অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিরীহ জনগণকে হয়রানি করবেন না: পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী

0
.

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তাই একজন সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নেই।’

৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯ উপলক্ষে রাজধানীর রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

নিজেও বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা হয়। বাংলাদেশ পুলিশ সুদৃঢ় মনোবল, অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, গত প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশকে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

দেশের সাধারণ জনগণকে হয়রানি না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিরীহ জনগণকে কোনো ধরনের হয়রানি করবেন না। প্রয়োজনে তারা হয়রানির শিকার হলে ও বিপদে পড়লে তাদের সহযোগিতা করুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শান্তি, নিরাপত্তার ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে হতে হবে জনবান্ধব। পুলিশের ওপর জনগণ যেন আস্থা রাখতে পারে সেভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই দেশের উন্নয়ন। মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে পুলিশ শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও সুনাম কুড়িয়েছে। মাদক নির্মূলে যে অভিযান চলমান সেটি অব্যাহত রাখতে হবে।’

এ ছাড়া, নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে পুলিশকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বহুমুখিভাবে গড়ে তুলেছি, যাতে সর্বক্ষেত্রে মানুষ সুবিধা পায়। আমরা নতুন নতুন বিভাগ গড়ে তুলেছি। নতুন থানা, রেঞ্জ, র‌্যাব কার্যালয় গড়ে তুলেছি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। তাছাড়া পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সারাদেশে ৩০টি ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছে। আমরা পুলিশদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করবেন, তাদের পরিবারকে আট লাখ আর যারা আহত হবেন তাদের পরিবারকে চার লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে।’

বাংলাদেশ পুলিশ দেশের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পুলিশে নারী সদস্যের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ শতাংশের অধিক হয়েছে। নারী পুলিশ সদস্যগণ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পদে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ জন্য আমি নারী পুলিশ সদস্যদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদান, মোবাইল অ্যাপস প্রবর্তন এবং তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে বিভিন্ন সফটওয়্যার সংযোজন ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জরুরি সেবা (ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ) প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে। ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম এবং সমসাময়িক অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ সদস্যদের প্রযুক্তগত দক্ষতা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।