অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কী করি? চুল ঝরে পড়ছে?

0
.

সুস্থ,সুন্দর ও ঝলমলে চুল প্রত্যেক নারীর স্বপ্ন কিন্ত এই চুল ঝরতে শুরু করলে এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়।এই চুল পড়ে যাওয়া, ঝরে বা কমে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও কিছুটা প্রভাব ফেলে। চুল পড়লে ব্যথা লাগে না ঠিকই কিন্তু মন ভেঙ্গে যায়। অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকলে তা বিড়ম্বনাও সৃষ্টি করে। ছেলেদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সে মাথায় টাক পড়া জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। বিউটি এক্সপার্টদের মতে প্রতিদিন ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এর বেশি হলেই সেটি চুল ঝরে পড়া সমস্যা বলে চিহ্নিত হবে।

কেন চুল পড়ে?

বেশ কিছু কারণে চুল ঝরতে পারে,যেমনঃ চুলে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি(রঙ বা ট্রিটমেন্ট)করতে নানা রকমের রাসায়নিক উপাদানের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের(থাইরয়েড)ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ, খুশকি ও চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা ইত্যাদি। অনেক সময় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপও চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

চুল ঝরে পড়া কমানোর উপায়ঃ

১। চুলের জট ছাড়ানোর জন্য মোটা ও প্রশস্ত দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। তাতে চুল ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে। এরপর স্বাভাবিক চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল সাজানোর বা বাঁধার কাজ করতে পারেন।

২। ভেজা চুল আঁচড়ানো বন্ধ করুন। চুল ভেজা থাকা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে, ফলে চিরুনি করলে চুল বেশি ওঠে বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। চুল শুকিয়ে গেলে বা অল্প ভেজা থাকা অবস্থায় চিরুনি করুন।

৩।অনেকেরই ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে অতিরিক্ত ঘষাঘষি করার অভ্যাস থাকে। আসবাবপত্র ঝাড়পোছের মত তোয়ালে দিয়ে চুলে বাড়ি দেয়ারও প্রবণতা থাকে। এমন অভ্যাসে চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এসকল বদভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

৪। নিয়মিত আপনার চিরুনি পরিষ্কার করুন। প্রতিদিনের ব্যবহারে চিরুনি দ্রুত ময়লা হয়। কাজেই সবান, পানি ও ব্রাশের সাহায্যে এটি পরিষ্কার করে নিন। অপরিচ্ছন্ন চিরুনি ব্যবহার ও চুল ঝরার একটি কারণ। প্রতিদিন গোসলের সময় বা শ্যাম্পু করার সময় খুব সহজেই এটি পরিষ্কার করা যায়।

৫। চুল পড়া কমানোর একটি সহজ ও কার্যকরী উপায় হলো চুলের গোড়ায় উষ্ণ তেল ম্যাসাজ করা। সুপ্রাচীন কাল থেকেই উপমহাদেশে চুলের যত্নে তেল ব্যবহার করা একটি স্বাভাবিক ও সাধারন ব্যাপার। নারিকেল, জলপাই, বাদাম, সরিষা প্রভৃতি তেল, চুলের যত্নে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত চুলের গোড়ায় উষ্ণ তেল ম্যাসাজ করলে ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের মৃত কোষ ও খুশকি দূর হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। তেল হালকা গরম করে আঙ্গুলের বা কটন বলের সাহায্যে পুরো মাথায় চক্রাকারে ম্যাসাজ করুন। কয়েক ঘণ্টা অথবা পুরো রাত অপেক্ষা করুন, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুলে তেল দেয়া অবস্থায় বাড়ির বাইরে না যাওয়ায় ভালো, কারণ তেল ধূলা, ময়লা বেশি আকর্ষন করে। এতে করে চুলে খুশকির উপদ্রব হতে পারে, তাতে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে।

৬। যে সকল শ্যাম্পুতে সালফেট, সিলিকন বা প্যারাবেন জাতীয় রাসায়নিক উপাদান আছে,সেগুলো বর্জন করুন। এই ধরণের উপাদান মাথার ত্বকের ক্ষতি করে, চুলকে রুক্ষ, শুষ্ক ও মলিন করে ফেলে। চুল ভঙ্গুর ও নিষ্প্রান হয়ে যায়, ফলে চুল ঝরে পড়া ত্বরান্বিত হয়।

৭। কমপক্ষে তিন দিন পর পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, তা না হলে ত্বকে ধুলা, ময়লা, তেল জমে ও জীবাণু জন্মাতে পারে, খুশকি হতে পারে। মাথার ত্বক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।

চুল ঝরে পড়া বন্ধে চুলের যত্নঃ

১। চুলের যত্নে অতিরিক্ত হেয়ার ট্রিটমেন্ট ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার বন্ধ করুন। চুলের রঙ ঘন ঘন পরিবর্তন করা, চুলে আয়রন করা, ব্লো ডাই ইত্যাদির ফলে চুল বেশি ঝরে।

২। একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে-“চুলের গোড়া শক্ত করে বাধঁলে চুল বড় হয়”। ধারণাটি ভুল। সবসময় চুলে শক্ত বিনুনি বা ঝুটি করলে চুলের গোড়া দূর্বল হরে পড়ে। রাবার বা ইলাষ্টিকের ব্যান্ড দিয়ে চুল শক্ত করে না বাঁধাই ভালো। চুল কম ঝরবে।

৩। চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে রান্না ঘরে হানা দিন। দ্বিধার কিছু নেই, নতুন চুল গজানোর একটি ঔষধি উপায় হলো পেঁয়াজের ব্যবহার। পেঁয়াজের রস এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। কয়েকটি পেয়াজের রস করে তুলার সাহায্যে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন করে ব্যবহার করুন,উপকার পাবেন।

৪। আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। সুষম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনার চুল ও মাথার ত্বককে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করবে। এতে চুল ঝরে পড়ার প্রবনতা হ্রাস পায়। যে সকল খাবারে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন ই,ভিটামিন সি,জিংক, ভিটামিন বি ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, সেগুলো বেশি করে গ্রহণ করুন। জাঙ্ক ফুড, তেলেভাজা, মেয়নেজ,বাটার যুক্ত খাবার কম খাওয়াই ভালো। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল খান।

চুল পড়া কমাতে হেয়ার প্যাকঃ

উপকরণঃ

১। সদ্যপ্রস্তুত করা গ্রীন টি(গাঢ়) ৩ টেবিল চামচ

২। ১টি ডিমের কুসুম

প্রস্তুত প্রণালিঃ একটি পাত্রে সদ্যপ্রস্তুত করা গ্রীন টি(গাঢ়)নিন। তাতে ডিমের কুসুম যোগ করুন। গ্রীন টি হালকা গরম হতে হবে। ভালো করে নেড়ে একটি ক্রিমের মতো মাস্ক তৈরী করতে হবে। বেশি ঘন হয়ে গেলে তাতে আর একটু গ্রীন টি যোগ করতে পারেন।

পুরো চুল প্রথমে ভালো ভাবে আচঁড়ে নিন। মাথার চুল দু ভাগে ভাগ করে ধীরে ধীরে পুরো চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ৩০-৪৫ মিনিট আপেক্ষা করুন,যেন মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। এবার ঠান্ডা পানি দিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল সম্পূর্নভাবে পরিষ্কার করুন। কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুই দিন করে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যাবে।

উপকারিতাঃ গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুল ঝরে পড়া রোধে সাহায্য করে। ডিমে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট ও মিনারেলস থাকে,যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।