অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

জেনে আশ্চর্য হবেন, এক লবণ এতো কাজে লাগে!

0

লবণ ছাড়া রান্নার কথা ভাবাই যায় না। তবে লবণ যে শুধু খাবারে স্বাদ আনে তা-ই নয়। এটি নানা কাজেও লাগে। এমনকি সৌন্দর্যচর্চায়ও ভূমিকা রাখতে পারে লবণ। কীভাবে?

ঘরের স্যাঁতসেতেভাব দূর করে
বৃষ্টিবাদলের দিনে ঘর কেমন স্যাঁতসেতে হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘরের বাতাস কেমন যেন অস্বস্তিকর মনে হয়, তাই না? এই ভাব দূর করতে একটি মাঝারি সাইজের বাটিতে লবণ নেন এবং সেই বাটিটি ঘরের টেবিলের ওপর রেখে দিন। এতে ঘরের স্যাঁতসেতেভাব দূর হয়ে যাবে।

ইস্ত্রিতে
ইস্ত্রি একটু পুরনো হলে অনেক সময় মরিচা ধরে যায় বা আগের মতো আর মসৃণ থাকে না। এর ফলে কাপড় ভালো ইস্ত্রি হয় না। এবার তুলো কিংবা এক টুকরো কাপড়ে খানিকটা লবণ লাগিয়ে তা দিয়ে ঠাণ্ডা ইস্ত্রিটা ভালো করে ঘষে নিন, দেখবেন কী সুন্দর আগের মতো মসৃণ হয়ে গেছে।

ইলেকট্রিক চুলায়
রান্নার পরপরই নিয়মিত ভালো করে পরিষ্কার না করার কারণে অনেক সময় ইলেকট্রিক চুলার চারদিকে কেমন শক্ত দানার মতো ময়লা জমে যায়, যা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা ছাড়া ওঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে চুলার চারিদিকে লবণ ছড়িয়ে দিয়ে একটু ভেজা শক্ত কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষে নিন৷ ব্যাস, হয়ে গেলো আবার আগের মতো চকচকে চুলা।

মোমের সৌন্দর্য
নানা উপলক্ষ্যে সর্বত্রই মোমের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া আজকাল কত ফল, ফুলের ফ্লেবারের মোমই না বাজারের পাওয়া যায়। তবে জ্বলন্ত মোম গলে গেলে দেখতে খারাপ লাগে৷ তাই মোম ব্যবহারের আগে যদি সারারাত লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়, তাহলে আর গলে পড়বে না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, লবণপানিতে ভেজানোর সময় মোমের সুতা যেন না ভেজে।

তেলের দাগ তুলতে লবণ
খাওয়া বা রান্নার সময় প্রায়ই কাপড়ের তেলের দাগ লাগে। যে কোনো তেলের দাগের ওপর একটু লবণ ছড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। লবণ তেলের দাগ শুষে নেবে।

পনির তাজা রাখতে
বেশি দিন তাজা ও পনিরের স্বাদ ধরে রাখতে চান? তাহলে একটি পাতলা কাপড় লবণপানিতে ভিজিয়ে চিপে নিন। তারপর কাপড় দিয়ে পনিরটিকে পেচিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন, ব্যাস…!

সৌন্দর্য চর্চায় লবণপিলিং বা স্ক্রাব হিসেবেও লবণ ব্যবহার করা যায়, বিশেষ করে হাত বা পা দু’টোকে মসৃণ ও সুন্দর রাখতে। তিন চা চামচ অ্যাভোকাডো ও একই পরিমাণ লবণ মিশিয়ে শরীরের খশখশে জায়গায় ঘষে নিন, দেখবেন কেমন নরম আর তুলতুলে হয়ে গেছে৷ অ্যাভোকাডে না থাকলে মধুও ব্যবহার করতে পারেন।

তামা ও পিতলের দাগতামা এবং পিতলের তৈরি জিনিসের ময়লা দাগ দেখতে মোটেই ভালো লাগে না। এই দাগ সহজেই তোলা সম্ভব৷ লবণ এবং আটা দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন আর তাতে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা ভিনিগার। পেস্টটি তামা বা পিতলের ওপর এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার একদম ঝকঝকে দেখাবে।

গলা ব্যথা কমাতে
গলা ব্যথায় লবণের জুড়ি নেই। ঠাণ্ডা লাগা বা গলা ব্যথায় কুসুমগরম এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ লবণ দিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করুন। এতে মুখের ভেতরটা যেমন জীবাণুমুক্ত হবে, তেমনি গলাব্যথাও কমে যাবে।

– ডয়চে ভেলে

কতটুকু লবণ খাবেন?

লবণের ব্যাপারে সাবধান হাওয়ার সময় মনে হয় এসে গেছে। চিকিৎসকেরা নানাভাবে বেশি লবণ খাওয়া নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি মার্কিন গবেষকদের করা এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, লবণ খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকলে ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, ডিমেনশিয়ার মতো ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আসলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ কমতে শুরু করে। যে কারণে ধীরে ধীরে ব্রেন পাওয়ার কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের আরো নানা ধরবনের ক্ষতি হয়। কারণ বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে নুনের সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের ভালো-মন্দের যোগ রয়েছে, যেমনটা রয়েছে মস্তিষ্কের সঙ্গে। এই কারণেই তো কি পরিমাণে কাঁচা লবণ খাচ্ছেন, শুধু তা নয়, খাবারে কী পরিমাণ লবণ দিচ্ছেন, তার উপরও শরীর কতটা রোগমুক্ত থাকবে, তা নির্ভর করে থাকে।

শরীরে লবণের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে ভাইটাল অর্গ্যানেরা ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে একাধিক রোগ ঘারে চেপে বসে, যার মধ্য়ে বেশ কতগুলো মারণ রোগও। যেমন ধরুন-

১. রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে : একথা আজ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে লবণ খাওয়ার পরিমাণে যদি নিয়ন্ত্রণ আনা না যায়, তাহলে রক্তচাপ মারাত্মক বাড়তে শুরু করে। আর এমনটা হলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কাও। আসলে লবণ মানেই সোডিয়াম, আর এই খনিজটির মাত্রা রক্তে যত বাড়ে, তত পটাশিয়ামের পরিমাণ কমতে শুরু করে। যে কারণে ব্লাড ভেসেলের উপর চাপ বাড়তে থাকে। যে কারণে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।

২. স্ট্রোক : মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ কমতে শুরু করলে ব্রেনের অন্দরে অক্সিজেনের অভাব ঘটতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ব্রেন সেলেরা মরতে থাকে। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে নানাবিধ ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। এখন প্রশ্ন হলো মস্তিষ্কে রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয় কেন? আসলে শরীরে লবণের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ বাড়তে থাকে। আর ব্লাড প্রেসার বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। আর একবার যদি ছোট ছোট স্ট্রোক হতে শুরু করে, তাহলে ব্রেনে রক্তের সরবরাহ কমতে শুরু করে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পরেছেন মস্তিষ্কের ভাল-মন্দের সঙ্গে নুনের যোগটা কতটা গভীর। তাই সাবধান!

৩. হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে : বেশ কিছু কেস স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়বে না কমবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে রক্তচাপের উপর। ব্লাড প্রেসার যদি বাড়তে থাকে, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই হার্টের উপর চাপ বাড়তে শুরু করে, আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই করোনারি হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বাড়ে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও। আসলে রক্তচাপ বাড়তে থাকেল হার্টে ঠিক মতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে হার্টের পেশীরা শক্ত হতে শুরু করে। যে কারণে হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

৪. স্টামাক ক্যান্সার আক্রমণ শানায় : একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দেহে লবণের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে নানা কারণে শরীরে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক একটি জীবাণুর মাত্রাও বাড়তে শুরু করে, যা দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্টামাকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সেই সঙ্গে শরীরের এই অংশে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই এমন মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে রোজের ডেয়েটে নুনের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমান। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!

৫. অস্টিওপোরোসিস : শরীরে নুনের পরিমাণ বাড়তে শুরু করলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ক্ষমতা কমতে থাকে। কারণ হাড়ের খাবার হলো ক্যালসিয়ামে। তাই তো এই উপাদানটির মাত্রা কমলে একে একে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে। সেই সঙ্গে লেজুড় হয় জয়েন্ট পেনও। ফলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। তাই আপনি যদি না চান, এমন ঘটনা আপনার সঙ্গেও ঘটুক, তাহলে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে ভুলবেন না যেন!

৬. ওজন বৃদ্ধি পায় : সরকারি এবং বেসরকারি পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে দেখতে পাবেন গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ওবেসিটি সমস্যা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে, যে কারণে বেড়েছে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের রোগ এবং ব্লাড প্রেসারের মতো মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও। তাই তো বেশি মাত্রায় লবণ খেতে মানা করছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু লবণে সঙ্গে ওবেসিটির কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে নুনের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে পানির পিপাসা খুব বেড়ে যায়, আর আজকের প্রজন্ম পিপাসা মেটাতে খাবার পানির বদলে ঠান্ডা পানীয় খেতেই বেশি ভালোবাসে। ফলে কোলড্রিঙ্ক খাওয়ার পরিমাণ বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে শরীরে ক্যালরি প্রবেশের মাত্রাও। ফলে ওজন বাড়তে সময় লাগে না।