অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বন্যা-বজ্রপাতে সিলেটের ৬ উপজেলায় ২২ জনের প্রাণহানি

0
.

বন্যা পরিস্থিতিতে পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাত ও টিলাধসে এক সপ্তাহে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কমপক্ষে ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। তবে, দুই জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সব তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, পরিস্থিতির কারণে সব উপজেলার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে কয়েকজন ভর্তি হয়েছেন।

তবে, বিভিন্ন সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটের তিন উপজেলা, সুনামগঞ্জের দুই উপজেলা ও মৌলভীবাজারের এক উপজেলায় এখনো পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

সিলেট নগরের খরাদিপাড়ায় গত শনিবার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাসায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরীর (৩২) মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান।

এদিকে, গত রোববার সিলেট সদর উপজেলার নলকট এলাকা থেকে নিখোঁজ আব্দুল হাদি (১৮) নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের নলকট গ্রামের কাচা মিয়ার ছেলে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে বন্যার প্রবল স্রোতে তলিয়ে যায় ওই তরুণ।

একই উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা এ কে আবুল কাশেম (২৪) এবং তার দাদী ছুরেতুন নেছা (১০৫) পানিতে ডুবে মারা গেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আবুল কাশেম পরিবারের সঙ্গে সিলেট নগরের মদীনা মার্কেট এলাকায় থাকতেন। বন্যার পানি বাড়ার খবর পেয়ে বৃদ্ধ দাদী ও চাচাতো বোনদের উদ্ধার করতে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নৌকা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। শহরে ফেরার পথে সুজাতপুর আইডিয়াল স্কুল এলাকায় পানির স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় তার চাচাতো দুই বোন উল্টে যাওয়া নৌকায় ধরে প্রাণে বাঁচলেও দাদী নাতীকে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন। এতে দু’জনই পানিতে তলিয়ে যান। শুক্রবার দাদী ছুরেতুন নেছার লাশ ভেসে ওঠে। রোববার সকালে আবুল কাশেমের লাশ একই জায়গায় ভেসে ওঠে। দু’জনের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রোববার বন্যার পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আরো এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন বিদ্যুৎহীন থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। এ কারণে অনেক খবর মেলেনি। ধীরে ধীরে চারদিক থেকে প্রকৃত অবস্থার খবর আসছে।’

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় গত রোববার পানিতে ডুবে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার আগফৌদ নারাইনপুর গ্রামের হাওরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর। নিহত যুবকের নাম ফয়সল আহমদ (২২)। তিনি আগফৌদ নারাইপুর গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।

ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মাছ ধরতে গিয়ে ওই যুবক হঠাৎ পানিতে তলিয়ে যান। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে, কানাইঘাটের সাতবাঁক ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন নয়াঠাকুরের মাটি গ্রামের নাজির উদ্দিনের ছেলে আলমাছ উদ্দিন (৩০)। পরদিন শুক্রবার দুপুরের দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পৌরসভার কানাখালি রোডের আখড়া এলাকায় পিযুষ (৪০) ও ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার জুনেদ (২৭) পানিতে ডুবে মারা গেছেন। জুনেদ গত শনিবার ছাতক থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হন। রোববার তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ছাতকের জাউয়া বাজার থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্রী হানিফা বেগমের (৯) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার বিকেলে পাশের কাইতকোনা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হানিফা বেগম শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার মেয়ে। মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে বানের পানিতে ডুবে মারা যায় হানিফা।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রনির ছোট ভাই পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান।

দোয়ারাবাজারে আরো ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে, গত শনিবার সকালে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মহব্বতপুর এলাকার সাদ্দাম হোসেন ও জরিফ হোসেন নামের দুই ভাই বানের জলে ডুবে নিখোঁজ হন। একজনের লাশ পাওয়া গেলেও জরিফ হোসেনের লাশ পাওয়া যায়নি। জরিফ এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

বৃহস্পতিবার নৌকাযোগে স্কুলে যাওয়ার পথে স্রোতের টানে পানিতে নৌকা তলিয়ে মারা যান সমুজ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী তামান্না আক্তার (১৫) ও টিলাগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ হাসান (১১)। উভয়েই উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের ময়না মিয়ার সন্তান।

শুক্রবার বজ্রপাতে বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকার এক যুবকের মৃত্যু হয়। শনিবার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেটপাড়া গ্রামে টিলাধসে হনুফা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বড়লেখা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে গত শনিবার তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এছাড়া উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আয়েশাবাগ চা বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে একজনের মত্যু হয়েছে। এসময় চারজন আহত হয়েছেন। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, একজন নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। পোলার কোম্পানীর ওই প্রতিনিধি কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেট শহরের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেও গন্তব্যে পৌঁছাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক ভাই আহত ও অপরজন নিখোঁজ হন। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কোম্পানীগঞ্জে একই পরিবারের নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিশ্বনাথ উপজেলায় এক বছর বয়সী শিশু নৌকা থেকে পড়ে স্রোতে ভেসে গেছে।

বন্যায় নানাভাবে আহত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কমপক্ষে আটজন ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে।

ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘গত ১৫ জুন বন্যা শুরুর পর থেকে সুনামগঞ্জের একটি ছাড়া আর কোনো উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। অধিকাংশ এলাকার সংবাদ আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।’

সূত্র : বাসস