অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্ব বিবেক নীরব কেন?

2
এ এম জিয়া হাবীব আহসান

ওরা উদ্বাস্তু, ওরা মজলুম । কেউ বলেন, ‘শরণার্থী’ আবার কেউ বলেন ‘রিফিউজি’ । দুর্জনেরা বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী’ । প্রান ভয়ে শুধু বাস্তু ভিটা নয় মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে যারা অজানার পথে পাড়ি জমায় তাদের শরণার্থী বলাই শ্রেয় । UNHCR -এর ভাষায় যারা ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ অথবা কোন নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্টির সদস্য হওয়ার কারনে নিশ্চিত নিগ্রহের কারনে প্রান ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং নিরাপদে ফিরে যেতে অক্ষম তারাই ‘রিফিউজি’ । মায়ানমারের যে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি আজ প্রান ভয়ে  পলাতক, দেশত্যাগী সে সব স্বাধীনতাহারা নারী, পুরুষ, শিশুরা আমাদের দয়ার কাংগাল । তাদের অনেকের আপনজনদের নৃশংশভাবে খুন, গুম করা হয়েছে, অগ্নি সংযোগে বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ বিতাড়িত করা হয়েছে, রাষ্ট্র যাদের সুরক্ষার বদলে নিপীড়ন চালিয়েছে তাদেরকে আমাদের অনেকেই বলছি “বাড়ি  ফিরে যাও!”  অথচ তার পক্ষে তা সম্ভব হলে সে যেত । এ মূহূর্তে আমাদের উচিৎ তাদের মানবিক সাহায্য দেয়া ।

.

বিশ্বসংস্থার (UNHCR) দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে দৈহিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করা ,তাদের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষন করা, তাদের জেল জুলুম, অত্যাচার, এমন কি মৃত্যুর ঝুকি যেখানে রয়েছে তেমন কোথাও বল পূর্বক যেন পাঠানো না হয় -তা নিশ্চিত করা। কিন্তু না, তাদের তেমন কোন উদ্যোগ আজকের দিন পর্যন্ত চোখে পরেনি । গত করেকদিন ধরে মানবাধিকার সংগঠন “বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন- বিএইচআরএফ”- এর একটি ৭ সদস্যের ত্রাণ দলের সাথে আমি নিজে, সংস্থার চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি এডভোকেট শরীফ উদ্দিন, মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বাবর, এরশাদ আলম, এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবুল বশর নয়ন, ডাঃ মোঃ নুরুল আমিন চৌধুরী বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ছুটে আসা লাখো শরনার্থীদের মানবিক সাহায্য দিতে গিয়ে এক মানবিক সংকটময় অবস্থা দেখতে পাই। আহত, ক্ষুধার্ত, নির্যাতিত ছেড়া-পোড়া জখমপ্রাপ্ত, অসুস্থ নারী শিশু, বৃদ্ধ বনিতার যে স্রোত তা রোধ করা যাচ্ছিল না। সরকার এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সীমান্ত খুলে দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, (এ প্রবন্ধ লিখা পর্যন্ত) মানবাধিকার আজকের দিন পর্যন্ত কোন লংগরখানা খোলা হয়নি। ভুবুক্ষ মানুষের হাহাকার দেখে যেন চোখের ঘুম উবে গেছে বিবেকবান মানুষের । কথা বলে দেখলাম এসব শরণার্থীরা এমন একটি দিনের স্বপ্ন দেখছে যেদিন তারা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে স্বদেশে আবার ফিরে স্বগ়ৃহে জীবন যাপন শুরু করবে। এসব অসহায় মানুষগুলো আপনার/আমার সাহায্য ও সহানুভূতির প্রতীক্ষায় রয়েছে । মানবহিতৈষীরা এগিয়ে আসুন, মানবিক বিপর্যয় থেকে তাদের রক্ষায় অবদান রাখুন। মনে রাখবেন স্বদেশ হারাবার মতো বড় বেদনা পৃথিবীতে আর কিছু নেই। বিজ্ঞানী আইনস্ট্যাইনও একজন শরণার্থী ছিলেন। বিশ্বনবী আখেরী নবী মানবতার মুক্তিদূত  হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালামও মহান স্রষ্টার নির্দেশে কাফেরদের নির্যাতন ও হত্যার ষড়যন্ত্র থেকে আত্মরক্ষার্থে মাতৃভূমি থেকে হিজরত করেন। মজলুমের কান্নার আওয়াজ কখনো ব্যর্থ হয় না।

.

ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম জেনোসাইড ও হত্যাযজ্ঞের শিকার মায়ানমারের আরাকানী নারী শিশু আবাল বৃদ্ধ বনিতা আজ প্রাণ ভয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তে। মানবিক কারণে আমাদের সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের আরাকান, বুডিং, সীমান্ত শহর মংডু ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের পানিতে ও নৌকায় নৌকায় অসংখ্য অসহায় নারী-পুরুষ-শিশুরা ভাসছে। রক্তাক্ত জখম কিংবা গুলীবিদ্ধ, আহত ও ক্ষুধার্ত বনি আদমের আহাজারীতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ভারী হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপারে আগুনের শিখা। সরকার মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিলেও চরম খাদ্য ও মানবিক সংকটে ভুগছে লক্ষ লক্ষ রিফিউজি।

.

মায়ানমার সরকারের লুন্ঠিন বাহিনী, নাসাকা বাহিনী সহ নানা ধরনের বাহিনীর ধাওয়া, অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড ও কোস্ট গার্ডের পুশব্যাক প্রচেষ্টা, নাফ নদীর মাঝপথে বয়ে যাচ্ছিল এক করুণ মানবিক বিপর্যয়। রোহিঙ্গাদের উপর  রাখাইন সম্প্রদায়ের জাতিগত হিংসা প্রতিহিংসার শিকার হয়ে হাজার হাজার ভিকটিম বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন করছে আমরা কি মানব সন্তান নই ? মানবাধিকারের এ চরম লংঘনের শিকার এ মানুষগুলোকে বাঁচাবে কে? তারাও মানুষ, আমাদের ভাই, বোন, সন্তান কিংবা মা, বাবার মতো । বাংলাদেশ এমনিতেই জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ। তার ওপর প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের ঢল। ইতিপূর্বে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ শিবিরে বসবাস করছে। আমরা জনসংখ্যা সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত তার উপর বিরাট অংকের এ-রিফিউজি সংকট যেন ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’। এ মুহূর্তে সরকারের উচিত ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে নিজের পাশে দাঁড় করানো । মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিরাপদে তাদের নিজ দেশে নিজ গৃহে ফেরত পাঠাতে হবে। ব্যর্থতায় তাদের ৩য় কোন রাষ্ট্রে সেটেল করা যেমন ইতিপূর্বে করা হয়েছিল সৌদি আরবে । ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ১১৬ টি ক্যাম্পে প্রায় ২ লক্ষ উর্দুভাষী জনগোষ্টিত ভার সামলাচ্ছে বাংলাদেশ । তাদের পাকিস্তান এখনও ফেরত নিয়া যায়নি। এই বিষয়েও পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেয়া দরকার।

.

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর ত্রাণ ও সাহায্য এখনও পৌঁছায়নি। খোলা হয়নি লঙ্গরখানা । স্থানীয় মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় তারা কোন মতে বেঁচে আছে। এ সমস্যা এ দেশের জন্য নানাভাবে বিরূপ প্রভাব রাখছে। মিয়ানমারের অনীহা ও তাদের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এসব রিফিউজিকে এ-মুহূর্তে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না । ১৯৭৮-এর দিকে ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান এদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, ১৭টি ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়েছিল। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির মাধ্যমে তাদের সিংহভাগ ফেরত পাঠানো হয়।  ১৯৯১ এবং ১৯৯৯ সালেও আরো রিফিউজি প্রবাহ দেখা যায়। এ নৃশংসতা ও বর্বরতা আবারো শুরু হলো গত বছর ২০১৬ সালের অক্টোবরে। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা উস্কে দেয়া হয় । ফলে জীবন দিতে হয় বহু নিরপরাধ মানব সন্তানকে। জাতিসংঘের তথ্য মতে এবার এসেছে প্রায় ৩ লাখ। আরো আসছে প্রতিদিন দলে দলে । আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫-এ বলা হয়েছে রাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ চার্টারকে সম্মান দেখাবে। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২-এ বলা হয়েছে যে কোন ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারকে বঞ্চিত করা যাবে না, যা আইনগত কোন পদ্ধতি বা উপায় ব্যতীত। এখানে Person (ব্যক্তি) এবং Citizen (নাগরিক) শব্দগুলোর ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কে বাংলাদেশের নাগরিক, কে নাগরিক নয় তা বিবেচ্য নয় । বাংলাদেশ মূলত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের একটি ট্রেডিশন (ঐতিহ্য) আছে। আমরা বিশ্ববাসীর মৌলিক মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার পক্ষে কথা বলি । যদিও বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশের দেশসমূহ ১৯৫১ সালের কনভেনশনের কোন পক্ষ ছিল না তবুও বাংলাদেশ রিফিউজিদের কোন প্রকার শেল্টার দেয় না একথা ঠিক নয়। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ যেমন ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চাকমাদের, পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের এবং নেপাল, ভুটানও আফগান শরণার্থীদের গ্রহণ করেছে। রিফিউজি ইস্যুর মূলত মারাত্মক অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাব  থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অতীতে রিফিউজিদের সহায়তা দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় ২০ জন লোক Asylum গ্রহণের নজির আছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে বিশ্বের দরবারে প্রমান করেছে মমতায়, মানবতায়, সাহসে, পরোপকারের বাঙ্গালী জাতি শ্রেষ্ট জাতি। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে গেছে তা নজিরবিহীন। বিশ্ব যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল সেভাবে আমরা সাড়া পাইনি । এমনকি বন্ধু রাষ্ট্র ভারতকেও পাইনি। বাংলাদেশ এশিয়ান আফ্রিকান কনেভনশন-এর দ্বারা গৃহীত মূলনীতিসমূহকে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সংগত কারণে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করলেও এখানে একটি মানবিক বিষয় এসে যায়। তা হলো এ অসহায় মানুষ ও নারী শিশুদের মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার অনুচ্ছেদ ১৪(১) অনুযায়ী প্রত্যেকেরই নিগ্রহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় প্রার্থনা ও তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যা সমস্যা প্রকট, সেহেতু এক্ষেত্রে বিশ্ব সমাজের দায়িত্ব রয়েছে প্রচুর। বিশ্ববিবেক এমন দায়িত্বহীন আচরণ দুঃখজনক । আন্তর্জাতিক শরণার্থী রক্ষণা-বেক্ষণে ইউএনএইচসিআর-এর জরুরী বিকল্প পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি । রোহিঙ্গাদের সকল প্রকার বৈষম্য থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ববিবেককে। কেননা, তারা জাতিগত বিদ্বেষের সুস্পষ্ট শিকার। মিয়ানমার তাদের অস্থিত্ব মেনে নিতে নারাজ, তারা সেখানে রাষ্ট্র যন্ত্রের নির্যাতন গণহত্যার শিকার। পদে পদে বঞ্চিত, অবহেলিত, নির্যাতিত, পদদলিত। হত দরিদ্র অসহায় এসব বনি আদমের উপর আরাকানে, বর্মী- সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা পরবর্তী স্বশস্ত্র অপারেশন চালানো হয় প্রায় ১৪টি। মিথ্যবাদী কথিত গণতন্ত্রের মানসকন্যা নোবেল বিজয়ী অং সান সু চী’র দেশে তার ইশারায় এ ধরনের জাতিগত নৃশংসতা লজ্জাজনক যা পুরো মানবজাতির জন্য কলঙ্কজনক। মংডুতে মূলঘর মসজিদ ভেঙ্গে ফায়ার ব্রিগেড বানানোর দৃশ্য দেখলেই বুঝা যায় তারা সেখানে কত নিগৃহীত। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার মানুসগুলোকে রক্ষায় বিশ্ব সভ্যতা ব্যর্থ। ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই ।

.

গত ২০১২ সালে শুক্তবার ও শনিবার দু’দিন ব্যাপী মানব পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক এক সচেতনতামূলক কর্মসুচি পালন করতে ১৩ সদস্যের একটি মানবাধিকার টিম মায়ানমারের সীমান্ত শহর মংড়ু সফর করে । ঐ সময় সেখানে রোহিঙ্গাদের সামাজিক অবস্থান দেখা গেছে অনেকটা তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে। নিগৃহীত এ জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী জানে না। আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক পরিচয় দেখলে দেখা যাবে এদেশের মানুষের সাথে তাদের দীর্ঘ দিনের হৃদ্যতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক বিদ্যমান। এদেশের মানুষ বৃটিশ আমল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে সেখানে বসবাস করতো। মুরব্বীদের  থেকে শুনেছি ১৯৫৮ সালেও একবার রোহিঙ্গারা আরাকান থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ‘আকিয়াবের’ মগ-রা এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। আমাদের সীমান্তের দু’পারে বসবাসকারীদের মাঝে তাদের আত্মীয়তা রয়েছে। ফলে সেখানকার কান্নার আওয়াজ এখানের বাতাসকেও ভারী করে। নাফ নদীর তীরে তীরে ভাসছে  হাজার হাজার নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গা মুসলিম মানব সন্তান। তারা এখন বন্ধুহীন। কে দাঁড়াবে তাদের পাশে। আমরা বলছি বাড়ি ফিরে যাও, কিন্তু তার পক্ষে সম্ভব হলে সে যেত। জীবন এবং স্বাধীনতা হারাবার ভয়ে দেশত্যাগী পলাতক এসব নারী-পুরুষ এবং শিশুদের রক্ষা করবে কে? জাতিসংঘের (UNHCR) দায়িত্ব হচ্ছে তাদের দৈহিক নির্যাতন থেকে রক্ষা করা, তাদের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ করা ও তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা, তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিধান করা। নিগ্রহ, বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও জাতিগত প্রতিহিংসার দাবানল থেকে তাদের রক্ষা করা। তাদের সাম্প্রতিক দুর্দশা আমাদের সময়ের বড় ধরনের শোকাবহ ঘটনাগুলোর একটি। মানবাধিকার লংঘনের এ ব্যাপারটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য উদ্বেগজনক। মগদ রাজ্যের জাতিতাত্বিক নিগৃহ, নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা মানবতা বিরোধী অপরাধ পৃথিবীর সকল উদাহারণকে হার মানিয়েছে। গৌতম বুদ্ধের আদর্শকে পদদলিতকারী মায়ানমার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর নিন্দা জানাতে অন্যান্য বুডিষ্ট রাষ্ট্রও (চীন, থাইল্যান্ড) এগিয়ে আসেনি। এক্ষেত্রে মানবাধিকার নেতা দালাইলামার বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইবোনেরা এই দুর্বল অসহায় মানুষগুলোর পাশে দায়িতেছে। অনেকে প্রকাশ্যে এ নরহত্যাকে ঘৃণা জানিয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা উচ্চকিত থাকবে । শরনার্থীদের প্রতি বিশ্ববাসীর দায়িত্ব অপরিসীম । বিশেষ করে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দেশ বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের দায়িত্ব এক্ষেত্রে বেশী। জাতিগত নিধনের শিকার এ মানবগোষ্ঠীকে রক্ষা করা সময়ের দাবি। লুন্ঠিন, বিজেপি, নাসাকার গুলীতে নারী ও শিশু গণহত্যা, জবাই করে মানুষ হত্যা, অগ্নি সংযোগ, নিহতের ঘটনা, নাফ নদীতে নারী শিশুর লাশের মিছিল, ঘর পুড়ে দেয়ার ঘটনা, আহতদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, তীব্র খাদ্যাভাব, সীমান্তে হাজার হাজার নারী শিশুর মৃত্যুর প্রহর গোনার ঘটনা ইত্যাদি এ মানবিক বিপর্যয়ের সংবাদ বিশ্ববিবেককে কি নাড়া দেবে না? আসুন আমরা মানবতার প্রতি নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসি। মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আয়োজন করাও জরুরী মনে করি।

লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট, সু-শাসন ও মানবাধিকার কর্মী।

 

২ মন্তব্য
  1. Alim Uddin বলেছেন

    তারা নিরব শুধু মুসলিমের বেলায়। যেমন এখন রহিংগারা যদি এদের সাথে যুদ্ধে জরিপে পডে পুরা বিশ্ব মিলে এদের কে মারবে। মায়ানমার দিতিয় আপগানিসতান হয়ে যাবে। আল্লাহ সমস্ত মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুক। আমিন।

  2. Robicox Robi বলেছেন

    এই অসহায় মুসলিমের পাশে দাড়াতে সব মুসলিম দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।