অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অবশেষে চলে গেলেন গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর

0
.

করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব। মৃত্যুকালে ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন।

মাশুক আলমগীর রাজীব জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ফকির আলমগীরের হার্ট অ্যাটাক হয়। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করা হয়।

কয়েক দিন ধরে ফকির আলমগীর জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। সেদিনই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাঁকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাঁকে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। যে কারণে জটিলতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুই ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। কিছুটা ভালোও হয়।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফকির আলমগীর। ১৮ জুলাই চিকিৎসকেরা তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।

এর আগে ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের করোনাভাইরাস পজিটিভ ফল আসে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।

ফকির আলমগীর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী। তারও আগে থেকে তিনি শ্রমজীবী মানুষের জন্য গণসংগীত করে আসছিলেন। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন ফকির আলমগীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এরমধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।

সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সরকার তাকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এই গণসংগীতশিল্পীর চির প্রস্থানে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, নকীব খান ও কুমার বিশ্বজিৎ মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফকির আলমগীরের মৃত্যু বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের গণসংগীত প্রচার ও প্রসারে তার অবদান অসামান্য।