অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ২৫, রাঙ্গামাটিতে ৫৮ ও বান্দরবানে ৬

0
.

রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধস, গাছ চাপায় অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৫৮ জন চট্টগ্রামের ২৫ জন এবং বান্দবানে ৬ জনের মৃত্যু হয়।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠনো বিস্তারিত প্রতিবেদন

রাঙ্গামাটিঃ

.

তথ্য মতে প্রবল বর্ষণে বাড়িঘরে পাহাড়ের মাটিচাপায় রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভবাজার, ভেদভেদী, শিমুলতলী, মোনঘর, রাঙ্গামাটি ও মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ২০ জন, কাউখালীর বেতবুনিয়ায় চার জন, ঘিলাছড়িতে তিন জন, কাশখালীতে তিন জন এবং কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় চার জন মারা গেছেন।

তাদের মধ্যে মানিকছড়িতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের সময় ছয় সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর আহমেদ, সিপাহী আজিজ, শাহীন, ল্যান্স কর্পোরেল আজিজ, সিপাহী মামুন। তারা রাঙ্গমাটি সেনা রিজিয়নে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়া আরও বেশ কয়েক সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি এবং ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রুমা আক্তার (২৫), নুর আক্তার (৩), হাজেরা (৪০), সোনালি চাকমা (৩০), এক বছর বয়সী শিশু অমিয় কান্তি চাকমা, আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকি মল্লিক (২), লিটন মল্লিক (২৮), অজ্ঞাত (২২), মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), আবদুল আজিজ (৫৫), অজ্ঞাত (৩২), মিলি চাকমা (৫৫), ফেন্সি চাকমা (৪) এবং কাউখালীর যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন-ফাতেমা বেগম (৬০), মনির হোসেন (২৫), মো. ইসহাক (৩০), দবির হোসেন (৮৪), খোদেজা বেগম (৬৫), অজিদা খাতুন (৬৫), মংকাচিং মারমা (৫২), আশেমা মারমা (৩৭), শ্যামা মারমা (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭), কুলসুমা বেগম (৬০), বৈশাখী চাকমা (১০), লায়লা বেগমের (২৮) লাশ উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় নিহত ৪ জনের নাম তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন সোমবার রাঙ্গামাটি শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় এক শিশু এবং কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে এক শিশু পাহাড়ের মাটি চাপায় মারা যায়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে পড়ে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙ্গামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান:

.

বান্দরবানে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় মা-মেয়েসহ অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে শহরের কালাঘাটা ও লেমু ঝিড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকার তিন শিশু- শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)।
খবর পেয়ে স্থানীয়দের নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, টানা বর্ষণের ফলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়লে মা কামরুন্নাহার বেগম ও মেয়ে সুখিয়া বেগম মারা যায়। এ সময় কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজও গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লাল মোহন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ঘরের ওপর পড়লে তার তিন শিশু সন্তান- মিতু, শুভ ও লতার মৃত্যু হয়।

.

এ ছাড়া রাতে প্রবল বর্ষণের সময় শহরের কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়লে রেবা ত্রিপুরা নামে বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্র নিহত হন।

এ সময় আরো চার কলেজ ছাত্র আহত হন। এরা হলেন, বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও প্রশেন ত্রিপুরা। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আহতরা সবাই ওই এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নিহত রেবা ত্রিপুরা রাতে তাদের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ বের করার চেষ্টা চলছে।

বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে বলে দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়াতে নিহত ২৫

.

চট্টগ্রাম মহানগরী, জেলার চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধস ও টর্ণেডোর আঘাতে নারী শিশুসহ ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চন্দনাইশে ৪ জন এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৯ জন এবং মহানগরীতে ২ জন মারা খাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানাগেছে, সোমবার গভীর রাতে দুর্গম পাহাড়ী জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।

ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবু ইউছুপ চৌধুরী জানান, গতকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আজগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) এবং তাদের মা মোকাইং কেয়াং (৫০) নিহত হন।

এ ঘটনায় ওই পরিবারের আরো দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তারা হলেন-সানুউ কেয়াং (২১) ও বেলাউ কেয়াং (২৮)। তাঁদের বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক এ ইউপি চেয়ারম্যান জানান।

চন্দনাইশ থানার ওসি (তদন্ত) মো.শাখায়াত হোসেন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, ধোপাছড়ি এলাকাতে পাহাড় ধসে ৪ জনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। কিন্তু আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। ইউনিয়নটি দুর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় অনেকটা বিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সেখানে কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদস্থ কন্ট্রোলরুম থেকে জানানো হয়, চন্দনাইশে পাহাড় ধসের খবর পেয়ে পটিয়া স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে।

.

রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলী শাহ উপজেলার বিভিন্নস্থানে ধস ও বন্যায় নিহতের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধস হয়েছে। একই সঙ্গে অতি বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের দুর্গম জঙ্গল বগাবিলি এলাকায় পাহাড় ধসে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। প্রায় একই সময়ে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাইছড়ি মঈন্যারটেকে ধসে সাতজন মারা যান। একই ইউনিয়নের পাহাড়তলী ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন চারজন।

উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়া, চন্দ্রঘোনা, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, মরিয়মনগর, বেতাগী, কোদালা, সরফভাটা, শিলক, হোসনাবাদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় দুই শতাধিক গ্রামের কয়েকশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরে ফল্যাতলী বাজার এলাকার টর্ণেডোর আঘাতে মোহাম্মদ হানিফ (৪৭) এছাড়া চাকতাই এলাকার দেলোয়ার হোসেন (২৫) নামে অপর একজন মারা যায় বজ্রপাতে। মঙ্গলবার ভোররাতে এ ঘটনায় অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভণ্ড হয়ে গেছে।