অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

তিস্তা-গঙ্গার পানি না পেলে ভারতের সাথে কিসের সম্পর্ক? মেজর (অব.) হাফিজ

0
.

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তিস্তা-গঙ্গা নদীর পানি আমাদের অস্থিত্বের সাথে জড়িত। এগুলোর ন্যায্য হিস্যা না পেলে ভারতের সাথে কিসের সম্পর্ক? ভারত আমাদের বন্ধু। একাত্তরে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সেজন্য জাতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে কেয়ামত পর্যন্ত এ-ঋণ শোধ করতে হবে, এটাতো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে নিজস্ব স্বার্বভৌমত্ব নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য। পাকিস্তানকে তাড়িয়ে দিয়ে কি এখন দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য মুখোমুখি হলাম?

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’র উদ্যোগে বাংলাদেশ ভারত পানি সমস্যা শীর্ষক আলোচনা সভায় সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী একথা বলেন।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যৌথ নদী কমিশনের কোন বৈঠকই হচ্ছে না। তারা ব্যর্থ পানি সমস্যা সমাধান না করতে পারার জন্য। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ তার নদীর ন্যায্য হিস্যা পাবে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে যাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে পারে। আর এজন্য তারা বলে তিস্তার পানি পেলাম কি পেলাম তাতে কিছু যায় আসে না। এরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তারা দায়বদ্ধ অন্য দেশের কাছে।

এতে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’র ট্রাস্ট্রি ডা: জাফরউল্লাহ চৌধুরী, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে ভারত আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়টি এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রধান দাবি হয়ে উঠেছে। তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের বিরোধের সূচনা হয় ১৯৯৭ সালে, যখন তিস্তা নদীর অববাহিকায় ভারত গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে।

এরপর একে একে ওই এলাকায় ভারত নির্মাণ করে আরো আটটি ব্যারাজ। এভাবে বারবার ও নিয়মিতভাবে ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা নদী বাংলাদেশে তার যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যায় এবং বছরের কিছু সময় বাংলাদেশে তিস্তা নদী হয়ে যায় পানিশূন্য। বাংলাদেশ প্রচলিত আইন ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বারবার তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন দাবি করলেও এখন পর্যন্ত তা পায়নি।

তিনি বলেন,১৯৬৬ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারের ওপর যে নিয়মাবলি প্রণীত হয়, তাতে স্পষ্ট বলা আছে যে, আন্তর্জাতিক নদীগুলোয় উজানের দেশ ইচ্ছা করলেই ভাটির দেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না। এখানে পদক্ষেপ বলতে মূলত বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারের কথাই বলা হয়। কিন্তু আমরা দেখছি উজান তথা উচ্চভূমির দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নদীগুলোর অববাহিকায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের মতো ভাটি তথা নিম্নভূমির দেশে নদীর পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ বিঘ্নিত করে নিজেদের কাজে লাগায়। এতে বাংলাদেশের তিস্তা নদী অঞ্চলে কৃষক ও সাধারণ মানুষ যে বিপাকে পড়েছে, তার কোনো তুলনা হতে পারে না।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আন্তজার্তিক আইন অনুযায়ী তিস্তার পানি পাওয়া আমাদের ন্যায্য অধিকার। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানির সঙ্গে তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। পানি পাওয়া আমাদের আন্তর্জাতিক অধিকার। এ সরকারের আমলে তিস্তা চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশের জনগণকে অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এ সরকার জনগণের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই অধিকার ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে সংসদ নির্বাচন দিতে সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।