অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফুল বিক্রেতা আসলাম থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী আলমাস!

0
ছবি- প্রতিকী

মোহাম্মদ মহসীন, অতিথি লেখকঃ

খুব বেশী দিন আগের কথা নয়। প্রবর্তক মোড়ে ফুল বিক্রি করতো আসলাম। এই আয় বিলাসী জীবনের জন্য যথেষ্ট না হলেও মানসম্মত জীবন যাপনের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু উচ্চাবিলাসী আসলাম এই জীবনে সন্তুষ্ট ছিল না। তার দরকার ছিল বেশী বেশী। তার লক্ষ্য কম শ্রম, বেশী আয়। উদ্দেশ্য, শর্টকাটে বড়লোক হওয়া। তাই ফুল ছেড়ে পা বাড়ায় সে ভুল পথে।

শুরুটা করে সে পকেট মারা দিয়ে। ভিড়ের মেলায় কিংবা যাত্রীর ঠ্যালায় পকেট মারতে শুরু করে সে। কিন্তু বার কয়েক ধরা পড়ে গণধোলাই খেয়ে ফিরে আসে সেই পথ থেকে। শুরু করে নতুন ‘পেশা’। এবারের ‘পেশা’ মোবাইল চুরি। গাড়ির মধ্যে বসে থাকা যাত্রীর হাত থেকে ছো মেরে কিংবা বাড়ির জানালা দিয়ে হাত দিয়ে মোবাইল চুরি করে তা চোরাই মার্কেটে বিক্রি করতো সে।তবে এতে লাভ কম, রিস্ক বেশি থাকায় নতুন করে শুরু করে মোটর সাইকেল চুরি!

এসময়ই মূলত সে ছোটখাট অস্ত্রসস্ত্রও সংগ্রহ করে। গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী। এলজি, রিভলবার, ছোরা দিয়ে গড়ে তোলে আট দলের এই বাহিনী। বাহিনীর অন্য সদস্যরা হল-মোঃ ফয়সাল প্রকাশ কাকু ড্রাইভার প্রকাশ ইমনের কাকু , মোঃ জামাল ,মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রঃ শহীদ প্রঃ সহিদ পারভেজ, ওয়াশিম প্রকাশ ওয়াসিম, সাগর এবং সবুজ। েপুরো বাহিনী নিয়ে মোটর সাইকেল চুরি করেই দিন যাচ্ছিল তার। কিন্তু তাতে বাধ সাধে পুলিশ। মাঝে মোটরসাইকেল চুরির বিরুদ্ধে পুলিশ অলআউট এ্যাকশনে গেলে সেই পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সে ও তার বাহিনী।

এরপর সে নেমে পড়ে ছিনতাইয়ে।সাথে নামে তার পুরো বাহিনী। সশস্ত্র আটজনের এই দল নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করা শুরু করলো। অল্প দিনেই পরিণত হল নগরীর ত্রাসে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে তারা অস্ত্রের মুখেই সর্বস্ব কেড়ে নিতো। অন্যান্য ছিনতাইকারীদের তুলনায় এরা বেশী ভয়ঙ্কর ও নৃশংস। নগরীতে আরও ছিনতাইকারী আছে তবে এই গ্রুপের মতো এতো নৃশংস গ্রুপ আর নেই। এই গ্রুপ ছিনতাইয়ের সময়ই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ভিকটিমকে আহত করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ছিনতাই শেষে পালানোর সময় ভিকটিমের পাছায় ছুরি মেরে পালিয়ে যায় যাতে সবাই তাদের তাড়া না করে ভিকটিমকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এভাবেই ফুল বিক্রেতা আসলাম হয়ে উঠে শীর্ষ সন্ত্রাসী আলমাছ।তার বিরূদ্ধে মামলা রয়েছে ১১ টি। তার মধ্যে নয়টিই কোতোয়ালিতে!তাই কোতোয়ালি আসার পর আমার মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম শীর্ষেই ছিল।

ব্যক্তিগত সোর্সের মাধ্যমে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হই। জানতে পারি, নন্দনকানন তুলশীধাম মন্দির সংলগ্ন কাটাপাহাড় লেইনে অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছে আলমাস ও তার বাহিনী। তার আশেপাশেই ছিল টিম কোতোয়ালি পেট্রোল টিম। বিষয়টি জানালে তারা কালবিলম্ব না করে সেখানে চলে যায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলিবর্ষণ শুরু করে আলমাস ও তার দল। আত্মরক্ষার্থে এসময় পুলিশও গুলি ছোড়ে। পুলিশের সামনে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে পালিয়ে যায় আলমাসের বাহিনী। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহতাবস্থায় আলমাসকে আটক করা হয়। এসময় আহত হয় আমাদের দুই সহকর্মীও। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। আর এভাবেই আপাত শেষ হল আলমাসের অপরাধ অধ্যায়।

লেখক পরিচিতিঃ

মোহাম্মদ মহসীন
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোতোয়ালী থানা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ