সেটা তো আমি কন্সালটেন্সি ফার্ম করে দিয়েছি। সেটাও নাকি বিনা পয়সায় করে দিয়েছেন। তিনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সিইও ও চেয়ারম্যান। তার পড়াশোনার কোনও সার্টিফিকেট নেই। আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করবো। রিমান্ডে নিলে বোঝা যাবে তিনি কত লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন।

ইকবাল কী পরিমাণ টাকা হাতিয়েছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি বলেন, পাঁচশ লোকের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা করছি। তবে রিমান্ডে না নেয়া পর্যন্ত এ পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

ইকবাল কনসালটেন্ট গ্রুপ লিমিটেড, এসএমই কনসালটেন্ট লিমিটেড, ও ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেডের ব্যানারে ফিনানন্সিয়াল কনসালটেন্স, কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন, ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টস প্রসেসিং, ব্যাংক বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসেসিং, টিন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিং ইত্যাদির নামে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।