অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় শনিবারের নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি

0
13254837_709513122532810_1793240764588298626_o
ডালিয়া কুঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মীর মো. নাছির উদ্দিন

শনিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি।

শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাচনী মনিটরিং সেলের টিম লিডার মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।

নগরীর চট্টেশ্বরী রোডস্থ ডালিয়া কুঞ্জের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন দক্ষিন চট্টগ্রামে আগামীকাল  মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আমি অত্যন্ত শঙ্কিত। গত কয়েকদিন ধরে পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ ৭ উপজেলায় চলমান সহিংসতা, হামলা, অস্ত্রের মহড়া, পুলিশী অভিযান ও হয়রানির বিশাদ চিত্র তুলে ধরে মীর নাছির বলেন, আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বহিরাগত অস্ত্রধারীরা যেভাবে প্রকাশ্যে হুমকী-ধমকী দিয়ে যাচ্ছে তাতে শনিবার মা-বোনেরা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা এবং নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষার পরিবর্তে তাদেরকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে ধানের শীষের জোয়ার বইছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৭ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভ করবে। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন নির্লজ্জ্বভাবে স্থানীয় এম.পি, মন্ত্রীদের প্রভাবে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি সাতকানিয়া উপজেলায় বিনা ভোটের সাংসদ তার নিজের ভাতিজার নৌকা প্রতীকের একতরফা নির্বাচনের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে থানায় ডেকে নিয়ে হুমকী দেওয়া, প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ প্রভাব দেখানোর অভিযোগ তুলে বলেন, পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীর উপর হামলাসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে মামলা, প্রার্থীসহ ছনহরা ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের উপর রক্তাক্ত হামলা, গ্রেফতার, বড়লিয়া ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীর অফিস ভাংচুর করেছে, প্রচার-প্রচারণায় হামলা করেছে, ২২ নেতাকর্মীকে আহত করেছে। পুলিশ স্থানীয় এম.পির নির্দেশে উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানী করছে, নৌকার প্রার্থী সানু নিজেই তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। কুসুমপুরা ইউনিয়নে একই কায়দায় বিএনপি প্রার্থীর মনসা চৌমুহনীস্থ কার্যালয় ভাংচুর করেছে। প্রচার-প্রচারণায় হামলা করেছে। স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন বড়ুয়া সন্ত্রাসের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে।

12322609_709513052532817_1631730505093036247_o
ডালিয়া কুঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মীর মো. নাছির উদ্দিন

হাবলাইশ দ্বীপ ইউনিয়নে স্থানীয় সাংসদের ছেলে প্রকাশ্যে হুমকী দিচ্ছে নিরহ কর্মীদের ধরে পুলিশে দিচ্ছে। পুলিশ পেনডিং মামলায় চালান দিচ্ছে। ৮নং কাশিয়াইশ ইউনিয়নে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে নেতাকর্মীদেরকে হয়রানী করছে। কর্ণফূলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ম্যাজিষ্ট্রেট নিষেধ করা সত্বেও নৌকার প্রার্থীরা মাইক লাগিয়ে জনসভা করেছে। অথচ আমাদের কর্মীদের প্রচারণা করতে বাধা দিয়েছে। হামলা করে ১৫জনকে আহত করেছে। খরাণা, হাইদগাঁও, জঙ্গলখাইন, জিরি, কোলাগাঁও, আশিয়া ইউনিয়নেও অনুরূপভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখলের প্রতিযোগিতা চলছে।

অন্যদিকে পটিয়া উপজেলা, কর্ণফূলী থানাধীন চরলক্ষ্যা, বড়উঠান, জুলদা ইউনিয়নেও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বহিরাগতদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের প্রতিযোগিতা চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মীর নাছির অভিযোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও বাঁশখালীতে বিভিন্ন ইউনিয়নে গুলি বর্ষণসহ ব্যাপক হামলা করা হয়েছে। এসব হামলায় বেশকয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আশংকাজনকভাবে আহত হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলার ১০নং হাইলধর ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীকে এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। পোষ্টার, ব্যানার, মাইকিংসহ সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করেছে সরকার দলীয় শসস্ত্র ক্যাডাররা। এ যেন এক মগের মূল্লুক। ৬নং বুরুমছড়া ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হুমায়ুন কবির আনসারের প্রচারণায় হামলা করেছে নৌকা সমর্থনকারীরা। তারা ধানের শীষের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় ও নেতাকর্মীদের আহত করে। ২নং বারশত ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী হাসান চেয়ারম্যানের সমর্থকদের উপর আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। এতে প্রশাসন সম্পূর্ন নির্বিকার। ৪নং বটতলী ইউনিয়নে আনোয়ারা থানার উপ-পরিদর্শক নিমাই চন্দ্রপাল বিএনপি দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আবুর বাড়ীতে গিয়ে হুমকী দিয়েছে। তাকে খোঁজাখুজি করেছে, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। তার সমর্থক নাছিরসহ অন্যদের বাড়ীতে গিয়ে অশালীন আচরণ করেছে।

এদিকে চন্দনাইশ উপজেলার ১নং কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল করিমের বাড়ীতে গুলি বর্ষণ, ভাংচুর, আসবাবপত্র তছনচ, মূল্যবান জিনিসপত্র সরকারী দলের ক্যাডাররা লুট করেছে বলে অভিযোগ করে মীর নাছির বলেন, বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে এই হামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাগিনা নির্বাচনী এজেন্ট ফরম তাদেরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। তিনি বড়কল, বরমা, বৈলতলী, হাশিমপুরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য দাবী জানান।

বিএসপির এ নেতা আরো অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিনে দক্ষিন চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের পরিচালিত হামলায় ৩ শতাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটার আহত হয়েছে, ১ শতাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৩টির অধিক মামলা হয়েছে। প্রায় ৯ শতাধিক মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে মীর নাছির বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মত তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতিসহ সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য বর্তমান কমিশন যে অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছে চলমান ইউ.পি নির্বাচনের পর পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের বির“দ্ধে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মনিটরিং টিম সদস্য ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার নুন্যতম ই”ছা এই নির্বাচন কমিশনের নেই। তারা শুধু সরকারের বাকশাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তিনি নির্বাচনের পর নতুন গণতন্ত্র পূনর“দ্ধারের আন্দোলন শুর“ করা হবে বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল ইসলাম, নগর ছাত্রদল নেতা জসীম উদ্দিন চৌধুরী, জিয়াউর রহমান জিয়া, মোশারফ উদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।