অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে গুম খুন চলছে

0
.

দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে গুম, খুন বেড়ে চলেছে। তারা বলেন, এসব গুম, খুনের পেছনে যে রাষ্ট্রের হাত রয়েছে তা আজ প্রমানিত।

আজ শুক্রবার সকালে রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউশনে “গুম একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ” শীর্ষক এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন বিশিষ্ট সমাজ চিন্তক কবি ফরহাদ মজহার।

ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ আকতার হোসেন, প্রফেসর ওবায়েদ ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ, এম আব্দুল্লাহ, সৈয়দ আবদাল আহমদ,জাহাঙ্গীর আলম প্রধান,কাদের গনি চৌধুরী, বদিউল আলম, শহিদুল ইসলাম,কাজিম রেজা, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমূখ।

.

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন,ভিন্নমত দমনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখতে আজ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সর্বনিকৃষ্ট সন্ত্রাসী কর্মটি হচ্ছে গুম। তিনি বলেন, এ সন্ত্রাসী কর্মটি দুটি পক্ষ মিলে করছে। একটি পক্ষ রাষ্ট্রের ভেতরের আরেকটি পক্ষ দেশের বাইরের অর্থাৎ আমাদের প্রতিবেশি দেশ। সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ ও মানবাধিকার কর্মী সুখরঞ্জনের গুমের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। মানুষ স্বাধীনতার সুফল আজ ভোগ করতে পারছে না। অন্যের ইশারায় আজ দেশ পরিচালিত হচ্ছে।

গুম,খুনকে মানবতা বিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা নির্বিচারে গুম, খুন করছেন তারা ভুলেও মনে করবেন না পার পেয়ে যাবেন। যারা এ অপকর্মটি করছেন এবং যারা নির্দেশ দিচ্ছেন উভয়কে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন, জনগন সোচ্চার হলে বন্দুকের নলও ঘুরে যাবে।

মূল প্রবন্ধে ফরহাদ মজহার বলেন, মানবাধিকার সংগঠন গুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৫ বছরে গুম হয়েছেন ২৭৪ জন।একটা সভ্য দেশে এটা কল্পনাও করা যায়না। তিনি বলেন,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মানদন্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দিক থেকে বিশ্বজুড়ে যে কুখ্যাতি অর্জন করেছে তা তুলনাহীন। পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশ, ভারত ও কাশ্মীর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আজ বিশ্বব্যাপী নিন্দিত।

ফরহাদ মজহার বলেন, গুম ও গুমের পরে হত্যার ঘটনা বেড়েছে ২০০৯ সালের পর। এর আগে মানবাধিকার লংঘনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ক্রসফায়ার বা ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা। সেটা এখনও জারি আছে,উল্টো শুরু হয়েছে গুম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানুষ গুমের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ৯৯১ শিক্ষক- বুদ্ধিজীবী, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন ডাক্তার, ৪২ জন আইনজীবী ও অন্যান্য পেশার ১৬ জন মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এরা কেউ ফিরে আসেনি। একইভাবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জহির রায়হানও গুম হন, আর ফিরে আসেননি। সিরাজ সিকদার ১৯৭৫ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন,তাকে পরে আইন বহির্ভূতভভাবে হত্যা করা হয়। কল্পনা চাকমা অপহৃত হন ১৯৯৬ সালে। তার হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। ১৯৭২-৭৫ সালে চল্লিশ হাজার বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীকে রক্ষী বাহিনী প্রথমে গুম তার পরে হত্যা করেছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, জহির রায়হান গুমের মধ্য দিয়ে এদেশে গুমের রাজনীতি শুরু হয়। বর্তমান সরকার এটা তাদের কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রধান বিচারপতিও সেটা স্বীকার করেছেন।

সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতার কারণেই আজ দেশে গুম খুন হচ্ছে। আগে মানুষের প্রধান চাহিদা।ছিল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। আর এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রধান চাহিদা হচ্ছে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। স্বামী বাসার বাইরে গেলে স্ত্রী উৎকণ্ঠায় থাকেন আদৌ তিনি ফিরে আসতে পারবেন কিনা! স্ত্রী -কন্যা বা মা-বোন বাইরে গেলে পরিবারের লোকেরা চিন্তায় থাকেন তারা সম্ভ্রম নিয়ে ফিরতে পারবে কিনা। স্বাধীনতার পর দাবি উঠেছিল স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। আজ সে দাবি চাপিয়ে মানুষের নতুন দাবি মৃত্যুর পর লাশ চাই। এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টিতো নেই, লাশও পাওয়া যায়না

দেশে দুঃসময় চলছে দাবি করে প্রফেসর আকতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। সুশাসন নেই। তাদের দুঃশাসনে মানুষের জীবনের কোথাও নিরাপত্তা নেই। আমাদের কোনো ভবিষ্যত স্বপ্ন নেই। তাই আজকে যতই উন্নয়নের ফিরিস্তি দিক তাতে করে কোনো লাভ হবে না। সাধারণ মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ওবায়েদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ গুম,খুন, মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বিএনপিকে দাবিয়ে রাখতে চায়। কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার শক্তি হারিয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণকে দেয়ার মতো তাদের আর কিছু নেই। সেজন্য আজকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সেই বন্দুক অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু এ দেশের জনগণ কোনো দিনই সেটা মেনে নেবে না বলেও দাবি করেন তিনি।