অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নওফেল আওয়ামী লীগের সেতুবন্ধন নাকি কোন্দলের সূচনা!

0
.

মনোনয়নপত্র বৈধতার ঘোষণা পেয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ৯ আসন থেকে নৌকার হয়ে লড়বেন বিএনপির. ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে।

আজ রবিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ যাচাই-বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির মো. আবু হানিফ, কমিউনিস্ট পার্টির মৃণাল চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্টের মো. ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলনের শেখ আমজাদ আলী, ন্যাপের আলী নেওয়াজ খান, খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হকের। এ আসনে ঋণখেলাপি হওয়ায় বিএনপির আরেক প্রার্থী সামশুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

.

এ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবুর রহমানও এ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেণ। কিন্তু তারা ধোপে টিকেননি। কোতোয়ালী বরাবরই নূরুল ইসলাম বিএসসির এলাকা বলে পরিচিত। এ এলাকায় তিনি তার অনুদানে অসংখ্য স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মান করেছেন। জনশ্রুতি রয়েছে, কোতোয়ালীর মানুষ জানে বিএসসিকেই। তাই নওফেলের চূড়ান্ত মনোনয়নে আওয়ামািলীগের রাজনীতিতে এ আসনে সেতুবন্ধন নাকি কোন্দলের সূচনা..এ কথাই ঘুরছে এখন ভোটারদের মুখে মুখে।

ব্যারিস্টার নওফেল ২০১৪ সালে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। গত বছরের ২৫ অক্টোবর তাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে তার জন্ম। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বাবা মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি। ওই প্রথম তাকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে দেখা যায়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে স্নাতক পাস করা নওফেল ২০১০ সালেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিবিদ হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। ঢাকা বারের এ আইনজীবী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নওফেলও। ওই সভাতেই চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন।

.

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর আগে একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা যখন প্রার্থী যাচাইয়ে মাঠে নামে তখন শোনা যাচ্ছিলো,আগামী সংসদ নির্বাচনে নতুন রুপরেখায় নতুন করে মহিউদ্দিন ও নুরুল ইসলাম বিএসসি মনোনোয়ন প্রত্যাশী হবেন। তবে তখন একথাও চাউর হয়েছিল যে, মহিউদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন না পেলেও তার ছেলে নওফেল মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন। নওফেল দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ার পর নারায়নগঞ্জের নির্বাচনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। এজন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে নওফেলের প্রশংসা করে এসেছেন। নওফেল ২০১৪ সালে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্যও।

জানা গেছে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বাবা মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। ওই প্রথম রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দেখা যায় লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা এই নওফেলকে। ২০১০ সালেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিবিদ হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ঢাকা বারের এই আইনজীবী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন নওফেলও। ওই সভাতেই চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের তিন বারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন। গণভবনের ওই বৈঠকের আগে একান্ত আলাপে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ছেলে নওফেলের কাছে জানতে চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই ‘পরবর্তীতে’ নওফেলকে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।
তখন বয়সের কারনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দল থেকে মনোনয়ন না দিলেও নওফেলকে মনোনয়ন দিবেন বলে আশা করেছিলেন মহিউদ্দিনপুত্র। তিনি তখন বলেছিলেন, আমি আশা করি আগামী সংসদ নির্বাচনে আমার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। যদি কোন কারনে তিনি বাদও পড়েন আমি আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই।

এদিকে চট্টগ্রাম ৯ আসন বাংলাদেরে জাতীয় সংসদের ৩০০ টি নির্বািচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮ নং আসন। চট্টগ্রাম-৯ আসনটি চট্টগ্রাম শহরের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

.

২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ৭৯ হাজার ৭৭৯ টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওয়াকার্স পার্টির মো: আব্দুল হানিফ ভোট পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৯ টি ভোট। বিএনএফের আরিফ মঊনুদ্দিন পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ টি ভোট। স্বতন্ত্র আলী আহমেদ নাজির পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪১ টি ভোট।

কোতোয়ালী ও বাকলিয়া এলাকা নিয়ে এ আসনটি গঠিত হলেও এখন এই আসনটিতে নগরীর গুরুদ্বপূর্ণ ৫টি থানার অংশ যুক্ত রয়েছে। এই আসনটি চট্টগ্রাম-৮ থাকলেও পরে নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্বিন্যাসকালে এটিকে চট্টগ্রাম-৯ করে । ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন হতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম বিএসসি।

প্রবাদ আছে, এ আসনে যে দল থেকে এমপি নির্বাচিত হন সে দল সরকার গঠন করে এবং এ আসনের এমপি মন্ত্রীত্ব পান। এর প্রমাণও মিলেছে। এ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপি’র আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত এম এ মান্নান। তারা মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
গত নির্বাচনে বিএনপি না আসায় চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের নির্বাচনী হিসেব-নিকেষ পাল্টে যাওয়ার কথা ছিলো। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ের বিষয়টি অনেকটা সহজ হয়ে উঠার পথে বাধ সেজেছিলেন বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মহাসচিব অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন এবং জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনের মনোনয়ন নিয়েই মূলত মহানগর আওয়ামী লীগে বিরোধের সূত্রপাত। পরে বহু চড়াই উৎড়াই শেষে কেন্দ্র থেকে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম বিএসসির কাছে প্রায় ৩১ হাজার ৮শ ভোটে হেরে যান বিএনপির অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থীী নগর বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শামসুল আলম। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় নুরুল ইসলাম বিএসসিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। এরও আগে ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নান এবং ১৯৯১ সালে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান এ আসনে জয়ী হন।

আজ রবিবার মনোনয়নপত্র বৈধ্যতার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর তিনি নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জানান, ‘আমার বাবা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আমার দায়িত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে।  কিন্তু দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে নওফেলের এ কথাটি কতটুকু সত্য হবে তা নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী।

.

মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবদ্দশায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ আজ ম নাছির ও মহিউদ্দিন গ্রুপ নামে পরিচিতি ছিলো। অন্যদিকে নূরুল ইসলাম বিএসসির সমর্থনপুষ্ট ছিলো ছাত্রলীগের টিনু গ্রুপ। মহিউদ্দিন সমর্থনপুষ্ট নূরুল আজিম রণির সাথে টিনু গ্রুপের চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ভিত্তিক দ্বন্দ্ধ সংঘাত সারা বছরই লেগে থাকে।

রণির নেতৃত্ব মানতে নারাজ টিনু। বেসরকারী একটি কলেজের শিক্ষককে মারধর করার ঘটনায় এই দুই গ্রুপ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের পদ হারায় রণি। এ ঘটনায় রণি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কিছুটা আড়াল থাকলে নওফেলের নির্বাচনী প্রচারণায় আবারও নামবে রণি গ্রুপ, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। যাদের উপস্থিতি মানতে নারাজ যুবলীগ নেতা নূর মোস্তফা টিনু।

এ প্রসঙ্গে টিনু জানান, ‘আমার এলাকায় আমি রণির দলের কাউকে প্রবেশ করতে দিব না’

এদিকে নওফেল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে বিএসসি পুত্র মজিবুর রহমান।গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন তিনি। তবে সূত্রে জানা গেছে, দলের কোন কর্মসূচিতে মজিবুর রহমান যোগদান করছেন না। নূরুল ইসলাম বিএসসি অবস্থান করছেন ঢাকায়। নিজের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া নিয়েও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএসসি পুত্র।

তবে চট্টগ্রাম -৯ আসনের ভোটারদের অভিমত, মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল বাবার সুবাদে ভোট ব্যাংক ভারি হতে পারে। কিন্তু বিএসসি ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর সারাজীন যে ঠান্ডা লড়াই চলে আসছে, তার অবসান হবে না। এ নির্বাচনে নওফেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ফলে তা আরও জিইয়ে উঠবে।

আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানালে অন্তরে ঠিকই বিদ্বেষ পুষে রাখছেন, মন্তব্য এলাকাবাসীর।

বাকলিয়ার বাসিন্দা শেখ নেয়ামত সওদাগর জানান, বাকলিয়া বিএসসির এলাকা। সেখানে মহিউদ্দিন পুত্র ভোট চাইতে আসলে কতটুকু ভোটারদের সাড়া মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছে। ভোটাররা আজ থেকে প্রতিক ও প্রার্থী দুটোই যাচাই করতে শুরু করবেন।

এ প্রসঙ্গে নওফেল জানান, আমি বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত। সব কোন্দলকে নিরসন করে দলকে সমুন্নত রাখব ও নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনব, এ আশাই করি।

.

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির জানান, নওফেল নতুন প্রজন্মের তারুণ্যের প্রতীক। তরুণ হাতে সে রাজনীতির চালিকাশক্তি হবে। কেউ যদি নওফেলকে না মানে সেটি তার ব্যক্তিগত হীন্যমন্যতার ফল। নৌকার বিজয় ঘটাতেই হবে এটাই সত্য। এই সত্যকে যারা উপেক্ষা করবে তাদের নাম আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন মনে করা হয় কোতোয়ালীকে। সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি’র প্রার্থীই এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বেশি। গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ থাকলেও নুরুল ইসলাম বিএসসির পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মহাজোট থেকে জিয়াউদ্দিন বাবলু। এটা মহিউদ্দিনের পক্ষে পথ নিষ্কণ্টক করার কৌশল বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। পরে তাকে মন্ত্রীত্ব প্রদান করেন শেখ হাসিনা।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর আগে একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোয়েন্দা যখন প্রার্থী যাচাইয়ে মাঠে নামে তখন শোনা যাচ্ছিলো,আগামী সংসদ নির্বাচনে নতুন রুপরেখায় নতুন করে মহিউদ্দিন ও নুরুল ইসলাম বিএসসি মনোনোয়ন প্রত্যাশী হবেন। তবে তখন একথাও চাউর হয়েছিল যে, মহিউদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন না পেলেও তার ছেলে নওফেল মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন। নওফেল দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ার পর নারায়নগঞ্জের নির্বাচনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। এজন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে নওফেলের প্রশংসা করে এসেছেন। নওফেল ২০১৪ সালে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্যও।

২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন নওফেলও। ওই সভাতেই চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের তিন বারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন। গণভবনের ওই বৈঠকের আগে একান্ত আলাপে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ছেলে নওফেলের কাছে জানতে চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই ‘পরবর্তীতে’ নওফেলকে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।

তখন বয়সের কারনে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দল থেকে মনোনয়ন না দিলেও নওফেলকে মনোনয়ন দিবেন বলে আশা করেছিলেন মহিউদ্দিনপুত্র। তিনি তখন বলেছিলেন, আমি আশা করি আগামী সংসদ নির্বাচনে আমার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। যদি কোন কারনে তিনি বাদও পড়েন আমি আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৯ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই।

এদিকে চট্টগ্রাম ৯ আসন বাংলাদেরে জাতীয় সংসদের ৩০০ টি নির্বািচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮ নং আসন। চট্টগ্রাম-৯ আসনটি চট্টগ্রাম শহরের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ৭৯ হাজার ৭৭৯ টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওয়াকার্স পার্টির মো: আব্দুল হানিফ ভোট পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৯ টি ভোট। বিএনএফের আরিফ মঊনুদ্দিন পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ টি ভোট। স্বতন্ত্র আলী আহমেদ নাজির পেয়েছিলেন ১ হাজার ৪১ টি ভোট।

কোতোয়ালী ও বাকলিয়া এলাকা নিয়ে এ আসনটি গঠিত হলেও এখন এই আসনটিতে নগরীর গুরুদ্বপূর্ণ ৫টি থানার অংশ যুক্ত রয়েছে। এই আসনটি চট্টগ্রাম-৮ থাকলেও পরে নির্বাচন কমিশন আসন পুনর্বিন্যাসকালে এটিকে চট্টগ্রাম-৯ করে । ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন হতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম বিএসসি।

প্রবাদ আছে, এ আসনে যে দল থেকে এমপি নির্বাচিত হন সে দল সরকার গঠন করে এবং এ আসনের এমপি মন্ত্রীত্ব পান। এর প্রমাণও মিলেছে। এ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপি’র আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত এম এ মান্নান। তারা মন্ত্রীও হয়েছিলেন।
গত নির্বাচনে বিএনপি না আসায় চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের নির্বাচনী হিসেব-নিকেষ পাল্টে যাওয়ার কথা ছিলো। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ের বিষয়টি অনেকটা সহজ হয়ে উঠার পথে বাধ সেজেছিলেন বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মহাসচিব অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন এবং জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনের মনোনয়ন নিয়েই মূলত মহানগর আওয়ামী লীগে বিরোধের সূত্রপাত। পরে বহু চড়াই উৎড়াই শেষে কেন্দ্র থেকে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম বিএসসির কাছে প্রায় ৩১ হাজার ৮শ ভোটে হেরে যান বিএনপির অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থীী নগর বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ শামসুল আলম। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় নুরুল ইসলাম বিএসসিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।