অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ওয়ার্ড কমিটি বিরোধ নিষ্পত্তি ও সম্মেলন সম্পন্ন করতে জন্য ছয় সদস্যের কমিটি

0
.

সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর ওয়ার্ড সম্মেলনকে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দিয়েছে তা নিষ্পত্তি করছে নগর নেতাদের জরুরী ভিক্তিতে ঢাকায় তলব করে কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ।

সেখানে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মাহাতাব-নাছিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন নেতারা।

তবে এসব অভিযোগ তেমন গুরুত্ব পায়নি সভায়। কেন্দ্রিয় নেতারা চট্টগ্রামের ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলন শেষ হলে দ্রুত থানা সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছেন মহানগর কমিটিকে। থানার কার্যক্রম তদারক করতে নগরীর প্রভাবশালী ছয় নেতাকে দিকে একটি কমিটি করে দিয়েছে।

আজ রবিবার ঢাকায় ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। সকাল ১০টায় বৈঠক শুরু হয়ে টানা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে।

সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে এই কমিটির আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন আহমদ, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং কোতয়ালী আসন সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের চলমান ইউনিট সম্মেলন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহি কমিটিকে। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চলমান ইউনিট কমিটি সম্মেলনে স্বজনপ্রীতি, ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন হয়েছেসহ নানা অজুহাতে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছিল ঐ পক্ষটি। এই নিয়ে রাজনীতি পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সমালোচনা চলছিল। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীকে নিয়ে এই বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, তথাকথিত মন্ত্রী ড হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু সত্যবাণীকে বলেন, ইউনিট কমিটির সম্মেলন রিভিউ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলন তদারক করার জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ১২৯টি ইউনিটের মধ্যে ইতিমধ্যে ১০৬টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরোয়া পরিবেশে বাকি থাকা ২৩টি ইউনিট সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় নগর আ.লীগ।

গত ১২ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আ.লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। ইউনিটের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে একপক্ষ অভিযোগ করলে কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সভায় অংশ নেযা কয়েকজন নেতা সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক নাছির বিরোধী শিবির থেকে ইউনিট ওয়ার্ড কমিটির কার্যক্রম তদারকের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নামে বিকল্প দাবি করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে অন্য ইউনিটগুলোর মত থানা ভিত্তিক তদারক কমিটি করতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৬ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়া ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যেসব অভিযোগ নাছির বিরোধীরা করেছিলেন তা ঢাকার বৈঠকে নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগকারীদের বক্তব্য শেষে মাহাতাব-নাছির নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন সেখানে। এসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগের সিদ্ধান্তে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেন। যদি কোন আপত্তি থাকে তখন সভাপতি-সেক্রেটারিকে জানাতে বলেছেন। পাশাপাশি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চট্টগ্রামের নেতাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বৈঠকে উপরোক্ত ছয়জন ছাড়াও অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, যুগ্ম সম্পাদক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, সাংগঠনিক সম্পাদক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সুনীল সরকার, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক বদিউল আলম ও সদস্য এম এ লতিফ এমপি।

এ ব্যাপারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সবার কথা শুনেছেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন যেভাবে চলছিল সেভাবে চালিয়ে নিতে। কোন আপত্তি থাকলে সভাপতি-সেক্রেটারিকে জানাতে। এসব সম্মেলন শেষ হলে থানা কমিটির কাজ এগিয়ে নিতে। এক্ষেত্রে দেশের অন্য ইউনিটের মত থানার কার্যক্রম গতিশীল করতে নগর থেকে নেতাদের দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হবে। সেটা বন্ঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাদের ছয়জনকে।’

এরআগে গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রের নির্দেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট-ওয়ার্ড সম্মেলন চলমানের মধ্যেই আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে গিয়ে নালিশ দিয়ে বসেন। এরপর ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত করে চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বসেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।