অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চবির গবেষক দলের জরিপ: নগরীর ১৫ স্পটে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত

0
.

চট্টগ্রাম নগরীর ৯৯টি এলাকার ৫৭টি স্থানের নমুনা বিশ্লেষণ করে ১৫ স্পটে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল।

গত ৫ জুলাই থেকে এ জরিপ চালান গবেষকরা। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ না করলেও রবিবার (১ জুলাই) রাতে গবেষক দলের আহ্বায়ক চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে, আজ সোমবার (২ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি চসিককে হত্যান্তর করা হবে। এটি হাতে পেলে মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরালো হবে।

গবেষক দল বলছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে ৫৭টি স্পট থেকে গত জুলাই মাসে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এতে পরীক্ষা করে ১৫টি স্পটে শতভাগ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।

তারা বলেন, নগরীতে মশার উপদ্রব বাড়ায় সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর ওষুধ নিশ্চিতকরণে সহযোগিতার উদ্দেশে একটি কমিটি গঠন করেন চবি উপাচার্য। গত ৫ জুলাই থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিয়ে গবেষক দল মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। লার্ভাগুলো লালন-পালনের পর জন্ম নেওয়া মশাগুলোর ওপর ওষুধ প্রয়োগ করে ১৫টি স্পটে শতভাগ এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।

এদিকে এ বছর চট্টগ্রামে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস। এরই মধ্যে এ রোগে চট্টগ্রামে দুজন মারা গেছে।

গবেষক দলের আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অনুরোধ করা হয়। এরপর তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। ৫ জুলাই থেকে ওই কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ৫১টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। তবে কোন কোন স্পটে লার্ভা পাওয়া গেছে তা উল্লেখ করা হয়নি।

ড. রবিউল হাসান আরও বলেন, আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গবেষণার চূড়ান্ত রিপোর্ট চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে সিটি কর্পোরেশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।

তিনি বলেন, অনেকগুলো লার্ভা লালন-পালন করে এখন মশা হয়ে গেছে। মশাগুলোর ওপর ওষুধ প্রয়োগ করে কার্যকারিতা দেখছি। কোন ওষুধ মশা মারার জন্য কার্যকর তা আমাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। এছাড়া, কোন ওষুধ কি পরিমাণে দিতে হবে, কীভাবে ওষুধ প্রয়োগ করলে মশা নিধন সহজ হবে তা উল্লেখ করা হবে প্রতিবেদনে।

এর আগে নগরীতে মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর গুণগত মান পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় চসিক। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ মার্চ ব্যবহৃত ওষুধ পরীক্ষা করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে অনুরোধ করে চসিক। এরপর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়াকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন চবি উপাচার্য। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী ও সদস্য সচিব ছিলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ওমর ফারুক।

৫ জুলাই থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে গবেষকরা। এরপর টানা ২৫দিন ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে নগরীর ৫১টি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬টি স্থানের মশার লার্ভা সংগ্রহ করে গবেষকরা। এতে নগরীর ১৫টি স্পটে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস।

জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির ও টায়ার এবং রাস্তার ধারে পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার এসব লার্ভার উপস্থিতি। করোনার পাশাপাশি চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারাও গেছেন দুজন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দুজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরও বলেন, মশার ওপর আমাদের যে সার্ভে হয়েছে তাতেও এডিস মিলেছে। এটা আমরা সিটি কর্পোরেশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও ওষুধ ছিটানো জোরালো করতে বলেছি। এছাড়া নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করতে বলেছি, আমরাও মাইকিং করছি। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট পাঠিয়েছি।

চসিক সূত্রে জানাগেছে, প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি ওয়ার্ডে বিশেষ টিম মশক নিধনে কাজ করবে। যে ওয়ার্ডে যেদিন অভিযান চালানো হবে সেই ওয়ার্ডের প্রত্যেকটা স্থানে মশক নিধনের অভিযান চলবে।