অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সামনে নির্বাচন কিন্তু বাতাসে ভিন্ন আওয়াজ

0
.

শহর থেকে গ্রাম, পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত চারদিকে টেনশন, উদ্বেগ, আতংক- কী ঘটতে যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও প্রতিনিয়ত দেশের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যদিও ইতিমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুও করে দিয়েছে, কিন্তু তারপরও সংশয় কাটছে না। সবার মনেই একই প্রশ্ন- নির্বাচন আদৌ হবে কী? কোন্ দিকে যাচ্ছে দেশ? সরকারি দল-বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থানে। সর্বশেষ, গত ১০ নভেম্বর শনিবার বিরোধী দলগুলোর ঐক্যফ্রন্টও বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাবে। তবে নির্বাচনের তফসিল পেছাতে হবে। এ সিদ্ধান্তে আদৌ তারা শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে কিনা কেউ বলতে পারছেন না। এমনকি ঐক্যফ্রন্ট অর্থাৎ বিরোধীদলের নেতা-নেত্রীরাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। কারণ, রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবার অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আনপ্রেডিক্টেবল পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিরোধী দলগুলোর সামনে এখন বড় প্রশ্ন হলো, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ন্যূনতম পরিবেশও না থাকলে কী করে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করবে? তারা এ মুহূর্তে নির্বাচনের পরিবেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি নতুন কোনো সংলাপেও তারা যেতে আগ্রহী নয় এখন। তাদের লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো প্রশাসন নির্দলীয়করণ অর্থাৎ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি। তফসিল পেছানোর দাবির ক্ষেত্রেও তাদের উদ্দেশ্য ওই একটাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা ড. কামাল হোসেন এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তারা এখন আর সংলাপ করতেও আগ্রহী নন। নির্বাচনে যাবেন। তবে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ না দেখলে নির্বাচন বয়কট করবেন।
যেহেতু তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে এখন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির গুরু দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপরই। নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত যা করেছে তাতে বিরোধীদল তো নয়ই, বুদ্দিজীবী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, এমনকি সাধারণ মানুষও এ কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিরোধীদল নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলেও নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে তারা যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচন বয়কট এবং এরসঙ্গে প্রতিরোধের ডাকও দিতে পারে। সেই পরিস্থিতি সরকার আদৌ মোকাবেলা করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ সরকারের মধ্যেই। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক মহলও এ মুহূর্তে সরকারের কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট, কেউ কেউ ক্ষুব্ধও। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বিরোধীদলের প্রস্তুতিও বেশ কৌশলী এবং সুপরিকল্পিত।
ইসির দলীয় নগ্ন পদক্ষেপ, একতরফা তফসিল, সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
জাতীয় ঐক্যজোট, বামজোটসহ সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো আবেদনকে আমলে না নিয়েই নির্বাচন কমিশন অনেকটা একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন সরকারি দলের কথামত এবং তাদের স্বার্থেই যেন নির্বাচন কমিশন, বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা একের পর এক দলীয় নগ্ন আচরণ করছেন। উল্লেখ্য, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, চাকরিজীবনে আওয়ামী লীগ এবং তারপরেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১-০৬ টার্মের বিএনপি সরকারের আমলে চাকরি থেকে অবসরে যাবার পর ধানম-িতে আওয়ামী লীগের গবেষণা সেলে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পাবার পর কেএম নুরুল হুদা মাঝে দু’একবার মুখে নিরপেক্ষতার ভাব দেখিয়েছেন, যদিও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। সর্বশেষ এখন তফসিল ঘোষণা নিয়ে যা করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে গোটা জাতি হতাশ। এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও সিইসির এমন আনুগত্যে অবাক হয়েছেন।
সবাই মনে করেছিল, কয়েক দিনের জন্য হলেও তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছানো হবে। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো যথেষ্ট সময় এখনো হাতে আছে। শুধু আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল, ৮ নভেম্বর যাতে তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে তাদের দাবিটা তেমন জোরালোও ছিল না। তারপরও সিইসি তাদের ইচ্ছাই পূরণ করলেন। এর আগেও সিইসি ইভিএমসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে নগ্ন দলীয় আনুগত্যের প্রমাণ রেখেছেন। সিইসির একের পর এক এমন দলীয় আনুগত্য ও নগ্ন দলীয় কর্মকা-ে নির্বাচন নিয়ে সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তিনি দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটিই এ মুহূর্তে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সাধারণ সচেতন মানুষের কাছে।
বিরোধীদল-ঐক্যফ্রন্টের কৌশল
সরকারের বাইরের দলগুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোন্ কৌশলে এগুচ্ছে তা কেউই বলতে পারছে না। ইতিপূর্বে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩-১৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদল কী করবে বা করতে যাচ্ছে সেটি আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। যেমন তফসিল ঘোষণা বা তার আগে সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের প্রতিবাদে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়া হতো। কিন্তু তখন সরকারের কলা-কৌশল বোঝা যাচ্ছিল না। বিরোধীদলকে ফাঁদে ফেলে ঘায়েল করার জন্যই যে সরকার এসব কৌশল নিতো তা পরবর্তীতে বোঝা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সেইসব কৌশল বেশ কাজও দিয়েছিল।
তবে এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। এইবারের নির্বাচনে সরকার অনেকটা আগের সেই ছকেই এগুচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন দলীয়করণের মাধ্যমে একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে। অবশ্য এছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো পথও খোলা নেই। এদিকে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নিত্যনতুন কৌশলে এগুচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একের পর এক ভুল
ইতিপূর্বে গত কয়েক মাসে অনেকগুলো ভুল খেলেছে সরকার। সর্বশেষ এই সময়েও বেশ ক’টি ভুল চাল চেলেছে সরকার বা সরকারি দল, মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকার যেন একের পর এক ভুলই করে চলেছে। দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে সেক্যুলার অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচয় দিতো। বিএনপিকে বলা হতো, ডানপন্থি বা মৌলবাদী, মৌলবাদের সমর্থক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের পক্ষে এমন প্রচারণাই চালানো হতো। বলা হতো, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ মৌলবাদী রাষ্ট্র হয়ে যাবে। নিজেদেরকে যে সেক্যুলার বলে পরিচয় দিতো সেই ভাবমুর্তি এখন আর নেই আওয়ামী লীগের। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ের ঘটনা ছাড়াও সর্বশেষ ঘটা করে হেফাজতের সম্বর্ধনা নেওয়ার মাধ্যমে ভাবমুর্তিটি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে, বলছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক বুদ্বিজীবীরাই।
এছাড়া হেফাজতের সম্বর্ধনা নেওয়ার দিন বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, যা ছিল নজিরবিহীন। এ নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা গেছে খোদ আওয়ামী লীগ সমর্থকদেরই।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা দেওয়াকে কেন্দ্র করে হেফাজতেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি এবং অতীতের তিক্ততা। শাপলা চত্বরের সেই রাতের কাহিনী এখন আবার নাড়া দিয়ে উঠেছে। এটিও নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নয়।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে গত ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দেখা যাচ্ছে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের এ ঘটনা বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে বিএনপির জন্য। কারণ, আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে জামায়াতের এখন আর কোনো বার্গেইনিং ক্যাপাসিটিই থাকলো না। জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত থাকলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না থাকলেও ঐক্যফ্রন্টের কিছু আসন জামায়াতকে তাদের দাবি অনুযায়ী অঘোষিতভাবে হলেও ছেড়ে দিতে হতো। এখন জামায়াতের সামনে একটাই পথ, আর তা হলো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো। তা নাহলে ভবিষ্যতে জামায়াত কখনো নিবন্ধন পাবে না, এমনকি অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ারও আশংকা রয়েছে। তাই এটা মনে করা হচ্ছে যে, বিএনপিসহ ঐক্যজোটের প্রার্থীদের নির্বাচনে জেতাতে জামায়াত প্রাণান্তকর চেষ্টা করবে।
গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারের দুই মন্ত্রী- শাজাহান খান ও মশিউর রহমান রাঙ্গা। ওই ধর্মঘট নিয়ে সংবাদ মাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এর কারণ, ধর্মঘটে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি ছাড়াও বহু মানুষকে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। হাসপাতালে যাবার গতিরোধ করে দুটি শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। গাড়িচালক ছাড়াও অনেক সাধারণ যাত্রীর, এমনকি রিকসা যাত্রীদের মুখেও পোড়া মবিল মেখে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ এসবের জন্য গোটা সরকার তথা আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেছে। সরকার ইচ্ছে করলে এই ধর্মঘট আগে থেকেই বন্ধ করতে পারতো, কিন্তু করেনি। বরং আইনÑশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয় থেকে এই ধর্মঘটকেই পরোক্ষে সমর্থন করেছে।
বাতাসে ভিন্ন আওয়াজ
সব দল একসঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করলেও বাতাসে কিন্তু ভিন্ন আওয়াজ বইছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও অনেকে ভেতরে ভেতরে আশংকা প্রকাশ করে বলছেন, নির্বাচন আদৌ হবে না। নির্বাচন না হলে কী হবে অথবা কীভাবে এ সংকটের সমাধান হবে সেকথাও কেউ নিদিষ্ট করে বলতে পারছেন না। সংলাপ-আলোচনা ভেঙে যাওয়া এবং একতরফা তফসিল ঘোষণার পর সরকারি মহলে এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছিল যে, তারা বোধহয় পার পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিরোধীদল-ঐক্যফ্রন্টের সার্বিক কৌশলী এবং দৃঢ় ভূমিকায় সেই ক্ষণিকের স্বস্তিটা আবার যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে। সরকারি দলের নেতা-নেত্রীদের কপালে যেন ভাঁজ পড়েছে।
আওয়ামী লীগ ইতিপূর্বে অনেকবার বলেছে, বিএনপির হাতে ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ বিএনপিকে কোনোক্রমেই নির্বাচিত হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। কারণ তারা আশংকা করছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। অন্যদিকে, একই রকমের আশংকা করছে বিএনপি-জামায়াতও। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ আরেকবার ক্ষমতা আসলে আরো বেশি মাত্রায় দমন-পীড়ন চালানো হবে। ফলে তারাও যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন তারা সেই প্রস্তুতিই নিয়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কেন্দ্রীক সব কিছু ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
খালেদা জিয়া কী নির্বাচন করতে পারবেন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, খালেদা জিয়ার চেয়ে জনপ্রিয় নেতা এখন বাংলাদেশে নেই। শুধু কাদের সিদ্দিকী কেন, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে হয়তো অনেকে স্বীকার করবেন না- এছাড়া আর সব মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, বর্তমানে দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, এটি নির্ভর করছে আদালতের উপর কিন্তু সবাই বোঝেন, এই প্রশ্নে আদালত চেয়ে থাকবে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে।
গত ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদ- দিয়েছে। এর পরদিনই ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। সরকারেরই ইচ্ছায় এগুলো যে হচ্ছে তা সবাই মনে করছেন। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কিনা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালত রায় স্থগিত করলে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন।
প্রশাসন দলীয়করণের চরম পর্যায়ে
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার বিগত মাসগুলোতে প্রশাসন নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে। যাতে নির্বাচনে তারা একচেটিয়া সুবিধা আদায় করতে পারে। সেই সাজানো অবস্থায়ই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।
গত দশ বছরে সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনে দলীয়করণের যে চরম নৈরাজ্য চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারছেন। যদিও সরকারি চাকরিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক সংশ্লষ্টতা চাকরি বিধি অনুযায়ীই একেবারে নিষিদ্ধ তথাপি এই নিষিদ্ধ কাজটির চর্চা ব্যাপকভাবে চলছে এখন। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকেই এখন নিজেদের সরকারি দলের ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিতেও গর্ববোধ করেন। কখনো কখনো ক্যাডার পরিচয়ের প্রতিযোগিতায়ও নামতে দেখা যায়। এই ক্যাডাররাই এখন মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দায়িত্ব পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলকে বাইরে রেখে প্রশাসনের এই ক্যাডারদেরই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিদেরকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের দিয়েই নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ। অথচ বলছে, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
কী ঘটবে?
সিইসি কেএম নুরুল হুদার এতো বড় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা নিয়ে শুরুতেই সন্দেহ করেছেন অনেকে। কারণ, তাকে সাবেক সচিব বলে আখ্যায়িত করা হলেও তিনি বাস্তবে কখনো সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেননি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে তিনি ভূতাপেক্ষভাবে সচিব হয়েছিলেন। ফলে, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ আনকূল্যের কারণে এই রাজনীতি থেকে তার বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এছাড়া, সিইসি কেএম নুরুল হুদার আদৌ সেরকমের যোগ্যতা আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ইতিপূর্বে এতো কম যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ নুরুল হুদা সর্বশেষ চাকরি করেছেন যুগ্মসচিব পদে। এই পদে থাকাকালেই বিএনপি সরকারের সময় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হয়। এরপর এক পর্যায়ে স্বাভাবিক অবসরের সময়ও শেষ হয় তার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে একই প্রজ্ঞাপনে ভুতাপেক্ষভাবে অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ কাগজে-কলমে সচিব হলেও বাস্তবে তিনি সাবেক যুগ্মসচিব।
এসব কারণে সিইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযোগী লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সন্দিহান। আর এ কারণেই সর্বমহলে আশংকা- কী ঘটবে দেশের ভাগ্যে?

(সূত্র- সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ১২ নভেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত)