অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রোহিঙ্গা সংকটে জন্ম নেয়া একজন ‘শেখ হাসিনার’ গল্প

0
.

মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হাতে নিগৃত একজন রোহিঙ্গা মুসলমান নারী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তার চারদিনের শিশুকে শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করেছে। তিনি ৭০ হাজার গর্ভবতী নারীদের মধ্যে একজন, যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০ বছর বয়সী খাদিজার বাবা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বার্মার সেনাবাহিনীর আক্রমণে নিষ্ঠুরভাবে খুন হন। খাদিজা আট মাসের গর্ভাবস্থায় ছিলেন, তখণ থেকেই তার মা এলম বাহারের অত্যন্ত স্নেহে ছিলেন তিনি। কিন্তু খাদিজা সব সময় আতংকে থাকত, রাখাইন জেলায় তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার সব কিছু পুড়ে গেছে।

একটি নীল ওরনা ও কালো বোরখা পড়া খাদিজা (২০)। টেকনাফ উপজেলার খারিয়া খালী শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ভাঙ্গা অংশ নামক স্থানে সড়কের ধারে একটি নবজাতক শিশু নিয়ে বসে বসে আছে।

কথা হয় তার সাথে। সে জানায়, আমি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বেঁচে আছি এবং আমার গর্ভে শিশুর সাথে জীবিত থাকার জন্য লড়াই করেছি। মাত্র আট মাসের সন্তান গর্ভে নিয়ে ভিটে মাটি এবং ছাড়তে হয়েছে দেশ। এরপর এপাড়ে আসতে পার করেছেন নানা বাধা-বিপত্তি। কিন্তু কাঁটা বিছানো পথ তাঁকে দমাতে পারেনি এতটুকু। কারণ সব বাধা ডিঙ্গানোর শক্তি জুগিয়েছে গর্ভের সন্তান।

তিনি জানান, অনেক কষ্ট করে আমি মায়ের সাথে পার হয়েছি সীমান্ত এবং বাংলাদেশে এসেছি। আমি এখানে এসে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছি। রাখাইনে হামলার সময় আমার স্বামীকে হারিয়েছি। এদেশে এসে আমি শেখ হাসিনার নামে কন্যার নাম রেখেছি।

তিনি বলেন, নৌকার মাধ্যমে তার পথ লড়াই, পানি দিয়ে পানিতে ডুবে এবং তারপর এমনকি এই অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হাঁটা। যে পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেছি সে প্রায় অস্পষ্ট।

তার অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, সে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের কাছে খাইজাখালী এলাকার মধ্য দিয়ে প্রহর রোদে হেঁটে গেলেও সে তাপের মধ্যে নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না।

কথা বলতে বলতে, তার মা শিশুকে তার কাছে হস্তান্তর করেন এবং নাফ নদীর তীরে বসে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করেন।
কথা হয় মা এলম বাহারের সাথে। ৪৫ বছর বয়সী এলম বাহার জানান, গত সপ্তাহে তার ছয় বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে। এর আগে তার স্বামীকেও মেরে ফেলা হয়। এক পরিবারে তাঁর মা ও কন্যা একমাত্র বেঁচে ছিলেন। নাতনী শেখ হাসিনার মাথার কাছাকাছি থাকা এক অদ্ভুত সবুজ শাড়ী পরা এলম বাহার।

হৃদয় স্পর্শী ভাবে হঠাৎ করেই বলেন, আমি একটি গর্ভবতী মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে বাংলাদেশে এসেছি। সে এখানে একটি কন্যা জন্ম দিয়েছে।

এলমবাহার বলেন, শেখ সাহেবকে (শেখ মুজিবুর রহমান) আমরা দেখিনি। তার মেয়ে শেখ হাসিনাকেও দেখিনি। তবে শুনেছি শেখের মেয়ে শেখ হাসিনা নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে। আমরা আশ্রয়ে বেঁচে আছি। তিনি আমাদের একটি নতুন জীবন দিয়েছেন এবং এখন আমরা আমাদের জীবনে কিছু শান্তি খুঁজে পেয়েছি।

এলম বাহার তার স্বামী নূর-উদ্দিনকে হারিয়ে ফেলে, খাদিজ তার বাবার হারিয়েছে এবং তার স্বামী ফখরুদ্দীন জীবিত নাকি মৃত সে বিষয়েও কিছু জানেন না। এরপরেও কিন্তু তার জন্য আশার আশায় সে এখনও বেঁচে আছে।

সম্ভবত সে মনে করে যে, নবজাত মেয়েটি শেখ হাসিনার নামকরণ করা হয়েছে শুধু এপাড়ে জন্মেছিলেন বলে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা আশ্রয় এবং তাদের প্রতি মানবিক আস্থার কারণে তারা এখানে বাস করতে পারছে।

মিয়ানমারের প্রতি এই ঘৃণা সত্ত্বেও মানবতার অস্তিত্ব স্মরণ করে। তাদের আশা রাখাইনে শীঘ্রই শান্তি আসবে।