অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

গুলশানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত, আটক ১: প্রধানমন্ত্রী

0
pm
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজান থেকে জিম্মিদের উদ্ধার অভিযানে ৬ জন সন্ত্রাসী নিহত  এবং ১জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই রেস্টুরেন্টে সাতজন সন্ত্রাসী হামলা করেছিল। তাদের মধ্যে ছয়জনকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী কমান্ডো দল। অনেককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। একজনকে আটক করা হয়েছে। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীরা রাতে যখন হামলা চালায় তখন নামাজের সময় ছিল। যারা নামাজ বাদ দিয়ে মানুষ হত্যায় মেতে উঠে তারা কেমন মুসলমান? ইসলাম কি নামাজ বাদ দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে বলে? আসলে এসব হামলাকারীদের কোনো ধর্ম নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা এটিই প্রথম। এ হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। অভিযান পরিচালনা করার জন্য সাভার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চৌকস সেনাসদস্যদের নিয়ে আসা হয়।

গুলশানের হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার সময় সাংবাদিকদের ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার সময় মিডিয়াগুলো যে ধরনের আচরণ করেছে তা কোনোভাবেই সঠিক ছিল না। টেলিভিশনগুলো সরাসরি সম্প্রচার করছিল। এমনকি র‌্যাবের পোশাক পরার দৃশ্য থেকে শুরু করে র‌্যাব-পুলিশ কীভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবে, সেটিও দেখানো হচ্ছিল। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সন্ত্রাসীরা টেলিভিশন দেখে। তারা এসব খবর দেখে অভিযান সম্পর্কে ধারণা পেয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে যায়। এসব সংবাদ পরিবেশন ঠিক না। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সেও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। অথচ সেসব হামলায় নিহতদের ছবি কিংবা কোনো রক্তাক্ত ছবি দেখানো হয়নি। অথচ আমাদের দেশে মিডিয়াগুলোতে কার আগে কে রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করবে, সেটির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে প্রতিরোধের জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

সকাল ৭ টা ৪০ মিলিটে কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এরআগে রেস্টুরেন্টের চারদিকে পুলিশ-র‌্যাব ঘিরে ফেলে।

বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ। আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন। আহত ২৬ জনকে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২৫ জনই পুলিশ সদস্য।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা রেস্টুরেন্ট থেকে আল্লাহু আকবার বলে, গুলি-গ্রেনেড ছোঁড়ে। রাত পৌনে নয়টার দিকে, ৭/৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল গ্রাহক সেজে এক এক করে রেস্টুরেন্টটিতে ঢোকে। তাদের কয়েকজনের হাতে বড় বড় কয়েকটি ব্যাগ ছিলো।

একপর্যায়ে ব্যাগ থেকে অস্ত্র বের করে রেস্টুরেন্টের সবাইকে জিম্মি করে তারা। রেস্টুরেন্টে প্রায় ২০ জন বিদেশিসহ ৪০ জনের মতো লোক ছিল। এরমধ্যে হোটেল কর্মচারি সুমন রেজা রান্নাঘরের দরজা দিয়ে পালিয়ে বাইরে এসে পুরো ঘটনা জানায়।

খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রেস্টুরেন্টটি ঘিরে ফেলে। পুলিশ-র‌্যাব সদস্যরা রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি গেলে সন্ত্রাসীরা ভেতর থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, শক্তিশালী গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি ও গ্রেনেডের স্পিনটারে আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে হাসপাতালে মারা যান, পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল হোসেন ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ।

জিম্মিদের উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা ও নৌ কমান্ডো, সোয়াট ও বিজিবি’র পাশাপাশি রয়েছে র‍্যাব ও পুলিশ।