অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

মারা গেলেন শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী

0
.

৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-ভাই হারানো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী মারা গেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আজ ২০ ডিসেম্বর, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার রাজধানীর ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুর বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ বিকেল চারটার দিকে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।

.

৮৩ বছর বয়সী বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট আরও বেড়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১ ডিসেম্বর (বুধবার) ভোরে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল বিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক-নাগরিক আন্দোলনে সামনের সারির সংগঠক এবং মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-ভাই হারানো বেগম মুশতারী শফীর নগরীর এনায়েতবাজারের ডাক্তার শফীর ‘মুশতারী লজ’ নামের বাড়িটি ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূতিকাগার।’ এই বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ তার কতিপয় সহকর্মীসহ এ বাড়িতে থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রণাঙ্গন চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবন থেকে প্রচার কাজ চালিয়েছিলেন ২৯ মার্চ পর্যন্ত।

মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। জন্মস্থান মালদহ জেলার কালিয়াচক (ভারত) এ। বাবার বাড়ি গেরদা , ফরিদপুর-এ। খন্দকার নাজমুল হক আনসারী অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুলিশের ডি,এস,পি ছিলেন। মা আরেফা খাতুন।

.

বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে উদীচী চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড আব্দুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড অধ্যাপক অশোক সাহা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় নেতারা বলেছেন, বেগম মুশতারী শফীর পরিবার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর স্বামী ডা. শফী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। এ কারণে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে এবং মুশতারী শফীর ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। স্বামী-ভাই হারিয়েও মুশতারী শফী মনোবল অক্ষুন্ন রেখে চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যান। স্বাধীন দেশে প্রগতিশীল সংস্কৃতির সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলন, নাগরিক আন্দোলন-সবক্ষেত্রে রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ছিল তাঁর স্বপ্ন।

বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বেগম মুশতারী শফীর অবদান অবশ্যই স্মরণে রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সিপিবির পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।