অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিউ ইয়র্কে বোমা হামলাকারী যুবক চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা

1
বোমা হামাকারী সন্দেহে আটক আকায়েদ উল্লাহ।

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বাস টার্মিনালের বোমা হামলার অভিযোগে আটক হওয়া বাংলাদেশী বংশভূত আকায়েদ উল্লাহ (২৭) চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের হায়াত মাহমুদের বাড়ীর বাসিন্দা। তার বাবার নাম সানাউল্লাহ।

তবে আকায়েদ উল্লাহ (২৭) জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকার হাজারীবাগে। গ্রামের বাড়ী সন্দ্বীপের সাথে সানাউল্লাহ পরিবারের তেমন একটা যোগাযোগ ছিলনা বলে জানা গেছে।

মুছাপুর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম পাঠক ডট নিউজকে জানান, নিউইর্য়কে হামলাকারী হিসেবে আটক আকায়েদ উল্লাহ আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। কিন্তু পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় রয়েছে। আমেরিকায় যাওয়ার আগেও তাদের গ্রামের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ ছিল না। কারণ আকায়েদ উল্লাহ বাবা সানা্উল্লাহ থাকতো ঢাকায়। সেখানেই তার ছেলে সন্তান জন্ম এবং বড় হয়েছে। তাদের চাচা জেঠারা গ্রামে থাকেন।

মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও চট্টগ্রামের একটি দৈনিকের সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, আকায়েদ উল্লাহদের গ্রামে কেউ তেমন চিনে না। কারণ তাদের গ্রামের যোগাযোগ ছিল না।

বিস্ফোরণের পর।

আটক আকায়েদ উল্লাহর চাচা বোরহান উল্লাহ ভুটানের ছেলে মো. এমদাদ (চাচাতো ভাই) পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমার কাজিনরা ঢাকায় থাকতো। ২০১১ সালের দিকে তারা স্বপরিবারে আমেরিকায় চলে যায়। এর আগে আমার জেঠা সানাউল্লাহ ঢাকার হাজারীবাগে ট্যানারী ব্লকে মুদির দোকান করতো।

মো. এমদাদ আরো বলেন, আমি দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলাম। পরে দেশে চলে আসি। আর কাজিনরা আমেরিকা যাওয়ার পর এ পর্যন্ত দুইবার দেশে এসেছিলেন। তার মধ্যে একবার শুধু সন্দ্বীপে এসেছিলেন। তাদের সাথে আমাদের তেমন কোন যোগাযোগ ছিলনা। এমনকি আমার জেঠা (সানাউল্লাহ) মারা যাওয়ার পরও তার লাশ দেশে আনে নি। আমেরিকাতে তারা কে কি করতো আমরা জানি না।

আজ শুনেছি আমার কাজিন আমেরিকায় বোমা হামলার সাথে জড়িত তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এক প্রশ্নে জবাবে এমদাদাদ বলেন, আমেরিকায় এ ঘটনার পরও তাদের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ হয়নি।

বোমা বিস্ফোরণের পর আহত আকায়েদ উল্লাহ।

এদিকে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামশুল ইসলাম জানান, আকায়েদ উল্লাহর কোন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। কারণ তাদের গ্রামের বাড়ী সন্দ্বীপ হলেও গ্রামের সাথে তার পরিবারের কোন যোগাযোগ ছিল না। আমেরিকার ঘটনার পর আমরা তার ব্যাপারে খোঁজ লাগিয়েছি। বিকালে তার চাচা এবং চাচাতো ভাইদের থানায় আসতে বলেছি। তাদের কাছ থেকে আকায়েদ উল্লাহর পরিবার সম্পর্কে জানা যাবে।

উল্লেখ্য গত সোমবার সকালে ম্যানহাটনের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণের পর আহত অবস্থায় আকায়েদ উল্লাহ নামে ২৭ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি যুবককে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।

সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো আকাইদ থাকেন ব্রুকলিনে। তিনি একটি ইলেকট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন।

শরীরে বিস্ফোরক বাঁধা অবস্থায় ঘটনাস্থলে এভাবে পাওয়া যায় আকায়েদকে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আকায়েদ নিজের সঙ্গে বাঁধা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তারের পর আকায়েদকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

নিউ ইয়র্ক পুলিশকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন মার্কিন ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। তবে এদের কারও জীবনশঙ্কা নেই। শহর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিস্ফোরণের ঘটনাটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ একটি টুইট বার্তায় জানায়, আহতদের মধ্য থেকেই একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটক সন্দেহভাজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় বেলিভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ আহত হয়নি জানিয়ে পুলিশ সবাইকে এলাকাটি এড়িয়ে চলতে বলেছে।

নিউইয়র্ক পোস্টে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলা হয়, সম্ভবত পরিকল্পিত হামলার উদ্দেশ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি তার জ্যাকেটের ডান পাশে বোমাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে এটি বিস্ফোরিত হয়।

ভাড়া করা গাড়ি চালানোর লাইসেন্সধারী ছিলেন আকায়েদ। নিউ ইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি অ্যান্ড লিমোজিন কমিশনের (টিএলসি) পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক ডেপুটি কমিশনার অ্যালান জে ফ্রমবার্গ এক বিবৃতিতে সিএনএনকে জানিয়েছেন, ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ভাড়ায় নেওয়া গাড়ি চালানোর জন্য টিএলসির লাইসেন্স ছিল আকায়েদের। তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় এবং আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

ফ্রমবার্গ বলেন, ‘আকায়েদকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু ট্যাক্সি বা ভাড়ায় নিয়ে চালানো গাড়ির চালকরা স্বাধীন কন্ট্রাক্টর এবং তারা চাকরিজীবী নয়, সেহেতু আমার জানার উপায় নেই, তিনি নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা থেকে গাড়ি চালাতেন বা লাইসেন্স নিলেও আদৌ তিনি গাড়ি চালিয়েছিলেন কিনা।’

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তার সন্ত্রাসে জড়িত থাকার কোনো তথ্য নেই।

 

১ টি মন্তব্য
  1. Arif R. Islam বলেছেন

    মানুষ মারলে হুর মেলে তাদের বিকৃত আয়াতে