অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফানুস কেন উড়ানো হয়?

0
.

আজ প্রবারনা উৎসব। সকলে এই উৎসবের জন্য উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করে থাকি। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন কেন এই প্রবারনা উৎসব।

সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগঃ

চারটি নিমিত্ত দর্শন করে রাজকুমার সিদ্ধার্থ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সংসার ত্যাগ করে ছিলেন। তাঁর নবজাত পুত্র রাহুলা আর প্রিয়তমা স্ত্রী য়শোধরাকে ত্যাগ করাকালে অগণিত অগণিত দেব ব্রক্ষ্মা এই মহাভিনিষ্ক্রিমণ অর্থাৎ সংসার ত্যাগের দৃশ্য অবলোকন করার অপেক্ষায় ছিলেন। আকাশে বাতাসে বিজয়ের সুর ধ্বনিত হয়েছিল। অথচ পৃথিবীর কোন মানুষ তাঁর এই বিদায় ও সংসার ত্যাগের কথা বুঝতেই পারেননি। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সংসার ত্যাগ করার সময় দেবতা ব্রক্ষ্মাদের মহানুভবে তিনি বহুদূর চলে যেতে সক্ষম হন।অবশেষে ভোরবেলায় পৌঁছলেন একটি নদীর তীরে। তিনি তাঁর জন্মসঙ্গী ছন্দককে জিজ্ঞাসা করলেন,

এই নদীর নাম কি?
ছন্দক বললো, মহারাজ, এই নদীর নাম অনোমা।

বোধিসত্ত্ব সিদ্ধার্থ অনোমা নামকে নিমিত্তরূপে গ্রহণ করে ভাবলেন, অ+নোমা। নোমা মানে মন্দ আ মানে নয়। অর্থাৎ মন্দ নয়। সুতরাং ইহা মঙ্গল, তাই মঙ্গলজনক স্থানে সংসার ত্যাগ করা বিধেয়। অতপর শরীরের সব আভরণ খুলে ফেললেন এবং তাঁর ক্ষুরধার তলোয়ার দিয়ে বাম হাতে তাঁর চুল ধরে ডান হাত দিয়ে তা ছেদন করে অধিষ্ঠান করলেন, আমার এই কর্তিত চুল আমি আকাশে নিক্ষেপ করে দেবো, আমি জন্ম-জন্মান্তর দশটি পারমী, দশটি উপ-পারমী, দশটি পরমার্থ পারমী পূরণ করে যদি প্রকৃত বুদ্ধাংকুর হয়ে এই জন্মে বুদ্ধ হতে পারি, তাহলে আমার চুল আকাশে নিক্ষেপ করা হলে আকাশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকুক, মাটিতে আর পতিত না হোক। এই অধিষ্ঠান করে তিনি কর্তিত চুল আকাশে নিক্ষেপ করে দিলেন। বোধিসত্ত্বের মনের কথা জানতেন দেবরাজ ইন্দ্র। তিনি একটা স্বর্ণের ঝুড়ি করে নিয়ে গেলেন আনন্দমনে তাবতিংস স্বর্গে।

তিনি সেই চুলকে নিয়ে তাবতিংস স্বর্গে একটি জাদী তৈরি করলেন। বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির আগে যেই জাদী নির্মিত হয়, সেই জাদী হলো সিদ্ধার্থের এই চুল সন্নিবেশিত জাদী নাম তার চুলামনি জাদী। চুলামনি জাদী এখনো স্বর্গে দেব ব্রক্ষ্মাগণ কর্তৃক পূজিত হচ্ছে। সিদ্ধার্থের সংসার ত্যাগের কথা জানতে পেরে অতীত জন্মের ব্রক্ষ্মলোকের ঘটিকার ব্রক্ষ্মা সিদ্ধার্থকে অষ্টপরিষ্কার দান করার উদ্দেশ্যে অষ্টপরিষ্কার নিয়ে এসেছিলেন অনোমা নদীর তীরে। ঘটিকার ব্রক্ষ্মা সিদ্ধার্থকে অষ্টপরিষ্কার দান করলেন এবং সিদ্ধার্থের মহামূল্যবান রাজাভরণ বিনীতভাবে চেয়ে নিলেন। এই রাজাভরণ তিনি ব্রক্ষ্মলোকে নিয়ে যান এবং রাজাভরণ স্থাপন করে একটি জাদী নির্মাণ করেন। সেই জাদীর নাম দুস্স জাদী। ইহাই গৌতম বুদ্ধের শাসনামলের সর্বপ্রথম পরিভোগ জাদী যা বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির ছয় বৎসর পূর্ব হতে ব্রক্ষ্মলোকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ব্রক্ষ্মাগণের পূজা প্রাপ্ত হয়ে অদ্যাবধি বিরাজ করছে।

এবার বলি আমরা কেন প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ঘটা করে ফানুস উড়াই? স্বর্গের দেবতারা দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত চুলামনি জাদীকে এখনো পূজা করেন বিধায় আমরাও প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ফানুস উড়িয়ে পূজা করি। ফানুস উড়ানোর অর্থ ঐ চুলামনি জাদীর পূজা করা। প্রদীপ পূজা করা। আমরা বুদ্ধকে প্রদীপ পূজা করতে পারি খুব সহজেই কিন্তু স্বর্গের চুলামনি জাদীর উদ্দেশ্যে ফানুস উড়িয়ে আকাশে তুলে পূজা করি। এই হচ্ছে ফানুস উড়ানোর কাহিনী। আমাদের এখন বিভিন্ন পার্র্বণে ফানুস উড়ানো ফ্যাশন হয়ে গেছে।

আমরা জেনে না জেনে এর অপব্যবহার করছি। যে কোন কালচারাল প্রোগ্রামেও ফানুস উড়িয়ে থাকি। এসব বন্ধ করা প্রয়োজন। ধর্মকে অতীব গারবতার সহিত সম্মান করা খুবই প্রয়োজন। নাহলে দেশ ও জাতির উন্নতি হবে কিভাবে? সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এবং সকলের জয়মঙ্গল হোক।

-লেখকঃ ইলা মুৎসুদ্দী