অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়িতে আ’লীগে বিরোধ, ফুরফুরে তরিকত, হেভিওয়েটের হাঁকডাকে বিএনপি

0
.

চট্টগ্রামের বৃহত্তর ফটিকছড়ি উপজেলা নিয়ে চট্টগ্রাম-২ সংসদীয় আসন গঠিত। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বসবাস এ অঞ্চলে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

গত দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তিনি জোটগত মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে তৃতীয় বারের মত এমপি হয়েছিলেন। সেবার তাঁকে প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা ড. মাহমুদ হাসানের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হলেও জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ সমর্থনে তিনি সহজেই এমপি হন। তবে, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় রাজনীতি থেকে স্থানীয় রাজনীতি বেশি প্রাধন্য পাচ্ছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে ঘিরে ইতিপূর্বে একাধিক খন্ড হয়েছে এ অঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতি। দলীয় কোন্দল গ্রুপিং এখন প্রকাশ্যে চলছে।

চলছে সংঘাত, ঘটছে রক্তপাতের ঘটনা। সবমিলিয়ে ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগের রাজনীতি এখন বেকায়দায়। তবে আওয়ামীলীগের এই দলাদলিতে ফুরফরে রয়েছে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। আর নিজেদের হেভিওয়েট বলে হাঁক-ডাক দিচ্ছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, এ দল থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রত্যাশা করছেন নবীন-প্রবীণ মিলে অন্তত একডজন নেতা। নৌকার মনোনয়ন চাইবেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ।

.

ফটিকছড়িতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সংখ্যা এক ডজন হলেও বিএনপিতে রয়েছেন- মরহুম সালাহ্ উদ্দীন কাদের (সাকা) চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী অথবা পুত্র কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা ও বিএনপির তথ্য-গবেষণা বিষয়ক সহ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য আইনজীবি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জেন ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, সাবেক উর্ধতন সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ্ বাহার চৌধুরী ।

এদিকে আগামী নির্বাচনেও মহাজোটের শরীক দল হিসেবে এ আসন থেকে নজিবুল বশরের মনোনয়ন নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন এই সাংসদ। তাই কোন দু:শ্চিন্তায় না থেকে ফুরফুরে মেজাজেই দিন কাটছে বলে ও জানান এই সাংসদ।

জানা গেছে, আওয়ামীলীগ থেকে এ আসনে কোন সাংসদ না থাকায় দাঙ্গা ফ্যাসাদে জর্জরিত ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ। তাই এ আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনোয়ন প্রত্যাশীরা এ পরিস্থিতির অবসান চায়।

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলো ফটিকছড়ি আওয়ামী পরিবার। উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ঝংকার মোড়ের জারিয়া কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বখতপুর ইউ.পি চেয়ারম্যান সোলায়মান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সবার প্রত্যাশা ছিল উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট গুনুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরামর্শ ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদকের মতামতের ভিত্তিতে দক্ষ, যোগ্য, রাজনৈতিক বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ত্যাগীদের সমন্বয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি কার্যকরী কমিটি গঠিত হবে। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদক কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ সময় ধরে গড়িমসি করে একটি অগ্রহণযোগ্য কমিটি গঠন করেন। যার মধ্য দিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে দীর্ঘকালের চলমান ঐক্য নষ্ট হচ্ছে। কমিটি করতে গিয়ে তারা নিয়মের বরখেলাপ করেছেন ও অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছেন।

.

এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর ফটিকছড়ি উপজেলার পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর লোকজনকে মারধর ও হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি তখন অভিযোগ করে বলেন,ফটিকছড়ির সাংসদ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারসহ ভোট কেটে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।

জানা যায়, ৭৭৩ বর্গকিলোমিটারের ফটিকছড়ি উপজেলা দুটি থানা, দুটি পৌরসভা, ১৭টি ইউনিয়ন, ১০২টি মৌজা এবং ১৯৯টি গ্রামনিয়ে গঠিত। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় বিদ্যালয়ের চেয়ে মাদ্রাসা বেশি। এ উপজেলায় রয়েছে পাঁচটি কলেজ, দুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নয়টি বালিকা বিদ্যালয় ও চারটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অন্যদিকে রয়েছে ৪১টি কামিল, আলিম এবং দাখিল মাদ্রাসা। রয়েছে ৩০০টি ইবতেদায়ি ও কওমি মাদ্রাসা।

তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য সব প্রার্থী বর্তমানে মনে করেন, নৌকার ওপর ভর করে ফের পার পাওয়ার সুযোগ পাবে না তরীকত ফেডারেশন। আগামী নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের ঘরের মানুষই হবেন দলীয় সভাপতির পছন্দের প্রার্থী।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী জানান, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ফটিকছড়ির মানুষ তাকে এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান এম তৌহিদুল আলম বাবু বলেছেন, তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের নৈকট্যেও রয়েছেন তিনি। নিশ্চয়ই দল তার মূল্যায়ন করবে।

জানা যায়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। স্বতন্ত্র পদ থেকে মাহমুদ হাসান ১২ হাজার ৪৩৩ ভোট পান।

এদিকে আগামী নির্বাচনেও নিজের মনোনোয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদী বর্তমান সাংসদ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী আরো বলেন, আওয়ামীলীগের খুঁটির জোর ফটিকছড়িতে আছে নাকি? নিজেরাই নিজেদের দ্বন্দ্বে বিভক্ত। একজন আরেকজনের মুখ দেখতে পারেন না। তাই আমি ছাড়া এ ফটিকছড়ির হাল ধরার মতো নেই। আমরা সিটগুলো মোটামুটি ভাগ করেছি। আমার বিকল্প ফটিকছড়িতে কেউ নেই বলে জানান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তাই আমি এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত না। ফুরফুরে মেজাজে এলাকায় কাজ করছি। এটাই এখন বড় কথা।

তার কথার সূত্র ধরে জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ বর্তমানে দুভাগে বিভক্ত। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুল হক, নাজিম উদ্দিন মহুরী, সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম পিয়ারুল ইসলাম এক গ্রুপে রয়েছেন।

অন্য গ্রুপে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু তৈয়ব, উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু ও সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ভাই জেলা উত্তর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও বাণিজ্য সম্পাদক ফখরুল আনোয়ার মিলে আরেক গ্রুপে উপজেলা আওয়ামীলীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।  তবে গত নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটা ছিলো ভিন্ন।

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন প্রয়াত সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের একমাত্র কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এমপি কন্যা সনি রাজনীতির ক্যারিয়ারের প্রথম বর্ষপূতিতেই সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ পদে দাঁড়িঁয়ে গেলেও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনির এ মনোনয়ন পাওয়াটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেননি এ আসনের হেভিওয়েট অন্যান্য নেতারা। দীর্ঘকাল থেকে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পরও মনোনয়ন জুটেনি আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছিলো চাপা ক্ষোভ, অভিমান ও উত্তেজনা।

এর আগের নবম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত ১/১১’র দলের দুঃসময়ের নেতা ড.মাহমুদ হাসান গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের আশা থাকলেও তা আর পূরণ হয়নি। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন হাইকমান্ডের নির্দেশে। দশম সংসদ নির্বাচনে তাঁকে দলের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে এক রকম প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারক মহল।
শেষ পর্যন্ত এমপি হওয়ার স্বপ্ন পুরণের আগেই পরপারে চলে যান এ নেতা।

অন্যদিকে, ২০০৮ সালে মনোনীত এবং মহাজোট প্রার্থী¡ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম নির্বাচনে বিএনপি নেতা সালাহ্ উদ্দীন কাদেরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

এরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতার নিজ খেয়ালে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে সরাসরি সদস্য পদে নামিয়ে আনেন বলে অভিযোগ আছে। ভূজপুর তান্ডবসহ একাধিক কারণে আশাহত এটিএম পেয়ার সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের ব্যাপারে গত নির্বাচনে ছিলেন যথেষ্ট আশাবাদী।

তবে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে বলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা তাঁকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

অপরদিকে, গত নির্বাচনে প্রয়াত সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের ছোট ভাই জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল আনোয়ারও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সেই সময় দলের মনোনয়ন যুদ্ধে ফখরুল ও সনির মধ্যে নানা মতবিরোধ ও গ্রুপিং স্পষ্ট হয়ে উঠে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ফখরুল সনির দেখা হলেও, মুখে কথা হতো না।

এছাড়াও গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সভাপতি আফতাব উদ্দীন চৌধুরী ছাড়াও সর্বমোট ১৫ জন নেতা ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগের সমর্থন চেয়ে দলের মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছিলেন। এদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম.তৌহিদুল আলম বাবু, আমেরিকা প্রবাসী মুহাম্মদ শাহাজাহান, তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ ড.ফয়সাল কামাল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন।

তবে দলীয়ভাবে সনি মনোনোয়ন পেলেও মহাজোটের শরীক হিসেবে এক সপ্তাহ পরেই তরিকত ফেডারেশন থেকে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মনোনোয়ন পেয়ে যান। তার নামে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ হয়। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী তরীকতের প্রার্থীর সমর্থনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন সনি।

এরপর অবশ্য হাইকমান্ডের নির্দেশে গত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নির্বাচনী সমাবেশে এক মঞ্চে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্তি ভুলে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। দলীয় প্রতীক নৌকার জন্য এক মঞ্চে জড়ো হয়েছিলেন।

এদিকে বিএনপির প্রেক্ষাপট আওয়ামীলীগ থেকে ভিন্ন। টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। তবে যুদ্ধাপরাধের রায়ে সাকার ফাঁসি হওয়ার পর সবারই প্রশ্ন ছিলো সাকার সা¤্রাজ্যের হাল ধরবেন কে? তার রাজনৈতিক গ্রুপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কে আসছেন? কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর না মিললেও সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীই হাল ধরবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি- ২ আসন থেকে ধানের শীষের পক্ষ হয়ে লড়তে চান তিনি। এ আসনে সাকার পরিবার ছাড়াও মনোনোয়ন প্রত্যাশীর দলে আছেন দলের তথ্য ও গবেষণা সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী ও পেশাজীবী নেতা ড. খুরশিদ জামিল চৌধুরী।

এদিকে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির পর উত্তর জেলা বিএনপিতে মোড় নেয় অন্যদিকে। গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরও কোন্দল মিটেনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির। নানা ভূমিকায় বিতর্কিত গিকা চৌধুরীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীর বিরোধ তুঙ্গে উঠায় কার্যত দুই ভাগ হয়ে পড়েন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পাল্টাপাল্টি সভা, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে দলের হাইকমান্ড। কোন্দল মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে গিকা চৌধুরীকে সরিয়ে আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। আহ্বায়ক কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠনের পর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের। কিন্তু উপজেলা কমিটি গঠন শুরু হতেই নতুন নেতৃত্বের মধ্যেও বিরোধ প্রকাশ্য রূপ লাভ করে।

২০১৪ সালে জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের আগে ফটিকছড়ি আসন থেকে সাকা চৌধুরীর বিকল্প খুঁজেছে বিএনপি। বিশেষ করে সাকা চৌধুরী ২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের যে দুটি আসনে অংশ নেন, সে দুটি আসনে তার অনুপস্থিতি অনুভব করে দলটি। তখন সাকার অনুপস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে আসন দুটিতে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী ওই দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। এ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন কারা।

তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে তার মনোনোয়ন প্রাপ্তির কথা জানতে সাকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে নির্বাচন করেন সাকা চৌধুরী। ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে পরাজিত করে জয় পেলেও রাঙ্গুনিয়ায় বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে পরাজিত হন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন সাকার ছোট ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরী। ফজলে করিম চৌধুরী হলেন সাকা চৌধুরীর চাচাতো ভাই। ২০০১ সালের নির্বাচনেও ফজলে করিমের কাছে হেরেছিলেন গিকা।

এদিকে একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী। তিনি এ উপজেলার বাসিন্দা। পেশাজীবি এ নেতা আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে চান।

এবার ফটিকছড়ি আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তদবীর করতে পারেন পেশাজীবি নেতা ডা: খুরশিদ জামিল চৌধুরী। তাকে বর্তমানে এলাকার মিটিং মিছিলে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফটিকছড়ি এলাকাটি বিএনপি’র নিরাপদ ও শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে খ্যাত। এ আসন থেকে প্রথমে প্রবীণ রাজনীতিবিদ জামাল উদ্দীন আহমদ জয়লাভ করেন। সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৯৬ সালে দলবদল করে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৫ ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয় লাভ করেন।

কাদের গণি ফটিকছড়ি উপজেলার দমদমা গ্রামের বাসিন্দা। উপমহাদেশের অন্যতম কামেল অলি হজরত শাহ সুফি সৈয়দ আবদুল গনি চৌধুরীর দৌহিত্র তিনি। নির্বাচনে মনোনোয়ন প্রত্যাশী হওয়া প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, তিনি মনোনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে ফটিকছড়িবাসীর জন্য অতীতের সাংসদরা যা করতে পারেননি, তাই করবেন।

কাদের গণি চৌধুরী আরো বলেন, ফটিকছড়িতে যোগ্য নেতার সংকট অনেক দিনের। এজন্যই এখানকার মানুষ শিক্ষায়, চিকিৎসায় ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি উড়ে আসা কাউকে আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী করা হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও আন্দোলন-সংগ্রামে ফটিকছড়িবাসীর সঙ্গে থাকা নেতাকেই মূল্যায়ন করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি আস্থা রাখলে এ আসনে নির্বাচিত হতে পারবেন বলে মনে করছেন কাদের গণি চৌধুরী।

ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী দলের উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) চমেক কলেজ শাখার সভাপতি এবং বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীও। তিনি বলেন, ফটিকছড়ি একটি অবহেলিত জনপদ। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি এখানে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পেলে এখানে বিজয়ী হবে ধানের শীষ।

ধানের শীষের প্রার্থী হতে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজীও। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত থাকলেও তিনি দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশে ছাড় দিয়েছিলেন। এবার নিশ্চয়ই খালেদা জিয়া তার ওই ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন।

আগামীকাল চোখ রাখুন নির্বাচনী হালচাল-চট্টগ্রাম আসন-৩ (সন্দ্বীপ)