অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রাজনৈতিক বিবেচনায় খালাস পেয়ে যাচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বখতিয়ার

0
সন্ত্রাসী বখতিয়ার।

বারবার রাজনৈতিক বিবেচনায় পার পেয়ে যাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী বখতিয়ার হোসেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাবা-ছেলেকে হত্যাসহ ২৩টি মামলা। বখতিয়ার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ডাকাতি,অপহরণ,হত্যার চেষ্টা,ধর্ষণ ও একাধিক খুনের মামলার আসামী হলেও সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়েই যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে রাঙ্গুনিয়ার ননাইয়া হত্যা মামলা ও রাঙ্গুনিয়া থানার একটি অস্ত্র মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজের নাম স্বরাস্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সুপারিশে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

মামলা থেকে সন্ত্রাসী বখতেয়ারে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্বরাস্ট্রমন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা ছোবহান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরও উচ্চ আদালতে মামলাটি আপিল করে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে বখতিয়ার। কোন অদৃশ্যের ইশারায় এই মামলার আপিল শুনানি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।

খোঁজ নিয়ে যায়, আশির দশকে বখতিয়ারের মা-বাবা ছোট্ট একটি দোকানে মুড়ি আর মুয়া বিক্রি করতো। বখতিয়ার ১৯৮৮ সালে আয়ুর বাহিনীতে যোগ দিয়ে পরের বছরে মেহেরুজ্জানকে খুন করে। পিতাকে হত্যা করার পর ২০০২ সালে মেহেরুজ্জনের ছেলে ননাইয়াকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। এরপর আগে ১৯৯১সালে মুক্তিযোদ্ধা সোবহানকে খুন করে। সেই মামলায় বখতিয়ারের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০১৪ সালে বখতিয়ার যুবলীগ কর্মী মাহবুব ও আমিনকে অপহরণ করে ঠান্ডা ছড়ি চা বাগানে নিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মাহবুবকে হত্যা করে। আমিন এখনো পঙ্গু অবস্থায় জীবন যাপন করছে।

গত বছরের শেষের দিকে বখতিয়ার এর একটি অডিও ফাঁস হয়  যার কারনে সরকারী দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

জানা যায়, বখতিয়ার এর বিরুদ্ধে রয়েছে রয়েছে প্রায় ১৫টি ডাকাতির মামলা। বখতিয়ার এর বিরুদ্ধে সোনার গাঁও এর কাসেম ডাক্তারের ঘর ডাকাতি, পেয়ার মোহাম্মদ চৌধুরীর বাড়ির আনোয়ারুল আজিমের ঘর ডাকাতি, গাবতল ডাকাতি, পারুয়া ডাকাতি, নুরুল ইসলাম হাজির ঘর ডাকাতি অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে সন্ত্রাসী বখতিয়ার ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ নেতা দুলাল চেয়ারম্যানের দোকান ভাংচুর করে,দুলাল মামলা করলে বখতিয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে পরের দিন দোকানে ফ্রীজ,জেনেটার, চেয়ার টেবিল অস্ত্রের মুখে ট্রাকে করে নিয়ে যয়। এই সেই মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন। ২০১৪ সালে বখতিয়ার লেদু সওদাগরে প্রতিবন্ধি ছেলে লোকমানকে জিম্মি করে ২৫ লক্ষ টাকা আদায় করে।

বখতিয়ার ২০০৪ সালের আগষ্ট মাসের তারিখ রাঙ্গুনিয়া এলাকা থেকে একটি অত্যধুনিক এমএমজিসহ গ্রেফতার হয়। তার আগের দিন তার এক সহযোগী অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হলেও ২০১০ সালে এই মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়।

রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ছিল-০৫(০৮)২০০৪, জি.আর মামলা ১২৩/২০০৪। মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আইন শাখা-১,কর্তৃক স্বম (আইন-১)/মামলা প্রত্যাহার- ৬/২০১০(১৭ তম সঅয় অনুমোদন হয়। মামলাটি ২০১০ সালের ১৭ ই জুন এবং চট্টগ্রাম জলো ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম এর স্বারক নং –চট্ট: জে,ম্যা,কার্যা/জে,এম/মামলা প্রত্যা/৪-২৩/২০০৯-২৩৩২,তারিখ ১২/০৭/২০১০ ইং মূলে তার মামলাটি প্রত্যাহার আবেদন জানানো হয়। পরবর্তী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।

একইভাবে পূর্ব শক্রতার জের ধরে ২০০২ সালে ননাইয়াকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেয় সৈনিক লীগের এই নেতা।

জানা যায়, বখতিয়ার একটি অস্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসলেও বর্তমানে তার রয়েছে কোটি কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, বালুছড়া,অক্সিজেন তার রয়েছে একাধিক জায়গা।ষোলশহর ২নং গেইটে রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট বাড়ি। তার ৪২লক্ষ টাকায় ক্রয় করা একটি ব্যাক্তিগত গাড়ী রয়েছে। বখতিয়ার এর রয়েছে দু’টি ২টি ব্রিকফিল্ড ১টি জামায়াত নেতা খালেদ বাচ্চুর সাথে যার নাম এ.কে.বি আরেকটি মগাছড়ি মুল মালিককে সরিয়ে বখতিয়ার জোরকরে দখল করে সেটির নাম ডি.এন.বি।

সেপ্টেম্বর মাসের ২৭তারিখ বখতিয়ারকে রাঙ্গুনিয়া থেকে আবারও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর এ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বখতিয়ার এর নির্যাতনের শিকার একাধিক ব্যাক্তি পাঠক ডট নিউজকে বলেন, বখতিয়ার এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছে। সে এখন জেল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। সে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব মামলা থেকে অব্যাহিত পাওয়ার চেষ্টা করছে।

বখতিয়ার এর হাতে নিহত মেহেরুজ্জান ও তার ছেলে ননাইয়াকে হত্যার ঘটনায় বিচার না পাওয়ার কথা জানিয়ে ননাইয়ার ভাই নুরু পাঠক ডট নিউজকে বলেন, বখতিয়ার ৩০ বছর আগে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যার বিচার পাওয়ার আগেই আমার ভাই ননাইয়াকে বখতিয়ার প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। আমার ভাইকে হত্যার প্রধান আসামী বখতিয়া রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে হত্যা মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাবা হত্যা বিচার পাইনি ভাই হত্যার বিচার পাইনি।

রাঙ্গুনিয়ার একাধিক ব্যাক্তি জানায়, সন্ত্রাসী বখতিয়ার এর রয়েছে বিশাল অস্ত্রের ভান্ডারসহ সন্ত্রাসী বাহিনী। সে কারাগারে থেকে বাহিরের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে। বখতিয়ার এর সহযোগীদের গ্রেফতারসহ তার নিয়ন্ত্রণে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে।

সন্ত্রাসী বখতিয়ার এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দায়ের করা মামলার মধ্যে রয়েছে, রাঙ্গুনিয়া থানার জি.আর মামলা নং ৩৯/২০১৪, রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং- ৩(৩)৯৪,ধারা ৩৭৬ ধারা সি/এস। রাঙ্গুনিযা থানা মামলা নং-৬(২)৯১ ধারা ৪৪৮/৩২৪/৩৮০/৪২৭ ধারা সি/এস। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ৩(৩)৯১ ধারা ১৪৩/৩৪২/৩২৬(ক)/৩৭৯/২২৩ ধারা সি/এস। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং- ১১(১)৮৮ ধারা ১৪৭/১৪৯/৩২৬/৩২৫/৩০৭/৩০২ ধারা সি/এস। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং- ৩(৯)৯৪ ধারা ৩৯৫/৩৯৭/৪১২ ধারা সি/এস। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ৭(৫)০২ ধারা ৩০২/৩৪ দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ৫(৮)০৪ ধারা অস্ত্র আইনের ১৯ক/১৯(চ)সি/এস। বায়েজিদ থানা মামলা নং- ৩,তাং ৬/৮/০৪ ধারা ১৯ক অস্ত্র আইন। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ১(১)৯১ ধারা ৩৬৪/৩০২/২০১/১০৯/৩৪ দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ০৫/১২৩ অস্ত্র আইনের ১৯ক/১৯চ। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ১৮/৯১ ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং-২১(১১)১৪ জি.আর নং ২১২/১৪,ধারা ৩০২/৩৪ দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ১৫(৭)০৪,জি আর ১১৮/০৪ এষ্ট্রে মামলা নং ৩৮৪/২০০৫ । জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,চট্টগ্রাম সি,আর মামলা নং ২৩/২০১৭ ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ১৩/১০১ ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৪২৭/৩৮৫/৫০৬(২) দ: বি: । রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ২১/১০ ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দ: বি : । এষ্ট্রে মামলা নং ২০৭/১৯৯২ ইং ছোবহান হত্যা মামলা। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ১০/১১/৮১ ধারা ৩২৪/৩৪,জি আর ১০৬/৮৯।রাঙ্গুনিয়া মামলা নং ১৪.১৯০ ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৫০৬/৩৪ দ: বি: । এষ্ট্রে মামলা নং ২৩৪/০৪ রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ৩(৮)০৪,জি.আর মামলা নং ৫৪৯/০৪ অস্ত্র আইন ১৮৭৮ এর ১৯ ধারা। রাঙ্গুনিয়া থানা মামলা নং ০৭/৬৩ ধারা -৩০২/১০৯/৩৪ দ: বি:।