অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পরকীয়া বন্ধে ৪৯৭ ধারার সংশোধন চায় পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন

0
.

পরকীয়া বন্ধে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারার সংশোধন দাবি করেছেন ‘বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন’র (বাপুঅফা) নেতারা। আজ পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি তোলেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা এ মানববন্ধন করেন। এসময় সংগঠনটির নেতারা পরকীয়া বন্ধের নানা দিক তুলে ধরেন এবং এটি বন্ধে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারার সংশোধন দাবি করেন।

সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, নির্যাতন ও যৌতুকের মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঘরে ও বাইরে পুরুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে। আর পুরুষদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেবার মতো আইন না থাকার কারণে দিন দিন এ ধরনের নির্যাতন বেড়েই চলেছে।

সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুর আলম বলেন, ‘২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথম পুরুষ নির্যাতনের প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছিলাম। আজও একই প্রতিবাদে যখন দাঁড়িয়েছি ততদিনে পুরুষ নির্যাতন অনেক বেড়ে গেছে।’

এসময় তিনি ৩ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করার দাবি জানান।

শেখ খায়রুল আলম বলেন, ‘পুরুষরা ঘরে ও বাইরে নির্যাতনের শিকার হলেও আত্মসম্মানের ভয়ে কিছু প্রকাশ করতে পারেন না।’

মানববন্ধনে নারী নির্যাতনেরও বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা পুরুষ নির্যাতনের দাবি তুলছি, এর মানে এই নয় যে, আমরা নারী নির্যাতনকে সমর্থন করি। তবে পরকীয়াজনিত কারণ ও অবাধ্য স্ত্রীকে শাসন করতে গেলেই স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব স্ত্রীরা মিথ্যা নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

পরকীয়া বন্ধে দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারার সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া যৌনসঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবে, যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ উভয় দণ্ড। কিন্তু এক্ষেত্রে একইভাবে স্ত্রীলোকটিকে দুষ্কর্মের সহায়তাকারিনী হিসেবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উপযুক্ত বলে গণ্য করা হয়নি।’

শাস্তি না থাকার কারণে তারা পরকীয়ায় উৎসাহিত হচ্ছে দাবি করে এ আইনের সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি।

মানববন্ধনে বক্তারা চট্টগ্রামে চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী স্ত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে ভারতে এই আইনটির সংস্কার করা হয়েছে। ভারতেও এই আইন অনুযায়ী, কোনও পুরুষ কোনও বিবাহিতা নারীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর অনুমতি ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলা ছিল। কোনও পুরুষ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, সেই নারীর স্বামীর অনুমতি ছাড়া, তবে তাঁর শাস্তি হবে। কিন্তু এই আইন কোনও নারীকে এই অধিকার দেয়নি যে তিনি অনুরূপ পরিস্থিতিতে তাঁর স্বামীকে আইনের আওতায় আনতে পারেন। যে বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে ওই পুরুষের সম্পর্ক তৈরি হয়, তাঁরও শাস্তির বিধান নেই। সোজা কথায়, এক্ষেত্রে একমাত্র বিবাহিতা মহিলার স্বামীর অধিকার আছে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার।

কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘ব্যভিচার বিবাহিত জীবনে অশান্তির কারণ অথবা ফল হতে পারে, কিন্তু স্রেফ ব্যভিচার কোনও অপরাধ হতে পারে না, যদি না তা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা যোগানোর আওতায় আসে।’

ভারতের শীর্ষ আদালত সর্বসম্মত রায়ে জানায়, ৪৯৭ ধারা অসাংবিধানিক, এবং ব্যভিচার আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।

এই মামলায় আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, ৪৯৭ ধারা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়া উচিৎ। ভারতে ব্যভিচারের শাস্তি বর্তমানে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, অথবা জরিমানা, বা দুইই।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মিশ্র বলেন, স্বামী অর্থে প্রভু, এই ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না, যে কোনও একটি লিঙ্গের সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে অপর একটি লিঙ্গের ওপর।

এর পর বিচারপতি মিশ্র এবং খানউইলকর বলেন, “ব্যভিচারকে কিছু সামাজিক পরিস্থিতিতে কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ, কিন্তু তা কখনওই অপরাধমূলক বলে গণ্য হতে পারে না। ব্যভিচার নারীর নিজস্ব সত্তাকে আঘাত করে।”

বিচারপতি মিশ্র আরও বলেন, ৪৯৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১, যাতে স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে, এর বিরোধী। একজন নারীকে সমাজের ইচ্ছানুযায়ী জীবনযাপন করতে বলা যায় না। “আমরা আদর্শ পরিস্থিতির কথা বলছি না, স্রেফ ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে কী না, তাই খতিয়ে দেখছি,” তাঁদের রায়ে বলেন মিশ্র এবং খানউইলকর।

“ব্যভিচার বিবাহিত জীবনে অশান্তির কারণ অথবা ফল হতে পারে, কিন্তু স্রেফ ব্যভিচার কোনও অপরাধ হতে পারে না, যদি না তা দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা যোগানোর আওতায় আসে,” বলেন মিশ্র, এবং ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে দেখাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেন।

অন্যদিকে, বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন যে ৪৯৭ ধারা নারীর সম্মানহানি করে, এবং বিচারপতি নরিমান বলেন, যুক্তি বহির্ভূত যে কোনও আইনের অবসান ঘটা উচিৎ। বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, এই আইন বিবাহিত নারীদের অনুমতির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, এবং বিবাহ বন্ধনে প্রবেশ করার পর নারীর নিজস্ব সত্তা হারিয়ে যায়। এটি নারীর যৌন স্বাধীনতার পরিপন্থী। সবশেষে বিচারপতি মালহোত্রা বলেন, ৪৯৭ ধারা বজায় রাখার স্বপক্ষে কোনোরকম যুক্তিই নেই।