অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রোজার ফজিলত

0
,

রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ। কোনো কারণ ছাড়া রমজানের ফরজ রোজা ভেঙে ফেললে তার কাজা ও কাফফারা রোজা পালন করা ফরজ। রমজানে ফরজ রোজা না রাখলে বা কোনো কারণবশত ছেড়ে দিলে তার কাজা আদায় করা ফরজ।
এছাড়া মানত রোজা পালন করা এবং নফল রোজা রেখে ছেড়ে দিলে বা ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় নফল রোজা ভেঙে ফেললে তা পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। ফরজ ও ওয়াজিব রোজা ছাড়া অন্যান্য রোজাকে নফল রোজা বলা হয়; নফল মানে অতিরিক্ত, ফরজ বা ওয়াজিব নয়। মূলত এই নফল রোজা দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার হলো নির্ধারিত বা রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক পালনকৃত, এই প্রকার রোজা সুন্নত। দ্বিতীয় প্রকার হলো অনির্ধারিত, এগুলো মুস্তাহাব। এই উভয় প্রকার রোজাকে সাধারণভাবে নফল রোজা বলা হয়ে থাকে।

নফল রোজার ফজিলত : রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর জাকাত আছে, শরীরের জাকাত রোজা।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার সুদৃঢ় দুর্গ।’ (নাসায়ি)।

হজরত ইবনে খুজাইমা ও হাকিম আবু ইমাম বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি আমাদের কিছু আমল করার উপদেশ দান করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রোজা অবলম্বন করো, এর সমকক্ষ কোনো আমল নেই।’ তাঁরা পুনরায় বললেন, আমাদের কোনো আমল বলে দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রোজা অবলম্বন করো, এর সমতুল্য কোনো আমল নেই।’ তাঁরা পুনরায় একই প্রার্থনা করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) পুনরায় একই আদেশ করলেন। (সুনানু নাসায়ি)।

হজরত মুআজ ইবনে আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস ছাড়া অন্য সময় আল্লাহ তাআলার জন্য একটি রোজা রাখবে; দ্রুতগামী ঘোড়া ১০০ বছরে যত দূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারে, দোজখ তার কাছ থেকে তত দূরে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি ও নাসায়ি)।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার জন্য একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল দোজখের আগুন থেকে ৭০০ বছরের রাস্তা দূরে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

হজরত আবু দারদা (রা.) ও হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার জন্য পালনকৃত একটি রোজার ফলে জাহান্নাম (ওই রোজাদার ব্যক্তি থেকে) আসমান-জমিনের দূরত্বে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি ও তাবরানি)।
হজরত ওমর (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোজখ রোজাদার ব্যক্তি থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে থাকবে।’ (তাবরানি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যে ব্যক্তি একটি রোজা পালন করবে, একটি কাকের সারা জীবন উড়ে যত দূর পথ অতিক্রম করা সম্ভব, জাহান্নাম তার কাছ থেকে তত দূরে থাকবে।’ (তরিকুল ইসলাম)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ এক দিন নফল রোজা রাখে, তবে তার যে সওয়াব হবে, তা পৃথিবীর সমান স্বর্ণ দান করলেও তার সমান হবে না।’ (তাবরানি ও আবু ইয়ালি)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। (বায়হাকি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমারই জন্য, আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব; রোজা আমারই জন্য আমি নিজেই তার প্রতিদান।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

রমজান মাসের রোজা ও অন্যান্য রোজার নিয়তের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। রমজান মাসের ফরজ রোজার নিয়ত মধ্য দিবসের পূর্ব পর্যন্ত তথা দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে করা যায়। রমজান মাসের ফরজ রোজা ভিন্ন অন্যান্য রোজার নিয়ত ‘সুবহে সাদিক’-এর আগে তথা সেহ্রির সময়ের মধ্যে বা তার আগেই করতে হয়।

কারণ, রমজান মাসের ফরজ রোজার সময় নির্ধারিত এবং তা বাধ্যতামূলক; আর অন্যান্য রোজার কোনো নির্ধারিত সময় নেই এবং এগুলো রমজান মাসের ফরজ রোজার মতো বাধ্যতামূলক অপরিহার্য ফরজ কর্তব্য নয়।