অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে মুফতী ওয়াক্কাসকে সঠিক পথে ফিরে আসার আহবান

3
.

দেশের উলামায়ে কেরাম ও তাওহিদী জনতার আস্থার সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সুনামহানির জন্য দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আত্মকেন্দ্রিক চিন্তার ক্ষমতালিপ্সু গুটি কয়েক ব্যক্তি ওঠেপড়ে লেগেছেন। তারা সাংগঠিনক শৃঙ্খলা বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে একদিকে যেমন দলে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে দলের সহ-সভাপতি মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেবকে ভুলপরামর্শ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কখনোই ষড়যন্ত্রকারীদের সফল হতে দিবে না। ইতিহাসের অন্য সকল খলনায়কের মতো জমিয়তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারিরাও হয় নিজেদের ভুল শুধরিয়ে দলের শৃঙ্খলায় ফিরে আসবেন, নতুবা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে কালের হাওয়ায় বিলীন হয়ে যাবেন। আজ (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ঢাকা মহানগরীর ৫০১ জন আলেম উপরোক্ত কথা বলেন।

বিবৃতিতে আলেমগণ আরো বলেন, কিছু দিন ধরে আমরা প্রতক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের প্রাণের সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চিহ্নিত ক্ষুদ্র একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সংস্থার সাথে গোপন আঁতাত করে জমিয়তের ভেতরে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল। সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর জমিয়তের মজলিসে আমেলার বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত একটি সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে প্রকাশ্যে তাদের আনাঘোনা দেখা যাচ্ছে। তারা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি এনে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের ধান্ধায় নেমেছে। এদেরকে জাতি ভালভাবেই চেনে। এরা ক্ষমতার জন্য এতটাই পাগলপারা যে, প্রয়োজনে নীতি-আদর্শ ত্যাগ করতেও তারা দ্বিধা করে না। জমিয়তের নেতা-কর্মীরা ষড়যন্ত্রকারীদের সকল অপতৎপরতা সম্পর্কে অবগত আছেন এবং তারা কখনোই সফল হবে না।

বিবৃতিতে ওলামায়ে কেরাম বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লাগাতার ২৪ বছর পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। কিন্তু এই দীর্ঘ ২৪ বছরের দায়িত্ব পালনকালে মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস দলের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষা, আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও সাংগঠনিক গতি আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন।অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও ২০১৫ সালের কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত মাত্র ৬টি জেলার বাইরে আর কোন পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি করতে পারেননি তিনি। এমনকি ২৪ বছর মহাসচিবের দায়িত্বপালনের এই দীর্ঘ সময়েও মুফতী ওয়াক্কাস তাঁর নিজের জেলা যশোরসহ পার্শ্ববর্তী কোন জেলায়ও জমিয়তের কোন জেলা কমিটি গঠন করতে পারেননি। বলতে গেলে জমিয়তের সাংগঠনিক তৎপরতা একেবারেই ঝিমিয়ে পড়ে। দলীয় কোন সভা-সেমিনার, বৈঠক, আলোচনা কিছুই হতো না। জমিয়তকে তার একক খেয়াল-খুশীর সংগঠনে পরিণত করেছিলেন। এমনকি, সর্বশেষ ৫ বছর পর্যন্ত দলের কোন কাউন্সিল অধিবেশনও হয়নি। এই ২৪ বছরে দলের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব দেখাতে পারেননি মুফতী ওয়াক্কাস। দলের ভেতর থেকে বার বার হিসাব-নিকাশের বিষয়ে কথা ওঠলে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব একান্ত স্বেচ্ছাচারি ভাষায় বলে দিতেন, দলের কোন আয়ও নেই, ব্যয়ও নেই এবং খাতাপত্রও নেই। এমন খামখেয়ালীপূর্ণ কথা বলে তিনি চুপ হয়ে থাকেন।

বিবৃতিতে আলেমগণ আরো বলেন, এর মধ্যে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ডাকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ উচ্ছেদসহ নাস্তিকতা বিরোধী আন্দোলনের গণজোয়ার ওঠে। তখন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের আহবায়ক নির্বাচিত হন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তাঁর সাথে জমিয়তের আরো কয়েকজন নেতাও হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে স্থান লাভ করেন। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাজধানী ঢাকার হেফাজত কমিটির আহবায়ক হওয়ায় হেফাজতে তাঁর গুরুত্ব ও তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। হেফাজতের আন্দোলনের সুবাদে তখন সারাদেশে ব্যাপক সাংগঠনিক সফর, বৈঠক ও সমাবেশ হচ্ছিল। এসব সফরের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী জমিয়তকে দলীয়ভাবে সুসংসগঠিত ও তৎপর করার কাজটি অনেক এগিয়ে নেন। যে কারণে ২০১৩ সালের পর জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম যেন নতুন করে পুণরায় প্রাণ ফিরে পায়। এতে দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত সাংগঠিনক কাজে সকলে নতুন করে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুফতী ওয়াক্কাসকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ব্যাপক তৎপরতা ও উৎসাহে ২০১৪ সালে মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা তফাজ্জল হক আজীজ, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ জামি, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-হাসানসহ বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও শীর্ষস্থানীয় আলেম জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোদগান করেন। তখন জমিয়ত সভাপতি শায়েখ আল্লামা আব্দুল মু’মিন ইমাম বাড়ীর উপস্থিতিতে মজলিশে আমেলার বৈঠকে নতুন যোগ দেওয়া শীর্ষ আলেম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দকে জমিয়তের সাংগঠনিক বিভিন্ন পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর জমিয়তের সাংগঠনিক তৎপরতায় আরো বেশী গতিশীল হয়।

এই পর্যায়ে দলের দাপ্তরিক কার্যক্রম, আয়-ব্যয়, হিসাবাদিসহ আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দলকে আরো সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে দলকে পুনর্গঠিত করে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করার দাবী ওঠতে থাকে। ইতিমধ্যে ২০১৪ সালের জুন মাসে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের তৎকালীন মহাসচিব মুফতী ওয়াক্কাস জামিনে মুক্তি লাভ করেন।

তত দিনে দলের ভেতরে তৎকালীন মহাসচিব মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠতে থাকে। একদিকে লাগাতার ২৪ বছর তিনি দলীয় মহাসচিবের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সাংগঠনিকভাবে দল অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মাত্র ৬ জেলা ছাড়া সারাদেশে দলের কোন সাংগঠনিক কমিটি পর্যন্ত ছিল না। এমনকি তার নিজ জেলা যশোরসহ দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কোন জেলাতেও কমিটি নেই। এই ২৪ বছরে দলের কোন হিসাবপত্র ও আয়-ব্যয় তিনি দেখাতে পারছেন না। দলের কেন্দ্রীয় অফিস বলতে টঙের মতো ছোট্ট একটা খুপরী ছিল, যেখানে অনেক কষ্ট করে ওঠতে হতো। কিন্তু এতটাই ছোট ছিল যে, সেখানে কয়েজনের বসা, কোন আলোচনা বৈঠক বা মিটিং করার মতো কোনই সুযোগ ছিল না। এসব নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার সমাধান করে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কাউন্সিল আয়োজন করার লক্ষ্যে মজলিশে আমেলার বৈঠক আহবানের জন্য বার বার প্রস্তাব ওঠলে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব এ ব্যাপারে কোনই আগ্রহবোধ না করে নিশ্চুপ থাকেন। কাউন্সিলের দাবী জোরালো হওয়ার আরেকটি কারণ, বিগত ৫ বছর পর্যন্ত লাগাতার দলের কোন কাউন্সিল হয়নি।

বিবৃতিতে আলেমগণ আরো বলেন, এইসব বিষয় নিয়ে দলে নানা অসন্তোষ, ক্ষোভ, হতাশা ও চাপ তৈরি হওয়ার এক পর্যায়ে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব আমেলার বৈঠক আহবান করলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সর্বস্মত সিদ্ধান্তে ৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে তৎকালীন মহাসচিব মুফতী ওয়াক্কাস সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে সন্তোষজনক কোন প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেননি এবং ২৪ বছরের আয়-ব্যয়ের কোন হিসাবও দাখিল করতে পারেননি। তাছাড়া ইতিপূর্বে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে তিনি তার কোন সদুত্তর না দিয়ে নানা অজুহাত দাঁড় করেন। এরপর কাউন্সিলরগণ আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে দলীয় কমিটি পুনর্গঠন করেন। নতুন কমিটিতে মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাসকে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং দলীয় ভূমিকা ও কর্মতৎপরতাকে বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব পদে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাউন্সিলে মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল হিসাবাদি নতুন মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর দলীয় শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। তাঁর সুচিন্তিত উদ্যোগ ও উৎসাহে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যেন নতুন উদ্দীপনা শুরু হয়। নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-কর্মোদ্দীপনা তৈরিসহ সাংগঠনিক কাজে গতি ফিরে আসে। ইমিমেধ্যেই মাত্র ৬টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি থেকে উন্নিত হয়ে বর্তমানে সারা দেশে জমিয়তের ৪০টি পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে।

অবশিষ্ট অনেক জেলায় আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কিছু জেলায় সাংগঠনিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। আগের খুপরী টঙ ঘরের পরিবর্তে বর্তমানে সুপরিসর কেন্দ্রীয় অফিস চালু করা হয়েছে। দলের যে কোন বৈঠক ও সভা এখন কেন্দ্রীয় অফিসেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের নিষ্ক্রীয় থাকা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম রাজনীতির ময়দানে দেশব্যাপী এখন সক্রীয় ও আলোচিত একটি দল।

ইতিমধ্যে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবকে নতুন মহাসচিব আয়-ব্যয়সহ হিসাবাদি বুঝয়ে দিতে বার বার অনুরোধ করলেও তিনি চুপচাপ থেকে চরম অনীহা ও বিরক্তভাব দেখিয়ে যান। হিসাব ও আয়-ব্যয়ের প্রশ্ন তুললে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব বার বার একই কথা বলে যেতেন যে, জমিয়তের কোন আয়ও ছিল না, ব্যয়ও ছিল না এবং কোন খাতাপত্র ও হিসাব নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য দেওয়া চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের আলামত ছাড়া আর কী হতে পারে!

বিবৃতিদাতা আলেমগণ আরো বলেন, এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে জমিয়তের আমেলা মিটিংয়ে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব একজন শীর্ষ আলেম হিসেবে দেশে প্রসিদ্ধ থাকায় এবং তার সুনামের দিকসহ আরো নানাদিক বিবেচনায় নিয়ে রেজ্যুলেশন আকারে লিপিবদ্ধ করে তাঁর দায়িত্বের ২৪ বছরের আয়-ব্যয়সহ সকল হিসাবাদি থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে কাজ করার অনুরোধ করা হয়। ২৪ বছরের আয়-ব্যয় ও হিসাবাদি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মানেই হচ্ছে, তিনি ২৪ বছরের হিসাব দিতে পারেননি।

সে যাক, কিন্তু তাঁর প্রতি দলের এত ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব নতুন মহাসচিবকে কোনরূপ সহযোগিতা তো করছিলেনই না, বরং দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী বা দলের জন্য ক্ষতিকর হয় এরকম বিতর্কিত ও সন্দেহজনক নানা অসাংগঠনিক কাজে তিনি নিজেকে জড়িয়ে নেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের অভ্যন্তরে বিভেদ ও কোন্দল তৈরির জন্য নানা জনের কাছে নানা কথা বলতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে যখন ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নেয়, তখন মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের সাথে দেখা করে তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি তার নিজের সমর্থনের কথা জানান।

এর ইসলামী ঐক্যজোট নেতাদের সাথে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের দাওয়াতেও দলের সাথে কোন আলোচনা না করেই শরীক হন। নানা ইস্যুতে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেন এবং কোন কোন দলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে দলে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করতে থাকেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ কমিটিকে ভেঙে দুই টুকরা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করেন এবং এই লক্ষ্যে সক্রীয়ভাবে নানা তৎপরতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়, কওমী সনদের ইস্যুতেও মুফতী ওয়াক্কাসের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রয়েছে। তিনি সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেন- এমন কিছু বিতর্কিত আলেমকে বেফাকের কমিটিভুক্ত করতে প্রভাব খাটিয়ে চাপ তৈরি করেন। মোটকথা, তিনি সাংঘাতিকভাবে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী এবং দলের জন্য ক্ষতিকর এমন বহুবিদ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে তার উঠাবসা ও যাতায়াত অনেক বেড়ে যায়। তার এমন সন্দেহজনক ও দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী চলা ফেরার কারণে দলের নানা পর্যায় থেকে তাঁকে বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে সংশোধন করেননি। দলের বিভিন্ন বৈঠকে তিনি ঠিকমতো হাজির হতেন না এবং সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখতেন না।

এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করলে সেই চিঠি নিয়েও মুফতী ওয়াক্কাস মারাত্মক দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। যার সবিস্তার লিখে তাঁকে আর খাটো করতে চাচ্ছি না।

বিবৃতিতে বলা হয় যে, এমন প্রেক্ষিতে দলীয় শৃঙ্খলা ঠিক রাখার স্বার্থেই গত ১৪ সেপ্টেম্বর মজলিশে আমেলার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আমেলার বৈঠকে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবের নানা তৎপরতা ও ভূমিকা পর্যালোচনা করে একান্ত অপারগ হয়ে দলের নির্বাহী সভাপতির পদ বিলুপ্ত করে তাঁকে সহসভাপতির দায়িত্ব দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে নিরলসভাবে দলের স্বার্থে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়।

কিন্তু মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো মারাত্মক দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। তিনি আমেলার বৈঠকের পর দলের ভেতরের থাকা অপরিণামদর্শী কয়েকজন নেতাকে ফুঁসলিয়ে নতুনবাগ মাদ্রাসা নামে অখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন। যেই বৈঠকে সরকারী বিভিন্ন সংস্থার লোকজনও শরীক থাকেন বলে বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে। তিনি এখন দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি আনার জন্যও নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যায়ে নীতি-আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে হলেও ক্ষমতা লিপ্সু ও সুগোযসন্ধানী আরো কয়েকজন মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবের পাশে ভীড়ছে বলেও খবর আসছে। এদের মধ্যে সিলেটের মাওলানা মানসুরুল হাসান রায়পুরী, মাওলানা আব্দুল মালেক চৌধুরী, কুমিল্লার মুহউদ্দীন ইকরাম, বরিশালের মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী, খুলনার মাওলানা রেজাউল করীম এবং নানাভাবে বিতর্কিত মাওলানা ওলী উল্লাহ আরমান রয়েছেন।

বিবৃতির শেষ পর্যায়ে আশা প্রকাশ করে বলা হয় যে, মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস সারাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে একটি পরিচিত মুখ। তিনি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে কিছু দিনের জন্য হলেও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জীবনের এই প্রান্তে এসে কোন অপরিণামদর্শী ও ভুল কাজে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ে সর্বমহলে বিতর্কিত হোক বা কোনভাবেই তাঁর সুনামহানি ঘটুক; দেশের আলেম সমাজের ভাবমূর্তির জন্য এটা হবে অনাকাঙ্খিত ও চরম দুর্ভাগ্যজনক। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বিভক্তি আনার মতো কাজে জড়িয়ে পড়া কোন হক্কানী আলেমের কাজ হতে পারে না। আমরা মাওলানা মুফতী ওয়াক্কাস সাহেবের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ করব, তিনি যেন দলীয় শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে দলের সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে দলকে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ রাখার পাশাপাশি দলকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক ভূমিকা রখবেন। এতে তার সুনাম-সুখ্যাতি বাড়ার পাশাপাশি আল্লাহর কাছেও তিনি প্রিয় হবেন। আমরা কোনভাবেই চাই না, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেবের মতো একজন বরেণ্য আলেম ফেতনাবাজদের কাতারে গিয়ে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হোক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা সালাহ উদ্দীন, মাওলানা আবু সালেহ, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা রহিমুল্লাহ, মাওলানা কামাল উদ্দীন, মাওলানা জসীম উদ্দীন, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা রূহুল আমীন, মাওলানা লিসানুল হক, মাওলানা রাশেদুল ইসলাম, মাওলানা কামরুল আলম, মাওলানা কাওসার কামাল, মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা জামাল উদ্দীন, মাওলানা ফরিদুল হক ও মাওলানা আহসান উল্লাহ সহ ৫০১ জন আলেম।

৩ মন্তব্য
  1. তাজুল ইসলাম বলেছেন

    এত দীঘ সময়েও নিজের ভূল বুজতে না পারলে রাজনীতি করার দরকার কি?