হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন বর্তমানে ঈমান, আমল, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুশাসন পালনে সাধারণ শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে গাফলতি অনেক বেড়ে গেছে। ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়ার কারণেই মুসলমানগণ নানা দুর্দশা ও ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হচ্ছেন। সঠিকভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই কেবল এই বিপদাপদ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর সাহায্য আশা করা যায়।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসলামী সেবামূলক সংগঠন চট্টগ্রাম হাটহাজারী আল-আমিন সংস্থার তিনদিন ব্যাপী বিশাল তাফসীরুল কুরআন ও ক্বিরাত মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
শাহ আহমদ শফী বলেন, মুসলমানদের ঈমানী দুর্বলতা ও অনৈক্যের সুযোগে দেশী-বিদেশী আধিপত্যবাদি শক্তি নানা অপপ্রচার, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে মুসলমানদের ঈমানী চেতনাকে নষ্ট করার বহুমুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, গান-বাজনা, বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা ও নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরার বিস্তার ঘটিয়ে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে ধর্মহীন করে গড়ে তুলতে চাচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার, কাল্পনিক তথ্যের প্রচার ও চক্রান্ত চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওলামায়ে কেরাম ও দেশবাসীকে যে কোন উস্কানীমূলক খবর, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আধিপত্যবাদি ও ভোগবাদিরা তাদের উদ্দেশ্য সাধনে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলমানদেরকেই প্রধান বাধা মনে করছে। কারণ, একজন আলেম ও দ্বীনদার মুসলমান কখনোই অন্যায়, অপরাধ, জোর-জুলুম দেখে চুপ থাকে না। এ কারণেই দেশে বিদেশে আজ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করলে, ধর্মীয় তৎপরতা চালালে এবং তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিলে কেউ মৌলবাদী, প্রগতি বিরোধী ও জঙ্গীবাদি হয় না। অথচ নামায আদায় ও দাড়ি-টুপী পরলে অথবা ইসলাম ধর্মীয় কোন আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিলেই প্রগতি বিরোধী, দেশ বিরোধী ও মৌলবাদীর রং লাগানো হয়।
সম্প্রতি বি-বাড়ীয়ার নাসির নগরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনাকে রহস্যজনক উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এসব হামলার ঘটনায় কোন উলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসা ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান জড়িত নয়। কারা এসব হামলার ঘটনার সাথে জড়িত, সেটাও জনগণের কাছে খোলাসা হয়েছে। অথচ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মহল এসব হামলার কারণ উদ্ঘাটন করতে দোষীদের কাছে না গিয়ে উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার মুসলমানদের কাছে জানতে চায়। তিনি বলেন, পুরা বিষয়টাই ইসলাম বিরোধী চক্রান্তের ধারাবাহিকতারই অংশ। বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, সকলে মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন শত শত বছর ধরে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার জন্যে জনগণ নয় বরং আধিপত্যবাদি শক্তি ও ক্ষমতার কদর্য রাজনীতিই দায়ী। তারাই সাম্প্রদায়িকতার ইস্যু তৈরি করে ফায়দা হাসিল করতে চায়। কিন্তু জনগণ সচেতন থাকলে তারা সফল হবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যেন কেউ ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্যে আলেম সমাজ ও সাধারণ জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।
হাটহাজারী পার্বতী হাই স্কুল ময়দানে ৩ দিন ব্যাপি ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন ও ক্বিরাত মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে সভাপতিত্ব করেন নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা ইদরিস।
এতে প্রধান বক্তা ছিলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের প্রধান মুরুব্বী আল্লামা হাফেজ জুবায়ের, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল্লামা ড. এবিএম হিযবুল্লাহ, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী নজরুল ইসলাম, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন আল-মোবারক, মাওলানা গাজী সানা উল্লাহ প্রমুখ। তাফসীরুল কুরআন মাহফিল পরিচালনা করেন, হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক ও আল-আমীন সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আহসান উল্লাহ। হেফাজত আমীরসহ শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ শরীক থাকায় মাহফিলে প্রায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে।