হেফাজত কোনদিন কোন নির্বাচনে অংশ নিবেনাঃ জুনায়েদ বাবুনগরী
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনে আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ফেতনাও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদ বাড়ছে। ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কূটচাল ব্যর্থ হয়ে হেফাজতকে নিয়ে সেকুলার মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক প্রপাগান্ডা ও মিথ্যাচার চালাচ্ছে। হেফাজত কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কোন নির্বাচনে কোন দিন অংশগ্রহণ করবে না। কাউকে কোন নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে না। রাজনৈতিক কোন মোর্চার সাথে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই। হেফাজত মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার সংগ্রামের একটি অরাজনৈতিক বৃহত্তম সংগঠন। আমরা আমাদের এই ঈমানী আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে সদা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি আজ ২৪ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে শানে রেসালত সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চার অধিবেশনে বিভক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম ও মাওলানা লোকমান হাকিম।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী,মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা মুফতি আহমদুল্লাহ, মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা শেখ আহমদ, মুফতি রহিমুল্লাহ, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা জিয়াউল হোসাইন, মাওলানা সলিমুল্লাহ।
জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, মহানবী সা. এর শান-মান মর্যাদা রক্ষায় এবং নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির মোকাবেলায় আমাদের সংগ্রামকে আরো জোরদার করতে হবে। বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদি খ্রিস্টান ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মোকাবেলায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশী-বিদেশী ইসলামবিদ্বেষী গোষ্টী মুসলমানদের ঈমান আকীদা, তাহজীব তামাদ্দুন ধ্বংস করতে চায়। শিরক বিদআত ও কুফরি কালচার আমাদের সমাজকে কলুষিত করে ফেলেছে। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যানে তাওহিদ ও রিসালতের অনুপম আদর্শ পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম বিশ্ব আজ রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ও ফ্যাসাদে লিপ্ত। গোঁড়ামি, ক্ষমতার লোভ ও অহংকারের কারণে এক মুসলমান ভাই আরেক মুসলমান ভাইয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করছে। অথচ এর সুযোগ নিচ্ছে মুসলমানদের চিরশত্রু ইঙ্গ-মার্কিন ইহুদি চক্র। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ফ্যাসাদের পথে চললে আমাদের দুর্গতি বাড়বে। আরকানে মুসলমানদের দিকে তাকালেই মুসলামানদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠে। আরকানী মুসলমানদের নির্যাতনের বিরোদ্ধে তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ফেরত নিতে মায়ানমার সরকারকে বাধ্য করার জন্য মুসলিম সরকারগুলোকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির ভাষণে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে নিজের কলব ও নফসকে রক্ষা করতে হবে। প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহমুখী চিন্তা-ভাবনা আরো বাড়াতে হবে। তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে হবে। অন্যের হক নষ্ট করা যাবে না। আমানতের খেয়ানত করলে তা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে। দেশের ধনিক শ্রেণীকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সম্পদ পুঞ্জীভূত করা পাপ। গরিব-দুখী, চাষাভূষা, শ্রমিক, মজুদর শ্রেণীকে শোষণ ও জুলুম করে অর্জিত সম্পদ একদিন অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। আখেরাতে কালসাপ হয়ে দংশন করবে। আজকে জনগণের টাকা লুটপাট করে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, আখেরাতে তাদের প্রত্যেককে হিসাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, দ্বীনের মেহনতের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আমাদের অংশগ্রহণ ও ইজতেহাদ বাড়াতে হবে। যুগের চাহিদা মেটাতে কোরআন ও হাদিস গবেষণায় আরো গভীর মনোযোগ দিতে হবে। জীবনের প্রতিটি সমস্যা ও সংকটের ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য ও দিকনির্দেশনাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য এই ব্যাপক জাহেলিয়াত ও ফেতনার যুগে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা রক্ষা করতে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ ও দূরদর্শী ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। তবেই ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার দুষ্টচক্রের অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম জিহাদী- আক্বিদায়ে খতমে নবুওয়াত বলেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. সর্বশেষ নবী ও রসূল। একথা কুরআন-হাদিসের সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। কাদিয়ানীরা আহমদিয়া মুসলিম জামাত নাম ধারণ করে মুসলমানদের ঈমান আকিদা ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। কাদিয়ানীদের অপ-প্রচারের বিরোদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মাওলানা ওবাইদুর রহমান খান নদভী- আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হলো মুসলমানরা। কুরআন হলো বিজ্ঞানের মূল উৎস। কুরআন ছাড়া বিজ্ঞান চর্চার ফলে সমাজ প্রযুক্তির কুপ্রভাবে আক্রান্ত। সমাজকে প্রযুক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত করা জন্য কুরআন চর্চার কোন বিকল্প নেই।