অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

টিকা প্রাপ্তি সহজ করতে টিআইবির সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে জেনারেল হাসপাতাল

0
.

চট্টগ্রামে টিকা ব্যবস্থাপনা সহজ করতে “কোভিড-১৯ টিকা প্রদানে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়”শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে ১৩ টি সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির এসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কনফারেন্স হলে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক),চট্টগ্রাম ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক মতবিনিময় সভায় সুপারিশসহ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

টিআইবির চট্টগ্রাম মহানগর কো- অর্ডিনেটর মো. তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক, চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

টিআইবির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘টিকা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত টিআইবির এই রিপোর্ট অনেক তথ্য সমৃদ্ধ যা আমাদের ভবিষ্যৎ কাজের অনুপ্রেরণা জোগাবে। রিপোর্টের প্রতিটি সুপরিশ আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখব এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করবো। হাসপাতালের সকল স্থরের কর্মীদের সহযোগিতায় দালাল নিয়ন্ত্রণসহ সকল ধরণের সীমাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি আমরা। টিআইবি’র চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা টিকা সংক্রান্ত অভিযোগ বাক্স স্থাপন করবো। ১৫০ শয্যার জনবল নিয়ে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল পরিচালনা করি, ১৫০ শয্যার জনবল নিয়ে এত বেশি আউটপুটের হাসপাতাল সারা দেশে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবেনা এসময় রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধিতে সবার সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জালাল বলেন, ‘আমরা খুবই প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছি, টিকা প্রদানের শুরুতে আমরা মানুষের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। কিন্তু সরকারসহ সকল অংশীজনের প্রচারণা ও সহযোগিতায় আমরা দৈনিক ২ হাজার লক্ষ্য থাকলেও ৪-৫ হাজার ডোজ টিকা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এই ব্যাপক জনগোষ্টিকে সামলানোর মত কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের নেই। এমন কি আমাদের কোনো নিরাপত্তা কর্মীও নেই। তারপরও আমরা ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মধ্যে হাসপাতালের আউটডোর সেবা ও টিকা কার্যক্রম একসাথে চালিয়ে যাচ্ছি। এইটা বাংলাদেশে রেকর্ড যেখানে হাসপাতালের আউটডোর সেবার এর পর টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। টিকা নিয়ে সনাক-টিআইবি’র এই গবেষণা আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।’

সারাদেশে ডাইরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে ডাইরিয়া ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কমিউনিটি মনিটরিংয়ের ফলাফলের আলোকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গাইনী বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘গবেষণায় টিকা সম্পর্কিত সকল বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে এবং টিআইবি অনেক ভাল রিপোর্ট করেছে যা দেখে কাজের স্পৃহা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা ঠিক যে আমরা প্রান্তিক জনগোষ্টিকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। তবে রিপোর্টের সুপারিশ এর আলোকে যথাযথভাবে পরবর্তীতে আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী ডোজ নিশ্চিতে কাজ করব আমরা।’

এসময় টিআইবি চট্টগ্রাম ক্লাস্টারের কোঅর্ডিনেটর মো. জসিম উদ্দীন সেবা প্রদানে জেনারেল হাসপাতালের ভূমিকার এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

এর আগে মতবিনিময় সভার শুরুতে ‘গভর্ন্যান্স চ্যালেঞ্জেস ইন হেলথ সেক্টর: টুওয়ার্ডস ইফেক্টিভ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেলিভারি’শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত কমিউনিটি মনিটরিং প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সনাকের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস। এসময় তিনি “কোভিড-১৯ টিকা প্রদানে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়”শীর্ষক প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোও উপস্থাপন করেন।
টিআইবির ১৩ সুপারিশ হলো:
১ অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে টিকা গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা;
২ যথাসময়ে সবার জন্য টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে প্রচারণা জোরদার করা;
৩ টিকা কেন্দ্র খোলা ও বন্ধ হওয়ার সময় সম্পর্কে এলাকার মানুষকে আরও বেশি জানানো;
৪ টিকার পরবর্তী ডোজ ও টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরও প্রচারণা অব্যাহত রাখা;
৫ টিকা নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল প্রকার জটিলতার অবসান গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া;
৬ প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সহযোগীতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাসহ আলাদা লোকবল থাকা;
৭ নারীদের জন্য গোপনীয়তা রক্ষার্থে আলাদা ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য পৃথক অপেক্ষমাণ কক্ষের ব্যবস্থা থাকা;
৮ টিকা প্রদান সংক্রান্ত সকল তথ্য জনসাধারণকে জানানোর জন্য যথাযথ প্রচার-প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
৯ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা প্রাপ্তি সহজলভ্য করা এবং তাদেরকে যথাযথ সন্মান প্রদর্শন ও মানবিক মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা;
১০ টিকা প্রদান সংক্রান্ত সকল তথ্য জনসাধারণকে জানানোর জন্য যথাযথ প্রচার-প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
১১ দূরত্ব বিবেচনায় টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা;
১২ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা;
১৩ টিকা প্রদান কর্মসূচিকে জোরদার করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখা।