অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ক্লিন ইমেজ ইসহাক কাদেরকে কঠিন ভাবছেন এমপি দিদার

0
.

চট্টগ্রাম -৪ আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার টিকিট পেয়ে দিদারুল আলম দিদার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এসময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরীর আংশিক অংশ) আসনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করেছে বিএনপি। ইসহাক চৌধুরীর ক্লিন ইমেজ ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরী করে তার ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করবে, অভিমত ভোটারদের। আর এসব বিষয় বিবেচেনা করে নতুন প্রার্থী ইসহাক চৌধুরীকে কঠিনভাবে ভাবছেন দিদার। দিদারের বক্তব্যে সে কথাই উঠে এসেছে।

গত নির্বাচনে দিদারুল আলম নৌকা প্রতীকে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সম্পূর্কে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের ভাতিজা তিনি। সীতাকুণ্ডে ৪ আসনের সাবেক এমপি আবুল কাশেম মাষ্টারের মৃত্যুর পর সেই ঘাটিতে জনগনের কাছে ভালো ইমেজ তৈরী করতে পেরেছেন বলে তার অভিমত। তবে বিএনপি করে আওয়ামীলীগের টিকেট পাওয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে গুঞ্জন শুরু থেকেই ছিলো।

তবে ভোটের মাঠের লড়াই নিয়ে দিদারুল আলম জানিয়েছেন তার সোজাসাপটা মন্তব্য। তিনি জানান, ভোটের মাঠে তিনি বিএনপিকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবছেন। যে যাই বলুক, ভোটের মাঠে বিএনপিকে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। কারন ইসহাক কাদের চৌধুরীকে রয়েছে ক্লিন ইমেজ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী তার যেই থাক, নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলে জানান দিদারুল আলম।

প্রসঙ্গত,ইসহাক কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই। আসলাম চৌধুরী রাজনৈতিক, রাস্ট্রদ্রোহ ও ব্যাংক ঋণ মামলাসহ অসংখ্য মামলায় মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আরো মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামছুল আলম হাসেম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. দিদারুল কবির, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোং মোজাম্মেল হোসেন ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ আশরাফ হোসাইন।

কিন্তু আগে থেকেই চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড বিএনপি ও আওয়ামীলীগ ছিল কোন্দলে জর্জরিত। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দু দলকেই সামলাতে হিমসিম খেতে হবে ভোটারদের, এ অভিমতও ভোটারদের।

আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর আরো প্রকট হয়ে উঠে। কারন আওয়ামীলীগের এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরর মধ্যে বর্তমান এমপি দিদারুল আলম ছাড়াও ছিলেন সাবেক এমপি আবুল কাশেম মাষ্টারে ছেলে সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম আল মামুন। মনোনয়ন ফরম ও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। পরে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র পদে লড়ার ঘোষনা দেন এস এম আল মামুন। পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মামুন। তবে নিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেও দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে অনেকটাই সরে রেখেছেন এসএস আল মামুন।

অন্যদিকে এসএম আল মামুন ছাড়াও সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁর সমর্থনকারী হিসেবে উপজেলার মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়েছে তাঁকে। চার হাজারেরও বেশি ভোটারের স্বাক্ষর তিনি জমা দিয়েছিলেন।

কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বাকের ভূঁইয়ার দেওয়া স্বাক্ষরগুলোর মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্বাক্ষর সঠিক কি না যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, তিনজন নিরক্ষর লোকের স্বাক্ষর রয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো ভুয়া। তাই তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এ ঘটনায় দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে সরে রাখছেন বাকের ভূঁইয়াও।

চট্টগ্রাম -৪ সংসদীয় আসন হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২৮১ নং আসন। এ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওযামীলীগ থেকে দিদারুল আলম ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৫টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাসদ থেকে মফিজুর রহমান ভোট পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৪২ টি ভোট।

এদিকে গত সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অভিযোগ ছাড়–ছিলো না এমপি দিদারুল আলমের। পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় অংশ নেয়া, আওয়ামী রাজনীতি না করে আওয়ামী লীগের টোকেনে এমপি হওয়া, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ঢাকাতে সাক্ষাৎ করা, সীতাকুণ্ড আওয়ামীলীগে কোন্দল সৃষ্টি করা, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনকে পরিপূর্ণ সমর্থন না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সীতাকুণ্ড আওয়ামীলীগে বিবাদমান দুই গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি পায় উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন গ্রুপ ও সংসদ সদস্য দিদারুল আলম গ্রুপ।

তবে এসব অভিযোগ খন্ডন করেছেন এমপি দিদারুল আলম বরাবরের মতো আবারও জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বরে যখন সীতাকুণ্ডে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনোয়ন দেন। তিনি তার পর থেকেই কাজ করে গেছেন। চেষ্টা করেছেন মানুষের সেবা করার।

নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তবে আমি ব্যবসায়ী। ২০১৩ সালের আগে রাজনীতি না করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার যোগাযোগ ছিলো। তিনি ব্যবসা করলেও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা ফাউন্ডেশন কাট্টলীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু বিদ্যাপীঠ ও বঙ্গবন্ধু স্কুল তৈরী করেছেন। আর সেই সুবাদে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন সূত্রে খবরাখবর নিয়ে শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, তার সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সীতাকুণ্ডে ৯০টি ওয়ার্ড ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। ৯০ টি ওয়ার্ডের প্রতিটি কর্মকান্ডে তিনি জড়িত আছেন।

গত নির্বাচনে পাওয়ার পর তিনি সীতাকুণ্ডবাসীকে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরন করতে পেরেছেন বলে জানান। সীতাকুণ্ডে একটা কলেজকে সরকারী কলেজে উন্নীতকরণ করতে চেয়েছিলেন। তা করতে পেরেছেন। বাঁশবাড়িয়া বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেছেন, তাহের মঞ্জুর নামে এলাকায় নতুন একটা কলেজের কাজ শুরু করেছেন তিনি। অনুদানের বাইরে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে করেছেন নিজের টাকা খরচ করে।

সীতাকুণ্ডে জঙ্গী হামলা, জামায়াত শিবির নাশকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সীতাকুণ্ডে যারা জঙ্গী হামলা চালিয়েছে তারা স্থানীয় না। বহিরাগতরা এসে এ হামলায় অংশ নেয়। তবে তারই প্রচেষ্টায় সীতাকুণ্ডে জামায়ত-শিবিরের আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে সীতাকুণ্ড জামায়াত শিবিরের কোন ঘাটি নেই বলে তার দাবি।

তিনি আগের কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি এমপি মনোনয়ন পাওয়ার আগে সীতাকুন্ড আওযামীলীগ ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো। সেখান থেকে তিনি আওয়ামীলীগকে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন।

আর সাবেক সাংসদ আবুল কাশেম মাষ্টারের কথা উল্লেখ করে বর্তমান এই সাংসদ বলেন, আগের সাংসদ চলতো জামায়াত-শিবির, বিএনপির লোক দিয়ে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সেই অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারার পর কোন জামায়াত-শিবির, বিএনপি কর্মীকে ধরে নিয়ে গেলে আগের সাংসদ তদবীর করত। কিন্তু সেসব হওয়ার এখন আর কোন অবকাশ নেই বলে জানান তিনি।

এমপি দিদারুল আলম আরো বলেন, আওয়ামীলীগে আগে নেতাকর্মীদের মূল্য ছিলো না। এখন তারা আমার কাছে এসে মূল্য পায়।

আওয়ামীলীগের নিজের মধ্যে তৈরী দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী এসহাক কাদের চৌধুরী। সম্পূর্কে তিনি আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই হওয়ায় ভোটব্যাংক তার শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনাকে আমলে নিচ্ছেন সাধারন ভোটাররাও।

সীতাকুণ্ড সদরের আসবাবপত্র ব্যবসায়ী আজগর আলী জানান, আওয়ামীলীগ থেকে দিদারুল আলম মনোনয়ন পেয়ে নিজের জয় নিয়ে যে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, তা ভেস্তে যাবে। কারন সীতাকুণ্ড আওয়ামীলীগ কয়েকভাগে বিভক্ত। আর এটিকেই কাজে লাগাবেন বিএনপির এসহাক কাদের চৌধুরী।

অবশ্য এ বিষয়ে বলতে গিয়ে ইসহাক কাদের চৌধুরী জানান, তিনি বিএনপির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিএনপি একটি পরিক্ষীতও ত্যাগী দল। বিএনপির প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তার সমুচিত জবাব ভোটাররা তার ভোটের মাধ্যমেই দিবে জানান ইসহাক কাদের।

সীতাকুণ্ড  উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক তফাজ্জল আহমেদ জানান, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরুপেক্ষ হয়, তাহলে বিপুল ভোটে বিএনপি বিজয় লাভ করবে। কারন সীতাকুণ্ডে জনসমর্থন বিএনপির প্রতি। এর কারন হিসেবে উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা জানান, আওয়ামীলীগের টিকেটে মনোনয়নপ্রাপ্ত এমপি দিদার নিজের সন্ত্রাস বাহিনী গঠন করে এলাকার জনগনের প্রতি নির্যাতন চালিয়েছেন। সাধারন মানুষ নানাভাবে নির্বাতনের শিকার হয়েছেন। তাই বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে ভোটাররা নতুন স্বপ্ন দেখছেন, তাদের দিনবদল হবে। আগামী সাংসদ সাধারন মানুষের সুখ-দুংখের ভাগিদার হবেন।