অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“বাবার ছায়াসঙ্গী যেন ছেলে নওফেল”

0

“বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন পুত্র। রাজনীতির মাঠে ঘাট চষে বেড়াতে শুরু করেছেন বাবার মতোই।  সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের সন্তানরা আগামী একাদশ নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী।  কিন্তু বাবার মত কি সন্তানদের মধ্যে এলাকাবাসী দক্ষ রাজনীতিবিদের আভাস পেয়েছেন ? নাকি পাননি।  তারই বিস্তারিত বর্ণনা থাকছে ‘বাপ কা বেটা’ নতুন সিরিজে।  পাঠক ডট নিউজে প্রকাশিত হয়েছে আজ দ্বিতীয় পর্ব”

.

নগরীর ২ নং গেট থেকে প্রায় আধাকিলেমিটার দূরে ফার্মেসীর দোকান ব্যবসায়ী নূরুল আলমের। বাসা মেয়র গলিতে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখে এসেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। বাবা বেঁচে থাকতে তার হাত ধরে কতদিন দুপুরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে খেতে গেছেন, হিসাব নেই, জানান নূরুল আলম। বড় হওয়ার পর বিবাহিত, সংসার, ব্যবসায়ী জীবনেও চৌধুরীর বাসায় যেতে ভুলতেন না তিনি। মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে চিনতেন। দেখলেই ডেকে কাছে বসাতেন। তার মৃত্যুর পর নওফেলের কাছেও একই রকম ভালোবাসার পরশ পাই। নওফেল কত বড় মানুষ! কত পড়াশুনা! কিন্তু বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওযার দিন মনে হয়েছিলো, মাথার উপর থেকে ¯েœহ, ভালোবাসার ছায়াটা সরে গেলো। কিন্তু তার ছেলে নওফেল যেন আজ বাবারই ছায়াসঙ্গী।

শুধু নূরুল আলম নয়, নওফেলকে নিয়ে মন্তব্য মেয়র গলির এরকম অনেকেরই। মেয়রগলি পেরিয়ে এরকমই কথা ভেসে বেড়ায় চট্টগ্রাম নগরীর আনাচে কানাচে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামবাসীর কাছে তার বাবার মতোই গণমানুষের নেতা হয়ে উঠবেন, এমনটি আশা নগরবাসীর। তার মিশুক মনোভাব, রাজনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করবেন, এমন মন্তব্যও তাদের।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ার পর নারায়নগঞ্জের নির্বাচনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে নওফেলের প্রশংসা করে এসেছেন। নওফেল ২০১৪ সালে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্যও।

জানা গেছে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বাবা মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। ওই প্রথম রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দেখা যায় লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা এই নওফেলকে। ২০১০ সালেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিবিদ হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।  সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন নওফেলও। ওই সভাতেই চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের তিন বারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন। গণভবনের ওই বৈঠকের আগে একান্ত আলাপে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ছেলে নওফেলের কাছে জানতে চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই ‘পরবর্তীতে’ নওফেলকে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তারই প্রেক্ষিতে আশা করছে নগরবাসী, নওফেল আগামী একাদশ নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়ন পাবেন।

নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সদস্য ছিলাম। সেই কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এছাড়াও একই সময় থেকেই আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগেরও সদস্য।’

১৯৯৪ সাল টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তারা বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী। দলের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ পাওয়াটাকে মহিবুল ভাবেন তৃণমূলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পুরস্কার।

তবে উচ্চশিক্ষিত এই তরুন আইনজীবীর দলে অন্তভুক্ত হওয়ার ঘটনাকে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হিসাবে মনে করেন। অনেকে মনে করেন, পেশী শক্তির বিপরীতে মেধা ও তারুন্য নির্ভর সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রতিষ্টা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। যার বহি:প্রকাশ হিসাবে ব্যারিষ্টার নওফেলের মত উচ্চশিক্ষিত তরুনদের দলের মূল সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত করছেন তিনি।

১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার নওফেল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দুই দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্পাদকম-লীর আংশিক নাম ঘোষণা করে। এবারের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুই নতুন মুখের একজন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অন্যজন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক শামীম।

তবে এটাও রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, পিতা এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর নির্বাচনে অদৃশ্য শক্তি হিসাবে কাজ করে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সুনজর অর্জন করেছিলেন ব্যারিষ্টার নওফেল।

নির্বাচনী প্রচারনায় জনসম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে অধিক জোর দিয়ে বিএনপি শাসনামলে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী চসিক পরিচালনায় পিতা মহিউদ্দীনের পেছনে শক্তি যুগাতেন তিনি। জনগনের মন জয়ের উদ্দেশ্য চসিককে জনবান্ধব ও জনকল্যানকর কাজের ধারনা দিয়ে নিরবে নিভৃতে কাজ করে গিয়েছিলেন এই তরুন আওয়ামী লীগ নেতা। আর এই বিষয়গুলো ‘সেসময় দলীয় সভানেত্রীর নজরে ছিল যা বর্তমানে মহিবুল হাসান নওফেলের সাংগঠনিক পদে মূল্যায়নের নেপথ্যে কাজ করেছে’ বলে মনে করেন অনেকে।

বিগত চসিক নির্বাচনে পিতা মহিউদ্দীন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ঘটনায় নেতা কর্মীদের চরম অসন্তোষের ঘটনায় দলীয় হাইকমান্ড বিব্রত হলে ডাক পড়ে ব্যারিষ্টার নওফেলের। দলীয় এসাইনমেন্ট পেয়ে চট্টগ্রামে এসে নিজের বাবার রাজনৈতিক বলয়ের নেতা কর্মী সহচরদের অভিমান ভাঙিয়ে নির্বাচনমুখী করার কাজেও সফলতা পেয়েছিলেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিদেশ গ্রহণ করা উচ্চশিক্ষা ও লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স স্নাতক করা মহিবুলের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ১/১১ সময়কালীন লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশী আইনজীবী ও অর্থনীতিবীদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরীর ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে অবগত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী এমনটা মনে করছেন অনেকে।

সদা হাস্যউজ্জল, সাদাসিধে জীবন চরিত্রের অধিকারী এই তরুন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে আগামী নির্বাচনে দেশের ৬০ ভাগ তরুন প্রজন্মের ভোটারকে আকৃষ্ট করার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করার নিমিত্তে মূলত সংগঠনের দায়িত্বে আনা হয়েছে বলে, ইঙ্গিত মিলেছিল বিগত জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তৃতায়। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্তব্য করেছেন, ‘তৃণমূলের রাজনীতি এবং তৃণমূল নির্বাচনে দলকে বারবার জয় এনে দেওয়ার পুরস্কার হচ্ছে আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রাপ্তি। যেহেতু আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির মূল লক্ষ্য আগামীর নির্বাচন তাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাকে মূল্যায়ন করেছে।’

নওফেল ঢাকায় অবস্থানের কারনে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় তার সাথে। আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মপন্থা ও বাবার মতো নগরবাসীর মনে জায়গা করে নিতে নিজেকে তৈরীর কৌশল হিসেবে এই তরুণ নেতা জানান, ‘আমি সবসময়ই চেষ্টা করি বাবার আদর্শকে নিজের মধ্যে ধারন করতে। তার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাকে বলতেন, তুমি যদি তোমার আভিজাত্য, মনের অহংবোধ ঝেড়ে না ফেলে সাধারন মানুষের কাতারে মিশতে না পারো, তবে তুমি গণমানুষের নেতা হতে পারবে না।’

নওফেল আরো জানান, বাবা বলতেন, নেতা সবাই হতে পারে, কিন্তু গণমানুষের নেতা সবাই হতে পারে না। তাই আমি চেষ্টা করি তৃণমুল রাজনীতি থেকে কিছু শিখতে। প্রতিমহূর্তই শিখছি।

বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করে এই গনমানুষের কাতারে যেতে নিজের ভিতর টানাপোড়ন হয় কিনা? এ প্রশ্নের উওরে নওফেল জানান, কখনোই না। আমার শিক্ষাজীবন, বেড়ে উঠা আমার একটা আলাদা জীবন। আমার রাজনৈতিক জীবন আরেক জীবন। আমি বঙ্গবন্ধুর চেতনায় বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজেকে নির্মান। আর বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত। ’

নওফেল আরো জানান, ‘চট্টগ্রামে আসলে আমি সাধারন মানুষের ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে যাই। মুঠোফোনের প্রতিটি কল আমি রিসিভ করার চেষ্টা করি। সাধারন মানুষকে সমস্যার কথা আমাকে জানায়। কিন্তু আমার তো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তাই বাবার মতো তাদের উপকার করা আমার হয়ে উঠে না। তখন মনো:কষ্টে পড়ি। তাই ভবিষ্যতে যদি সেরকম ক্ষমতা পাই, তবে সাধারন মানুষের সেবা করার জন্য এই আমি নিজেকে উৎসর্গ করব। ’

আগামী একাদশ নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী কিনা এর জবাবে নওফল জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন আমাকে মনোনয়ন দেন, অবশ্যই আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। সেটা দেশের যে প্রান্তেই হোক।’  মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকে আজ অবধিও প্রিয় নেতাকে স্মরণে রেখেছেন নগরবাসী।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই প্রিয় নেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

শুক্রবার বাদ আসর লালদীঘি ময়দানে মহিউদ্দিন চৌধুরী জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আজ শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার অসুস্থ হলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

১১ নভেম্বর রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করায় মহিউদ্দিন চৌধুরীকে চট্টগ্রামের মেহেদিবাগ ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে একরাত রাখার পর ১২ নভেম্বর দুপুরে তাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৬ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের অ্যাপোলো গিলনিগ্যালস হসপিটালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর এনজিওগ্রাম ও হার্টের দুটি ব্লকে রিং বসানো হয়। ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ২৬ নভেম্বর তিনি ঢাকায় ফিরে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ১২ ডিসেম্বর তিনি চট্টগ্রাম যান। চট্টগ্রামে ফেরার দুই দিনের মাথায় না ফেরার দেশে চলে যান চট্টগ্রামের সাবেক এই নগরপিতা।

১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দীন চৌধুরী। তিনি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বিএনপির একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হন। প্রায় ১৭ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তিনি। রাজনীতি ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য চট্টগ্রামবাসী তাকে চট্টল বীর হিসেবে জানে।

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত এটাই, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী একেবারে তৃণমূল উঠে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অবস্থান গড়ে তুলেছিলেন।

প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়ে যুক্ত হন ছাত্রলীগের সাথে। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেসময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সেখান পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

অতীত প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এপর্যায়ে এসেছেন। তিনি শ্রমজীবি মানুষের সাথে রাজনীতি করেছেন। তিনি সিটি কলেজের ছাত্র থাকার সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শ্রমিক সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মেয়র থাকাকালীন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর বেডরুম পর্যন্ত সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ৯৬-এ তিনি একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। মুহুর্তের মধ্যে সারা চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছিল। প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল।’

মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রমিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

শুধু চট্টগ্রামে নয় পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত ওঠেন ১৯৯৪ সালে, যখন তিনি প্রথমবারের মত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। সেসময় তাঁর সাথে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন মঞ্জুর আলম, যিনি পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছিলেন। মঞ্জুর আলমের দৃষ্টিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনীতির পাশাপাশি মেয়র হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমসাময়িক অনেক রাজনীতিবিদ মন্ত্রীত্ব কিংবা দলের সিনিয়র নেতার পদ পেলেও তিনি সবসময় নিজেকে চট্টগ্রামের রাজনীতির সাথেই যুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন।

গতকাল প্রকাশিত- ‘বাপের মতন পুত ন’