অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বাড়ি ফিরেও অফিসের কাজ!

0

দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরে বাড়ি ফিরেছেন? হয়তো একটু বিশ্রাম করছেন। টিভি-তে প্রিয় ছবিটি সবে শুরু হয়েছে। এমন সময়ে বসের ফোন। ব্যস! বাড়িতে বসেও অফিসের কাজ।

ঘুরে গেল চ্যানেল। হিন্দি ফিল্ম থেকে সোজা শেয়ার মার্কেটের খবর। হাতের কাছে ফোনে বন্ধুর নম্বর গেল উবে। তার জায়গায় লেখা, ‘বস্ কলিং’। ল্যাপটপে ছোটবেলার ছবির পাতা পাল্টে গেল। খুলে গেল অ্যানালিটিক্‌স। এমন অভিজ্ঞতা জীবনে ক’বার হয়েছে? উত্তর সম্ভবত, ‘রোজই হচ্ছে! এ আর নতুন কী!’

হচ্ছে। হবে। এবং, হয়েই চলবে। ‘পুঁজিবাদ’, ‘কোম্পানিরাজ’, ‘স্বৈরাচার’-এর মতো যে নামেই ডাকুন, যা-ই করুন। প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কেননা, তাহলে সাধের চাকরিটি থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। চাকরি টিকিয়ে রাখার এটাই শর্ত।

আজ ছুটি। কাল সকাল থেকেই আবার শুরু হবে দৌড়। এবার আপনার মন আরও খারাপ করিয়ে দেওয়া যাক। চলুন ফ্রান্সে। সেখানে শ্রম-আইনে বদল আনা হচ্ছে। নয়া আইনে কর্মীদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই লেখা হয়েছে। কর্পোরেট-সর্বস্ব চাকরির দুনিয়ায় কর্মীদের ক্ষমতায়ন। কাজ এবং জীবনের ভারসাম্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই নয়া আইন আনা হচ্ছে। তাতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ‘বিচ্ছিন্নতার অধিকার’ বা ‘রাইট টু ডিসকানেক্ট’।

একটি সমীক্ষা করে ফ্রান্স সরকার দেখেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত একজন কাজের চাপে খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছেন। পেশাগতভাবে তো বটেই, মানসিক এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফ্রান্স ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বেনয় হ্যামন বলেছেন, ‘এরা সকলে অফিস ছাড়েন, কিন্তু কাজ ছাড়েন না। কুকুরকে যেমন চেনের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়, তেমনই এক অদৃশ্য ইলেকট্রনিক চেন দিয়ে এদের বেঁধে রাখা হয়।’

এর প্রতিকারে পুরনো আইন সংশোধন করে যে নতুন আইন আনার পথে ফ্রান্স এগিয়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অফিস থেকে কোনও কর্মী বাড়ি চলে গেলে তাকে কাজ সংক্রান্ত কোনও ই-মেল বা টেক্সট পাঠানো যাবে না। এমনকী কাজের কথা নিয়ে সেই কর্মী যদি আলোচনায় রাজি না-থাকেন, তা হলে তাকে জোর করে আলোচনায় আনা যাবে না। অবশ্য প্রকৃত প্রয়োজন হলে সবই করা যাবে। কিন্তু সেই প্রয়োজনীয়তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা থাকা বাধ্যতামূলক।

আইন না-মানলে অবশ্য কোনও শাস্তির বিধান নেই। যদিও এই নয়া আইন পাস হবে কি না, তা নিয়ে এখনও কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওল্যাদঁর সোশ্যালিস্ট পার্টি এই আইন আনতে চাইলেও, বিরোধীরা বাঁধা দিচ্ছে। এমনকী কর্পোরেটগুলিও আপত্তি জানিয়েছে।

তাদের যুক্তি, বহুজাতিক সংস্থাগুলির ব্যবসা ছড়িয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। শুধু তা-ই নয়, এখন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ হয় ২৪ ঘণ্টা। নাইট-শিফ্‌ট থাকে প্রায় সব চাকরিতে। এই অবস্থায় সংস্থা যখন ২৪ ঘণ্টা সক্রিয়, তখন তার কর্মীদেরও ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থাকতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, অফিসেই ক্রমাগত কাজ করতে হবে।

কিন্তু বর্তমান পরিচালন ব্যবস্থায় কোনও কর্মীকে, কোনও না কোনও কাজে আচমকা প্রয়োজন হতেই পারে। তাই এই নয়া আইন কার্যকরা না করাই ভাল।