অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে সরকারী দলের এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে জায়গা দখলের চেষ্টা

0
akborsha-railway-multi-co-operative-society-8
আকবর শাহ মাজার এলাকা অবস্থিত এই জায়গার সীমানা দেয়াল ভেঙে জবর দখলের চেষ্টা করে কাজী আলতাফ হোসেন ও তার লোকজন।

চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানার এলাকায় সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙ্গিয়ে সামরিক বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আইনজীবি, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার ৩২ জনের যৌথভাবে কেনা ৪২ শতকের একটি জায়গা জবর দখলের চেষ্টা চলছে।

থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ৮ বছর আগে কেনা জায়গার প্রকৃত মালিকরা। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল কাজী আলতাফ হোসেন উত্তর পাহাড়তলী মৌজার আকবর শাহ মাজার এলাকা অবস্থিত উক্ত জায়গার সীমানা দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জবর দখলের চেষ্টা এবং পাহারাদার নিরাপত্তা কর্মীদের উপর হামলা চালায় মর্মে থানায় অভিযোগ করেন মালিকগণ।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে উত্তর পাহাড়তলী মৌজার আরএস ১২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত আরএস দাগ নম্বর ১২/১০১ তৎসামিল বিএস নামজারি ৭৪/১/১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ১৬ দাগের আন্দর ৪২ শতক জায়গা রেজিস্টার্ড বায়না করেন সামরিক-বেসামরিক আইনজীবি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩২ জনের একটি গ্রুপ। তারা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করে জনৈক নুরুল ইসলাম থেকে জায়গাটি রেজিস্ট্রি নেন ২০০৯ সালে। নুরুল ইসলাম খরিদ সূত্রে ওই জায়গার মালিক ছিলেন।

জানাগেছে, আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১০ সালে এয়ারবেল ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন ৩২ জন জায়গার মালিক। তখন থেকে আলোচ্য জায়গাটি এয়ারবেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণেই আছে। অভিযোগ উঠেছে গত ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলতাফ হোসেন দলীয় লোকজন নিয়ে জায়গাটি বাউন্ডারী দেয়াল ভেঙ্গে দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তারা এয়ারবেলের নিরাপত্তাকর্মীকে হুমকিও দেয়।

এ ঘটনায় এয়ারবেল কর্তৃপক্ষ আকবর শাহ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। এতে আলতাফের অনুসারী মাসুদ, সেলিম ও ইয়াছিনসহ ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এ ব্যাপারে কাজী আলতাফ হোসেনকে বলেন, ‘জায়গা নিয়ে ৩২ জন সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ’ কর্মকর্তা এবং চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইনজীবি বা এয়ারবেল কর্তৃপক্ষের সাথে আমার কোনো বিরোধ নেই। তাদের সাথে বিরোধ আছে রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির। কারণ যে নুরুল ইসলাম গং থেকে তারা ৪২ শতক জায়গা কিনেছেন ওই ব্যক্তির সাথে রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির মামলা চলছে। আমরা আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির সাথে ওই দাগের আন্দর কিছু জায়গা রেজিস্টার্ড বায়না করেছি। কারণ ওয়ারিশ সূত্র এবং বিএস খতিয়ান মূলে আবুল হোসেন জায়গাটির অন্যতম মালিক। জায়গার মালিকদের একজন মো. ইলিয়াস কায়সার বলেন, রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাথে আমাদের কেনা ৪২ শতক জায়গার ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। নুরুল ইসলাম গং-এর সাথে রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির যে মামলা ছিল সেটি আদালতে খারিজ হয়ে গেছে।

তা ছাড়া রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি যে আবদুল ছবুরের থেকে জায়গা কিনেছেন সেই আবদুল ছবুরের ৯৮৮৩ নং দলিলটিও সঠিক নয়। আলতাফ রেলওয়ে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন সেখানে দাখিল করা ২০১৫ সালের রেজিস্ট্রি বায়না দলিলের চৌহদ্দির সাথে আমাদের দলিলের চৌহদ্দিরও নূন্যতম মিল নেই। ফলে আলতাফের যদি কোনো সমস্যা থাকে তিনি রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটির সাথে বোঝাপড়া করতে পারেন। আমাদের জায়গায় কেন আসবেন?’

তিনি বলেন, আলতাফ মামলা করেছে রেলওয়ে কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে,আমাদের বিরুদ্ধে নয়। রেলওয়ে কো-অপারপটিভও ২০০৮ সাল থেকে আমাদের কেনা জায়গার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করে নাই। আবদুল ছবুরের ১৯৭৭ সালের ৯৮৮৩ নং দলিলে আর এস-১২ নং খতিয়ানের ১২/১০১ দাগে মোট জমি ২ কানি ৬ গন্ডা ২ কড়া এবং আর এস-২২ নং খতিয়ানের ১২/১০১ দাগে জমি ২ কানি ৬ গন্ডা ২ কড়া। তাঁরা ২২ নং খতিয়ানের জায়গা ১২ নং খতিয়ানে দাবী করতে চায়। এছাড়াও ৯৮৮৩ নং দলিলে রায়ের তারিখ ২৬/৮/৬৭ ইং এবং ডিক্রির তারিখ ২৪/৮/৬৭ লিখা আছে,ডিক্রি কখনো রায়ের আগে হয় না। মূলত এ দলিলটাই জাল।

জায়গার মালিকদের একজন ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)-এর এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলতাফ হোসেন সরকার দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের নাম ভাঙিয়ে আমাদের কেনা জায়গাটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। আলতাফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

তবে কোন ধরণের জায়গা দখলে নিজের সম্পৃত্ততা এবং সহযোগিতার বিষয়টি অস্বিকার করেছেন সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম। তিনি বলেন এ অভিযোগ ঠিক না, আমি কখনো কোন জায়গা জমি দখল বেদখলের ব্যাপারে কোন ধরনের প্রশ্রয় দিই নি। আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগের কোন রের্কড নেই। এমপি বলেন, বরং বিরোধপূর্ণ এ জায়গা বিষয়ে আমার সহযোগিতা চাইলে আমি দুপক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলি এবং একজন মুন্সি এনে প্রকৃত মালিককে চিহ্নিত করে ব্যাপরটা সমাধানে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন পক্ষই আমার ডাকে সাড়া দেয় নি। তিনি বলেন, আমার নাম বিক্রি করে কেউ অবৈধ কাজ করলে প্রমাণ সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।