অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অতিরিক্ত ভয়-আতঙ্কে কী হয় জানেন?

0

এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা মেঘ দেখলেও ভয় পান। খুব অদ্ভুত কিছু বিষয়কে ভয় পান, এমন মানুষও নেহায়েত কম নয়। শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ তারা এটা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন। অথচ এগুলোই অন্যদের কাছে হয়তো ভালো লাগা বা আনন্দ উপভোগের বিষয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, একে ফোবিয়া বলা হয়।

ফোবিয়া এক ধরনের মানসিক ব্যাধি (মেন্টাল ডিসঅর্ডার)। এমন বেশ কিছু ফোবিয়া আছে, যা অজান্তেই আমাদের মনে বাসা বাঁধে, বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। আজ তেমনই কিছু অদ্ভুত ফোবিয়ার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—

ক্লস্ট্রোফোবিয়া (বদ্ধ জায়গার-ভীতি): ক্লস্ট্রোফোবিয়ায় যারা ভোগেন তাদের সব সময় মনে হয় ছোট কোনো ঘরে তারা আটকে যাবেন বা দম বন্ধ হয়ে যাবেন। জানালা খোলা রাখেন। অনেক সময় তারা ঘরের দরজা বন্ধ রাখতেও ভয় পান। অপরিচিত জায়গার কোনো ঘর হলে এ ভয় আরো বেশি হয়। এরা লিফটে উঠতেও ভয় পান।

অ্যাক্রোফোবিয়া (উচ্চতা-ভীতি): উঁচু স্থানে উঠতে ভয় পান বা ওপর থেকে নিচে তাকাতে পারেন না। যাদের এ ধরনের ভীতি রয়েছে তারা বিনোদনকেন্দ্রের বিভিন্ন রাইডে উঠতেও ভয় পান। অতিমাত্রায় এ ভীতি থাকলে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যাকুয়াফোবিয়া (পানি-ভীতি): এ ধরনের ভীতিতে যাঁরা ভোগেন তারা সমুদ্রে যাত্রা করতে পারেন না, সমুদ্রে গোসলও করতে পারেন না। নদীতেও তাদের সমান ভীতি। এমনকি অনেকে বাথটাবের পানিকেও ভয় পান।

নেফোফোবিয়া (মেঘ-ভীতি): নেফোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মেঘের ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কিত থাকেন। এমনকি তারা আকাশের দিকে তাকাতেও ভয় পান।

স্পেকট্রোফোবিয়া (আয়না-ভীতি): স্পেকট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকেও ভীষণ ভয় পান। এই ফোবিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিসত্ত্বা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন বা নিজের ত্বকের সামান্য দাগও সহ্য করতে পারেন না। অতীতের কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনা থেকেও অনেকের আয়না-ভীতি তৈরি হতে পারে।

অ্যান্থোফোবিয়া (ফুল-ভীতি): শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পৃথিবীতে কিছু মানুষ ফুলের ভয়ে সারাক্ষণ আতঙ্কিত থাকেন। এই ধরনের মানুষ ফুল দেখলে বা ফুলের কাছাকাছি থাকলে এক ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করেন। অনেকে আবার পুরো ফুলটাকে ভয় না পেয়ে ফুলের বিশেষ কোনো অংশ যেমন পাপড়ি বা রেণুকে ভয় পান।

হেডোনোফোবিয়া (আনন্দ-ভীতি): পৃথিবীর এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের আনন্দেও ভীতি কাজ করে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। এ ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি উপভোগ্য মূহূর্তগুলোকে ভয় পান। তারা আনন্দ পেতে ও প্রকাশ করতে ভয় পান। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সমাজের সবার থেকে আলাদা থাকতে পছন্দ করেন। তাই তাদের স্বাভাবিক সামাজিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

টেলিফোবিয়া (টেলিফোন-ভীতি): ১৯৯৩ সালে বৃটেনের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে সে দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে টেলিফোন-ভীতি (টেলিফোবিয়া) আছে। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ফোন রিসিভ করতে বা ফোনে কথা বলতে ভয় পান এবং এক ধরনের তীব্র মানসিক চাপ অনুভব করেন। তারা ফোনে কি বলবেন তা বুঝে পান না এবং এক ধরনের অস্বস্তিতে ভোগেন। তারা সব সময়েই ফোন এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন।

অ্যাবলাটোফোবিয়া (গোসল-ভীতি): এই ধরনের ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি গোসল করতে ভয় পান। তবে এই ফোবিয়া হাইড্রোফোবিয়া (পানি-ভীতি) থেকে অনেকটাই আলাদা। এই ফোবিয়ার আক্রান্ত ব্যক্তি পানি ভয় পান না। তবে গোসল করতে ভয় পান। গোসল সম্পর্কিত অতীতে কোনো খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলে সাধারণত এই ধরনের ফোবিয়া তৈরি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করতে বলা হলে অতিরিক্ত ঘাম, অচেতনতা, খিঁচুনি, বমি ভাব অথবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

হেলিওফোবিয়া (সূর্যের আলো ভীতি): হেলওফোবিয়া হলো সূর্য-রশ্মি ভীতি। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তি সূর্য-রশ্মিকে ভয় পান। স্কিন ক্যান্সার বা রোদে পুড়ে যাওয়ার ভয় থেকেও হেলওফোবিয়ার সৃষ্টি হয়। দিনের বেলাও তারা ঘর অন্ধকার করে রাখেন এবং কখনোই সূর্যের আলোতে বাইরে বের হতে চান না। সামান্য সূর্য-রশ্মি ঘরে ঢুকলেও তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

যেকোনো ধরনের ফোবিয়াই একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। তাই যেকোনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবহেলা না করে মানসিকভাবে তাকে সহায়তা করা উচিত।