অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

৯ মামলায় জামিন পেলেন খালেদা

0

Khaleda-court-1রাষ্ট্রদ্রোহ ও দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা এক ডজন মামলার মধ্যে নয়টিতে জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার (১০ আগস্ট) আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তার জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা।

রাজধানীর দারুস সালাম থানার নাশকতার নয়টি মামলার মধ্যে আটটি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তিনি জামিন পান।

তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে আগামী ১০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

এ বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, নাশকতার অভিযোগের দারুস সালাম থানায় দায়ের করা নয়টি মামলার মধ্যে আটটির অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় এবং মামলাগুলোতে তাকে জামিন দেন বিজ্ঞ আদালত। একই সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অপরাধ আমলে নিয়ে আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ আগামী ১০ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দিন খালেদা জিয়াকে অবশ্যই আদালতে হাজিরা দিতে হবে।

এদিকে, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা ও দারুস সালাম থানার নাশকতার আরেকটি মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) যাওয়ার কথা রয়েছে তার। এ ছাড়া পুরান ঢাকার রেবুতি ম্যানসনে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দেবেন তিনি।

দারুস সালাম থানার মামলাগুলোর মধ্যে গত ১১ মে দারুস সালাম থানার ৪(৩)১৫ এবং ৮(২) ১৫ নম্বরের দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ৫১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

গত ২৬ মে ৬(২)১৫ নম্বর মামলায় খালেদা জিয়াসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। পরে ২৯ মে খালেদা জিয়াসহ ৫১ আসামির বিরুদ্ধে আরও দুইটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

সর্বশেষ ৬ জুন ২৯(২)১৫, ৫(২)১৫, ৩১(২)১৫ ও ৬২(১)১৫ নম্বরের আরও চারটি মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১০৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। সবগুলো মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’

এরপর ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’মনোভাব পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান তিনি।

২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদার আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী ১২৩ এর ‘ক’, ১২৪ এর ‘ক’ ও ৫০৫ ধারায় পিটিশন মামলা করেন। ৩ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত। ৫ এপ্রিল এ মামলায় তিনি আত্নসমর্পণ করে জানিন নেন।

এ ছাড়া বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।

এদিকে নাইকো মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।