অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতার আত্মহত্যা

0
.

প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারহান আহম্মেদ সাকিব নামে এক ছাত্রলীগ নেতা।

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাত আটটায় নিজ বাড়িতে বিষপান করলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তার মৃত্যু হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে সাকিবের মরদেহ শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

সাকিব নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের ফজুল মিয়ার ছেলে এবং আড়াইহাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি। এই উপজেলার হাবিব বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

পরিবারের বরাত দিয়ে আড়াইহাজার থানা পুলিশ জানায়, একই গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাকিবের। তবে মেয়েটির পরিবার এই প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় দুইজন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। পরে ওই মেয়েকে তার বাবা খুঁজে বের করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। একই সঙ্গে সাকিবকে তালাক দেওয়ার জন্য মেয়েকে বাধ্য করেন। পরিবারের চাপে পড়ে মেয়েটি বাধ্য হয়ে সাকিবকে তালাক দেয়। গত কয়েকদিন আগে ওই মেয়েকে তার বাবা অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিন।

এ ঘটনার পর থেকেই সাকিব হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। শুক্রবার রাতে ‘ফারহান আহম্মেদ সাকিব’ নামে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে তিনি একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষপান করেন। পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে পরিবারের সদস্যসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনরা সাকিবকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে সাকিবের জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে জীবনের শেষ স্ট্যাটাসে সাকিব লিখেন, ‘আমি মরে গেলে দুই-তিন দিন পর সবাই আমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু আমি প্রতিটা দিন থাকবো আমার মায়ের মোনাজাতে’। এর কিছুক্ষণ পর সাকিব বিষপান করলে তার স্ট্যাটাসটি স্বজনরা দেখতে পান।

এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জোবাইয়ের আহমেদ বলেন, শনিবার সকালে সাকিবের রড় ভাই থানায় এসে মৌখিকভাবে বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। পরে আমি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পরিবারের পক্ষ থেকে সাকিবের বাবা লিখিতভাবে অভিযোগ দেবেন বলে আমাদেরকে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি আসেননি। ছেলের মৃত্যুশোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ছেলেটির বাবা সুস্থ হয়ে অভিযোগ দিতে এলে আমরা গ্রহণ করব এবং আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে ইতিমধ্যে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। সাকিবের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমরা খতিয়ে দেখব। এছাড়া আমরা পরিবারের কাছে লাশ বুঝিয়ে দিয়েছি। দাফনও হয়ে গেছে।

সাকিবের আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী রাজিবুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পাশের বাড়ির একটি মেয়ের সাথে সাকিবের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা অনেকেই জানতাম। এর সমাধানের জন্য আমরা ছেলে-মেয়ে উভয়ের পরিবারের সাথে কথাও বলেছিলাম। তবে মেয়ের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে না নিয়ে গত প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে মেয়েটিকে জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেয়। এরপর থেকেই সাকিব মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে।

উপজেলা ছাত্রলীগের এই নেতা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সাকিবের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে একজন ছাত্র এভাবে অকালে ঝরে যাবে এটা কেউই প্রত্যাশা করে না। সাকিব খুব মেধাবী ছাত্র ও একজন ভালো ছেলে ছিল। ভাই-বোনদের মধ্যে একমাত্র সাকিবই লেখাপড়া করছিল। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। কিন্তু তার আগেই অভিমান নিয়ে ছেলেটি আত্মহনন করল।

এভাবে আর কোনো ছাত্র যাতে অকালে ঝরে না যায় তার জন্য শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে না জড়িয়ে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা কাজী রাজিবুল ইসলাম জুয়েল।