অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে মসজিদ-মন্দিরে ছুটছেন থানার ওসিরা (ভিডিও)

0
কাতালগঞ্জ শাহী জামে মসজিদে বক্তব্য রাখছেন সিএমপি কমিশনার।

নগরীর আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবা পড়ছেন খতিব।  বেলা সোয়া দেড়টা। খতিবের খুতবা শুনছেন বিশাল এই মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে চারপাশে থাকা হাজার হাজার মুসল্লি। পুরো মসজিদের পিনপতন নিরাবতা। এক সময় ইমাম সাহেব খুতবা শেষ করলেন তারপর জুমার নামাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু খুতবা শেষ হতেই ইমামের পাশে বসা একজন মুসল্লি দাড়িয়ে বক্তব্য শুরু করলেন তিনি প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেন।  তিনি সিএমপির কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন।

তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন এভাবে-“আমি আপনাদের সাথে সালাম বিনিময়, দোয়া নিতে এবং দুটি কথা বলতে দাড়িয়েছি। নামাজের আগমূহুর্তে আমি বেশি সময় নিব না। প্রতি শুক্রবার প্রতিটি এলাকার মসজিদে যাচ্ছি।  আমরা সবাই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনকে ভয় করি।  একারণে মসজিদে আমার বক্তব্য। পবিত্র কুরআনের ২১৯ নং আয়াতের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, মদ এবং জুঁয়া মহাপাপ”।

https://www.youtube.com/watch?v=-1MluuoiaUs&feature=share&fbclid=IwAR0Sf2h-yHD0HUkog0RFiMEZHf0SVOSlVy7gjcRcYeP6MGw8iu_2GnjoJ9g

সুরা মায়াদার ৯১ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, মদ এবং জুয়া সমাজের মধ্যে ত্রাস ও হানাহানি মারামারি সৃষ্টি করে। নৈরাজ্য সৃষ্ট করে। অথচ আজ আমাদের সমাজে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে।  আমাদের যুবক সমাজ এসব মাদক, জুঁয়া ও নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়েছে।  অথচ আমার ধর্ম ইসলাম এগুলো কখনো সমর্থন করে না। এসব কারণে সমাজে নৈরাজ্য মারামারি হানাহানি সৃষ্টি করছে। প্রচলিত আইনেও এসব অপরাধ।

আমি সবাইকে অনুরোধ করছি আইনকে ডিঙ্গিয়ে কেউ অপরাধে জড়িত হবেন না। আপনারা নিশ্চয় চান আপনার এলাকার পরিবেশ শান্তিতে থাক।

ওসি তার বক্তব্যে বলেন, ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা, হজ্ব জাকাতেই আমরা ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি।

আনন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদে ওসি মহসীন।

আজকে আমরা যারা মসজিদে এসেছি আমরা সবাই পুলিশের কাছে সব কিছু দাবী করি। কিন্তু আমরা নিজেদের বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা করি- রাস্তায় যে প্রতিবন্ধকতা করেন রাস্তায় যে ইভটিজিং করেন, রাস্তায় বেপরোয়া পাকিং করেন। রাস্তার পাশে দোকান বসিয়ে দিয়ে মানুষের হাটা চলার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন এটা ইসলাম সমর্থন করে কিনা..?

ওসি মহসিন বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে, যে কারণে আজ মসজিদে সুযোগ নিলাম।  আপনারা অভিভাবক আছেন আপনার সন্তানদের খোঁজ খবর রাখার দায়িত্ব আপনার। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা আপনাদের সন্তানদের একটু খোঁজ খবর রাখেন।  সে কোথাই যাচ্ছে কার সাথে মিশছে।

আমাদের চারপাশে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।  আপনার সন্তান কোথা যাচ্ছে সে খবর রাখেন না। খুন হয়ে যাচ্ছে, তারা মাদকে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে।

.

আমি যুবক ভাইদের বলছি- কাল কেয়ামতের মাঠে আপনাদের আলাদাভাবে প্রশ্নকরা হবে তোমার যৌবনকাল তুমি কিভাবে ব্যায় করেছো ?

আপনারা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবেন না। রাস্তায় ইভটিজিং করবেন না, মাদক গ্রহণ করবেন না, মাদক ইসলামে নিষিদ্ধ এবং সামাজিকভাবেও ক্ষতিকর।  আপনরা ওয়াদা করেন আজ থেকে জুয়া খেলবেন না।

মসজিদ হচ্ছে জীবন গঠনের একটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ্য করে মহসিন বলেন, মাদক মিথ্যাবাদিতা রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ইসলামে হারাম। সবাই এগুলো থেকে দুরে থাকবেন। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ সবাই দেশকে ভালোবেসে অপরাধমুক্ত থাকবেন। যে কোন আমাদের সহযোগিতা নেবেন। আমাদের সহযোগিতা করবেন যাতে সমাজটা সুন্দর হয়।

ওসি মহসীনের এই ৫ মিনিটের বক্তব্য ধর্য্য সহকারে শ্রাবণ করেন মসুল্লিরা। জুমার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব সাইয়্যিদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবের আল মাদানী ওসি মহসীনের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, আইন করে সব কিছু সমাধান করা যায় না। আমরা নিজেরা আমাদের কর্ত্যব ও কাজে সচেতন হবে হবে। নিজেদেরকে অপরাধমুক্ত রাখতে হবে।  তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন চাইলে যে কোন কাজ সমাধান করতে পারে। তার জন্য আমরা তোদের সহযোগিতা করে নিরাপদ সমাজ গঠনে ভুমিকা রাখতে পারি।

পাহাড়তলী থানার ওসি মঈনুর রহমান।

খবর নিয়ে জানাগেছে, নগরীর আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশপাশি মানুষের মধ্যে ধর্মের বাণী এবং ধর্মীয় আদেশ নিষেধের মাধ্যমে সচেতনা সৃষ্টি করে আপরাধ কমিয়ে আনা, মাদকের ভয়াবহতা রোধ, অসামাজিক কর্মকান্ড ইভটিজিং বন্ধ করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নিদের্শে একাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাগণ।

নগরীর প্রতিটি থানা বিশেষ করে মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তারা (ওসি) প্রতি শুক্রবার এলাকার মসজিদ এবং মন্দির সমুহে গিয়ে এভাবে মানুষকে সচেতন করছেন।

সম্প্রতি সময় সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান এ নির্দেশনা দিলেও কোতোয়ালী থানার ওসি মহসীন প্রায় ৬ বছর আগ থেকে (বাকলিয়া থানায় থাকাকালে) নিজ উদ্যোগে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।  তিনি বাকলিয়া থানা ও বায়োজিদ বোস্তামী থানায় থাকাকালেও প্রতি শুক্রবার মসজিদের গিয়ে বয়ান করতেন। পুলিশ কমিশনার নিজেও শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে হাজির হয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন।

.

ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান পাঠক ডট নিউজকে বলেন, নগর বাসী মাঝে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  প্রত্যেক থানার ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাসে অন্তত দুই শুক্রবার নিজ নিজ এলাকার মসজিদ গুলোতে গিয়ে নামাজের আগে যেন সচেতনতামূলক বক্তব্য দেয়।  ইতোমধ্যে এর ফলও পাওয়া যাচ্ছে। মুসল্লিরা বেশ ভালোভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করছে।  মানুষ দিন দিন সচেতন হচ্ছে।  এটি চলমান প্রক্রিয়া বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন পাঠক ডট নিউজকে বলেন, সব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করে সমস্যার সমধান করা যায় না।  একজন মানুষ বা অপরাধীকে মনস্তাত্বিক ভাবে সচেতন করে তুলতে পারলে তিনি আর কখনো অপরাধে জড়িত হবে না।  তাই আমরা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে মসজিদে গিয়ে কোরআন হাদিসের বাণী তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।  ইতোমধ্যে এই উদ্যোগ টনিকের মত কাজ দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ্য করেন।

তিনি কোতায়ালী থানায় দায়িত্বে থাকাবস্থায় এ পর্যন্ত ৩০টি মসজিদের জুমার নামাজে বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা।