অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

মুন্সীগঞ্জে আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ৩

0
madarypur-612x264
সংর্ঘষের ফাইল ছবি:

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের মেঘনার তীরবর্তী চরবালাকি এলাকায় মাটি ভরাটকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউপি সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে দুই সহোদর রয়েছেন।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। গুরুতর আহত ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ৫ জনকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজনকে পুলিশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আটক করেছে।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত দুজন হলেন হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাপ হোসেন ব্যাপারী (৪৫), তাঁর ছোট ভাই আইয়ুব হোসেন ব্যাপারী (৩৫) ও আওলাদ হোসেন (৩৫)। তিনজনের বাড়ি চরবলাকি এলাকায়। গোলাপ ও আইয়ুবের বাবার নাম মজু ব্যাপারী। আওলাদের বাবার নাম মৃত আবদুল আউয়াল।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হোসেন্দি ইউনিয়নের চরবালাকি এলাকায় ম্যাক্রন গ্রুপ ও সিনহা গ্রুপের মধ্যে মাটি ভরাট নিয়ে গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা এবং সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ম্যাক্রন গ্রুপের পক্ষ নেন বর্তমান ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান গজারিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক ওরফে মজনু। অন্যদিকে সিনহা গ্রুপের পক্ষে কাজ করছেন হোসেন্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন ওরফে মন্টু। মাহবুবুলের পক্ষে ম্যাক্রন গ্রুপের হয়ে মাটি ভরাটের কাজ তদারক করছিলেন নাজমুল ও আমিরুল হক। আর মতিনের পক্ষে কাজ তদারক করছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন ব্যাপারী ও তাঁর ভাইয়েরা।

এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ভরাট করা স্থান থেকে হটানোকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে মাটি ভরাট নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলিতে গোলাপ হোসেন ব্যাপারী, তাঁর ছোট ভাই আইয়ুব হোসেন ব্যাপারী, আওলাদ হোসেনসহ প্রায় ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এঁদের মধ্যে গোলাপ হোসেন ও আইয়ুবকে সোনারগাঁয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পরে তাঁরা মারা যান। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ আওলাদ হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরে তিনি মারা যান। হোসেন্দি ইউনিয়নের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মনিরুল হক রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আওলাদের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মাহবুবুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে আবদুল মতিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে এ ব্যাপারে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক বলেন, গজারিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপের কোম্পানি জমি কিনে যে যার মতো মাটি ভরাট করছে। এ নিয়ে এক জমি দু-তিনবারও রেজিস্ট্রি হয়েছে। এই মাটি ভরাট নিয়ে রীতিমতো একটি অরাজকতা চলছে। এতে দলীয় কিছু লোক টাকার জন্য বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন ঠিকই, কিন্তু এই ভরাট নিয়ে দল থেকে কাউকে কোনো প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। এটা তাঁদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার।

এ ব্যাপারে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ম্যাক্রন গ্রুপের মাহবুবুল ও সিনহা গ্রুপের মতিনের পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের লাশ সোনারগাঁ থানায় রয়েছে।

পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মাটি ভরাট নিয়ে দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।