অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“২০ হাত রাস্তা হাঁটতে দিতে হয় ৪৫ টাকা”

1
.

জসীম উদ্দীন, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
আজব এক মফস্বল শহর বেনাপোল বন্দর। এখানে কাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। যাদুঘর নয়, চিড়িয়াখানাও নয়, নয় কোন দর্শনীয় স্থান। তবুও বেনাপোল বন্দরের মাত্র ২০ হাত রাস্তা পায়ে হেটে যাওয়ার জন্য অকারণে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ভারতে গমন কারী পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে জনপ্রতি ৪৫ টাকা।

বন্দর এলাকায় নেই পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য আধুনিক বিশ্রামাগার, প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ভারতে গমনাগমনকারীর সংখ্যা প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ।আর ৬/৭ হাজার মানুষের জন্য টয়লেট আছে ১২টি। প্রতিবন্ধীদের জন্য হহুল চেয়ার আছে ১টি ।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা আদায়ে পাসপোর্ট প্রতি। খুচরা নেই অজুহাত দেখিয়ে আদায় করছে ৪৫টাকা থেকে ৫০ টাকা। প্রতিদিন এভাবে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার টাকা।মাসে আদায় হচ্ছে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। বছর শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ৮৪ লক্ষ টাকা। এই টাকা চলে যাচ্ছে কার পকেটে। তার কোন হিসাব নাই। প্রায় কোটি টাকার দায় নিতে নারাজ বন্দর কতৃপর্ক্ষ।

এর সঙ্গে সুযোগ বুঝে পাসপোর্টযাত্রীদের নিকট থেকে উৎকোচ দাবি করছে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। এখানে নিরাপত্তার কাছে সরকারি বেসরকারি এত বাহিনী রয়েছে যে, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে পড়েছে। যে বাহিনী এখানে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দুদিন যেতে না যেতে পাসপোর্টযাত্রী, দালালদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত থাকে। আর এ নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে চলেছে। সম্পতি আমর্ড পুলিশের হাতে ঘুষ বানিজ্যের প্রতিবাদ করায় দুই সংবাদ কর্মীকে লাঞ্ছিতের শিকার হতে হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে নিয়ম রয়েছে পাসপোর্টযাত্রীদের দেখভালের দায়িত্বে শুধুমাত্র কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন পুলিশ। কিন্তু এ নিয়ম দেশের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোলে মানা হচ্ছে না।

এখানে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস এর পাশাপাশি রয়েছে আনসার, আর্মস পুলিশ, ও পিমা নামে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা। শুধুমাত্র ইমিগ্রেশন পার হয়ে নোম্যান্সল্যান্ডে যেতে একজন পাসপোর্টযাত্রীকে ৮ জায়গায় পাসপোর্ট দেখাতে হয়। এ পথে প্রতিদিন শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভারতে যায়। কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টে এসে পাসপোর্টযাত্রীরা পড়ে বিড়ম্বনায়। যাওয়ার সময় যাত্রীদের ল্যাগেজ স্কানিং মেশিনে দেওয়ার সময় সেখানে আনসার সদস্যরা ও কাস্টমসের সিপাইরা দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নিকট থেকে পাসপোর্ট দেখার নাম করে অর্থ দাবি করে। কেউ কেউ না বুঝে টাকা দিয়েও চলে যায়।

প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের শেষ প্রান্তে আর্মস পুলিশ ও পিমার লোকজন পাসপোর্ট ও টার্মিনাল ফির কাগজ চেক করে। এরপর ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বহির্গমনে দাঁড়িয়ে থাকা আনসার ও আর্মস পুলিশের সদস্যরা পাসপোর্টে ভ্রমণকর দেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখার নাম করে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন অহেতুক প্রশ্ন করে তাদের কাছে দাবি করে অর্থ।

নোম্যান্সল্যান্ডের পাশেই ২/৩ জন ইমিগ্রেশনের পুলিশ একই কাজ করেন পাসপোর্টে সিল হয়েছে কিনা, কি মাল নিয়ে যাচ্ছেন। এসব যাবে না একথা সেকথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে।

আবার পাসপোর্টযাত্রীরা ভারত থেকে ফিরে আসার সময় চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইমিগ্রেশন পুলিশ থেকে শুরু হয় বিড়ম্বনা। তারাতো পারলেই পাসপোর্টে ওখান থেকেই সিল মেরে দেয়। সিল মেরে দেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট প্রতি একশ‘ করে টাকা চায়। এরপর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মস পুলিশ তাদের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করে। এসব আর্মস পুলিশ পাসপোর্টযাত্রীদের সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে বলে আবার কখনো বলে আপনাদের মালামাল বিজিবি রেখে দিবে আমাদের কাছে পাসপোর্ট দেন আমরা পার করে দিব।

ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী মোল্লা সরোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ২০ হাত রাস্তা হেটে বেনাপোল স্থল বন্দরকে ৪৫ টাকা টার্মিনাল চার্জ দিতে হয়। আমরা দুর দুরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীরা কেন বেনাপোল বন্দরকে সরকারি ৫০০ টাকা ভ্রমণ ট্যাক্স বাদে ৪৫ টাকা দিব। এর কোনো কারণ খুঁজে পাই না।

মাগুরার পাসপোর্টযাত্রী শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিদেশগামী পাসপোর্টযাত্রী। যেখানে দেখভালের কাজ করবে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন। কিন্তু সেখানে আনসার, আর্মস পুলিশ, বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরী ও বিজিবি কেন? একই পাসপোর্টযাত্রীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকদের কাছে কেন জবাবদিহি করবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

স্থানীয় ও সাধারণ পাসপোর্টযাত্রী বলেন, যদি নিজেদের ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসি তার মধ্যে অবৈধ কোনো কিছু থাকলে কাস্টমস তা আটক করবে। বৈধ পণ্য ও একজন পাসপোর্টযাত্রী কি পরিমাণ ব্যাগেজ রুলের আওতায় মাল পাবেন কাস্টমস তা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর ১০ হাত দূরে সেই পণ্য আবার বিজিবি সদস্যরা খোলা জায়গায় টেবিল চেয়ার দিয়ে তল্লাশি চালায় এটা কি দেশের জন্য সম্মান জনক।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের নিয়ম থাকে তাহলে কেন বিজিবি, কাস্টমস এবং অন্যান্য সংস্থার লোক এক জায়গায় তল্লাশী করে না। বার বার ল্যাগেজ খুলতে খুলতে হয়রানি হতে হয় পাসপোর্টযাত্রীদের। বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত একজন পাসপোর্টযাত্রীকে কত জায়গায় যে ব্যাগ খুলতে হয় এ সভ্য সমাজে কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।

এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা পাসপোর্টযাত্রীদের তল্লাশী বা হয়রানিমূলক কোনো কাজ করি না। পাসপোর্টযাত্রীরা বন্দরের এ ভবন ব্যবহার করে তার বিনিময় আমরা ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা বন্দর চার্জ নিয়ে থাকি।এই টাকার বেশি আমরা কোন টাকা নেই না। আমরা তাদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, বাথরুমের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি দিয়ে থাকি।

১ টি মন্তব্য
  1. Azizul Haque বলেছেন

    Mohammed Iqbal