অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়িতে টেণ্ডারবাজদের দৌরাত্ব, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় দুই মামলা

0
.

সরকারী সাড়ে তিনকোটি টাকার প্রকল্প ভাগ বাটোয়ারার দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় ফটিকছড়ির এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় দুটি মামলা করা হয়েছে।

মানহানির অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন সংশোধিত ২০০৬ (সংশোধিত-২০১৩) এর ৫৭ ধারায় এ দুটি মামলা করা হয়েছে।

আদালত মামলা দুটি আমলে নিয়ে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ১২ মার্চ মামলা গুলো ঢাকা সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনাল আদালতে করলেও বিষয়টি রোববার জানাজানি হয়।দুটি মামলায় বিবাদী করা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর ফটিকছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি এম এস আকাশকে।

এক মামলার বাদী দৈনিক ইনকিলাবের ফটিকছড়ি উপজেলা সংবাদদাতা সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী। অপর মামলার বাদি উপজেলার উত্তর হাইদচকিয়া গ্রামের ঠিকাদার মুহাম্মদ মহসীন হায়দার।

মামলার আর্জিতে বাদী সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী উল্লেখ করেন, ‘বিবাদির ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি এবং ভুয়া একাধিক আইডি থেকে নামে বেনামে তার বিরুদ্ধে কটাক্ক করে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পোষ্ট দেন। এতে তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। এটি প্রচলিত আইনে জগন্য অপরাধ। তাই প্রতিকার চেয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি।

আরেক মামলার আরজিতে বাদি মুহাম্মদ মহসিন হায়দার উল্লেখ করেন, বিবাদির ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি এবং ভুয়া একাধিক আইডি থেকে তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাল্পনিক, কল্পনাপ্রসূত মিথ্যা ও বানোয়ার পোষ্ট প্রদান করেন। এতে তার মানহানি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাদীর পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তাই বাদি আদালতে প্রতিকার চেয়ে মামলা করেন।

এদিকে মামলার আরজিতে ফেসবুকে বাদীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর পোস্ট দেয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও মূলত দুর্নীতির সংবাদই এর নেপথ্য কারণ বলে জানা গেছে।

সুত্র জানায়,গত ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে সাড়ে তিন কোটি টাকার প্রকল্পের দরপত্র ক্রয়ের শেষ সময়।

কিন্তু সেদিন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বিনা ছুটিতে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বেশ কয়েকদিন উধাও হয়ে যায়।

স্থানীয় ঠিকাদাররা এ নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করার পর বিষয়টি নিয়ে পর দিন ২১ ডিসেম্বর একাধিক গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ সময় জনৈক জনপ্রতিনিধির বক্তব্যে ঠিকাদার মহসিনের যোগসাজসের কথা উঠে আসে। ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা তখন বলেছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তা তারিকুল,ঠিকাদার মহসিনসহ একটি সিন্ডিকেট পরস্পর যোগ সাজসে সরকারী প্রকল্প গুলো ভাগবাটোয়ার করেন। এর পর এসব প্রকল্পের কার্যাদেশ নিয়েও গনমাধ্যম কর্মীদের লুকোচুরি খেলেন পিআইও তারিকুল।

এক পর্য়ায়ে উপজেলা প্রশাসনসহ সকলের তোপের মুখে পড়েন পিআইও তারিকুল।

এদিকে ফটিকছড়ি প্রেসক্লাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপিং রয়েছে। আগের নির্বাচিত কমিটি নিয়ে কোর্টে দায়ের করা মামলা নিস্পত্তি হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠন কল্পে গত ৭ জানুয়ারী নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যা উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।

নতুন আহবায়ক কমিটিতে সাংবাদিক আকাশকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। মামলার বাদী জাহেদুল্লাহ কুরাইশি দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় কোর্টে একটি অপর মিস মামলা করে উপজেলার ১৮ সাংবাদিকের সাক্ষর জাল করে তাদের নামে ইস্যু হওয়া সমন গায়েব করেন উক্ত কোরাইশি। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকসহ আইনজীবিরা প্রতিবাদ করেন।

সুত্র জানায় উপজেলার আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ইন্দনে ঠিকাদার মহসিন, সাংবাদিক কুরাইশী এবং পিআইও তারিকুল মিলে সিন্ডিকেট করে পরস্পরের যোগসাজসে এ মামলা দুটি দায়ের করেছে।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক এম এস আকাশ বলেন, আমি কারো নাম ব্যবহার করে কিংবা কারো বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফেসবুকে কোন পোষ্ট প্রদান করিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মহলের এজেন্দা বাস্তবায়ন করতে এ দুইটি মামলা করা হয়েছে।

আকাশ বলেন গত কিছুদিন আগে ফটিকছড়িতে সাড়ে তিনকোটি টাকার প্রকল্প ভাগবাটোয়ারা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করায় উক্ত মহলটি তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়।  সংবাদটি প্রকাশ না করতে তাঁকে নানা ভাবে ম্যানেজ করার চেস্টা করে ব্যর্থ হয় উক্ত সিন্ডিকেট। এর পর ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারনার অভিযোগ এনে মামলা দুটি করা হয়।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসাইন মাহমুদ বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সাংবাদিক আাকাশের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় ২টি মিথ্যা মামলা দায়ের করায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।