অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিয়ন্ত্রণ করুন নিজের রাগ ও এর বহিঃপ্রকাশের ধরণ

0

আমাদের অন্যান্য অনুভূতিগুলোর মতই রাগ অনেক স্বাভাবিক এবং শক্তিশালী একটি অনুভূতি। তবে অতিরিক্ত রাগ ও এর অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ নিজের জন্যে এবং অন্যজনের জন্যেও ক্ষতিকর। রাগ হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের মধ্যে কিছু শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। আমরা যদি জানতে পারি আমাদের পরিবর্তনগুলো কিভাবে হচ্ছে এবং ক্ষতিকর দিকগুলো কি তাহলে সহজ হয়ে যাবে জীবন-যাপনের জটিলতা।

রাগে একজন ব্যক্তির শারীরিক পরিবর্তনঃ

  • ঘাম হয়, শরীর কাঁপতে থাকে
  • হৃৎপিণ্ডে দ্রুত রক্ত চলাচল ঘটে
  • মাথা ভার হয়ে যায়
  • দ্রুত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ঘটে
  • অতিরিক্ত রাগে কখনও কখনও হার্ট-এট্যাক, ব্রেইন-স্ট্রোক হতে পারে।

রাগে ব্যক্তির মানসিক পরিবর্তনঃ

  • নিজের ও অন্যদের উপর বিরক্তি তৈরি হয়
  • সম্পর্ক ও বিশ্বাস বিনষ্ট হয়
  • আত্ম-সম্মানবোধ কমে যায়
  • আক্রমণাত্মক মনোভাব তৈরি হয়

রাগে ব্যক্তির আচরণগত পরিবর্তনঃ

  • আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ পায়( যেমন- আঙ্গুল তুলে কথা বলা, আঘাত করা)
  • কণ্ঠস্বর তীব্র ও কর্কশ হয়ে যায়
  • কাজ-কর্মে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়
  • নিজেকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে ( হাত কাটা, মাদক গ্রহণ, আত্মহত্যা)
  • অন্যদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে (মারধোর করা, ভয় ভীতি দেখানো, ত্রাস সৃষ্টি করা)
  • ভাংচুর করে পরিবেশ নষ্ট করে
  • আইন নিজের হাতে তুলে নেয়

এমনটা হলে আমাদের জানতে হবে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো অভ্যন্তরীণ ভাবে হতে থাকে। এবং আচরণগত পরিবর্তনটা আমরা নিজেরা করে থাকি। তাই রাগ প্রকাশ করার আচরণ কি হবে সেটা আমাদের নিজেদের নির্ধারণ করতে হবে। এখানে সংক্ষিপ্ত কিছু কৌশল দেয়া হল এর বাইরেও অনেক কৌশল রয়েছে যা ব্যক্তিকে তার আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।

রাগ বহিঃপ্রকাশে আচরণ নিয়ন্ত্রণের কৌশলঃ

    • ১. নিজের রাগ কখন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে হচ্ছে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে নির্দিষ্ট ধারণা রাখা।

২. রাগ এর পরিমাণ সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। যখন রাগ করছি তখন কতটা রেগে যাচ্ছি সেটাকে একটা নম্বর দেয়া।

৩. রাগ হওয়ার সময় সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া না করে কিছুক্ষণ বিরতি নেয়া। ২ থেকে ৩ মিনিট সময় নেয়া যেতে পারে। কিংবা রাগের মাত্রার উপর নির্ভর করে আরও সময় বাড়ানো কমানো যায়। আমি কিভাবে রাগ প্রকাশ করছি এবং এতে আশেপাশে কেউ বা নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি কিনা বিশ্লেষণ করা। যদি এমন আচরণ শনাক্ত করা যায় তাহলে এর পরিবর্তে অন্য কোন আচরণটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে আমার রাগ প্রকাশ করবে এবং অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সেটা বাছাই করা। ( যেমন কেউ কেউ ঐ স্থান থেকে সরে গিয়ে নিরিবিলি বসে থাকে, অন্য কোন কাজে মনোযোগ দেয়, পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলে, রাগ হওয়ার কারণটা স্পষ্ট করে বলে ইত্যাদি)।

৪. নিজে থেকেই রাগের মুহূর্তের বাছাইকৃত আচরণটাকে অনুশীলন করা এবং স্বেচ্ছায় পরিবর্তিত আচরণটা করার প্রত্যয় গ্রহণ করা।

৫. যখন কোন ক্ষেত্রে দেখলেন পরিবর্তিত আচরণ করতে পেরেছেন তখন নিজেকে মনে মনে প্রশংসা করা।

রাগের মুহূর্তে অন্যদের কিছু কাজ আমাদের আরও রাগিয়ে দেয়। সে সময়ে মনে রাখতে হবে, রাগ যেহেতু স্বাভাবিক অনুভূতি তাই একজন মানুষ হিসেবে আমরা তো রাগ করবই। কিন্তু রাগ প্রকাশ করার আচরণ এর উপর আমাদের নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সুতরাং আমরা একটু সচেতন হলেই এই আচরণ ইতিবাচক ভাবে বদলে ফেলতে পারি।