অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দামি মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতেও জমে উঠেছে ঈদ বাজার

0
.

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আসতে হাতে এখনো কয়েকদিন বাকি। রোজার শেষ দিকে এসেই এরই মধ্যেই জমজমাট হয়ে ওঠেছে নগরীর ফুটপাতগুলোর ঈদ বাজার। নগরীর সব ফুটপাতেই হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্রেতারা। আর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুটপাতের এসব দোকান থেকে ইতিমধ্যে কেনাকাটা শুরু করেছেন। বলা চলে নামিদামি মার্কেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বিকিকিনি চলছে।
্আজ নগরীর বেশিরভাগ মার্কেটের সঙ্গে ফুটপাতগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। নগরীর ফুটপাতগুলো ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাসমান এসব দোকানে বাহারি রঙ আর ডিজাইনের পোশাক সাজিয়ে বসেছে ক্ষুদে এসব ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, ফ্রক, লেহেঙ্গা, ডিভাইডার টপস, লুঙ্গি থেকে শুরু করে জুতো, সেন্ডেল এবং সব ধরনের প্রসাধনীও মিলছে। ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য বিক্রেতারও বিভিন্নভাবে হাকডাক দিয়ে যাচ্ছেন। এসব পণ্যের কোয়ালিটি ভেদে ৩০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত মিলছে এসব পোশাক। আবার অনেক দোকানে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পোশাক। দিনের আলোতে এসব দোকানে বেচাকেনা একটু কম হলেও ইফতারের পর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

.

একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ক্রেতাদের চাহিদা ও সামর্থ্যরে কথা চিন্তা করে পণ্যসামগ্রী মজুদ করেছেন। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে, তবে গত বারের তুলনায় কিছুটা কম বলে দাবি অনেকের। তারা বলেন, ‘ফুটপাতের ক্রেতা যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই হচ্ছে নিন্ম আয়ের মানুষ। তাদের অবস্থার কথা চিন্তা করে যেমন আমাদের দোকান সাজাতে হয়, তেমনি দামের কথাও ভাবতে হয়। গরমের কারণে সকালে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও ইফতারের পর পর প্রচ- ভিড় হয়। তবে যানজটের কারণেও বেচা-বিক্রিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা’।

.

ফুটপাত ব্যবসায়ী সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী পুরো নগরীতে তাদের নিবন্ধনকৃত হকারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় সাড়ে নয় হাজারেরও বেশি। কিন্তু এ সংখ্যা বিশ হাজারের মতো ছাড়িয়ে যাবে। আবার ঈদকে কেন্দ্র করে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ী সংগঠন।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেউ ভ্যানগাড়ি, কেউ ছাতা ও টেবিল বসিয়ে ব্যবসা করছেন। এসব দোকানে বড়দের শার্ট, টি-শার্টসহ নানা ধরনের প্যান্টও রয়েছে। অনেকেই ঈদকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট তেরপাল টাঙ্গিয়ে দোকান বসিয়েছেন। যাতে রাখা হয়েছে পাঞ্জাবি, ছিট কাপড়, রেডিমেড বিভিন্ন পোশাক, জুতার দোকান, প্রসাধনী, বেল্ট, লুঙ্গি, টুপি, সুগন্ধী, থ্রিপিস, ফ্রক, স্কার্ট, গেঞ্জিসহ সব পোশাক। দাম অপেক্ষাকৃত একটু কম হওয়ায় এখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

.

নগরীর জিইসি মোড়ের ভ্যানগাড়ী থেকে প্যান্ট কিনতে দর কষাকষি করছেন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. জাবেদ ওমর। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় মার্কেট থেকে কিনতে গেলে দাম বেশি, তাই এখান থেকে প্যান্ট কিনতে এসেছি। তাছাড়া এসব প্যান্টের মানও অনেক ভালো। দামও কম। দোকানদার একদাম ৫০০ বলছে। আমি ৪০০ টাকা বললাম। হলে দুইটা প্যান্ট নিব’।

অভিজাত শপিংমলে দাম বেশি ও দর কষাকষির সুযোগ কম থাকায় ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন জানিয়ে গৃহিণী সালমা বেগম বলেন, ‘আমাদের তৌফিক যা আছে তা দিয়েই সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। তাই এখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। বড় বড় মার্কেটে দর করা যায় না। এখনে ইচ্ছেমতো দর কষাকষি করা যায়। তাই ছেলে ও মেয়ের জন্য শার্ট আর জামা কিনেছি। সব সময়তো আসা যাবে না, তাই আজ আরও কিছু কিনবো তার পর বাসায় ফিরবো’।

নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় সন্ধ্যার পর পরই ‘বাইচ্ছা লন, দেইক্কা লন, ধ্বনিতে মুখর করে তুলেছেন দোকানিরা। আবার তাদের মুখের কথা শুনে ক্রেতারাও এসব দোকানে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। যদিও বিক্রেতারা জানান, ‘হাকডাক দিলেও এখনো ভালো করে ক্রেতার সমাগম হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তারা বিভিন্ন গামের্ন্টস-সহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ও বোনাস না পাওয়াকেই দেখছেন।

নগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন,‘রোজার শুরুতেই দোকান সাজিয়ে বসেছি। বেচা-কেনা যা হচ্ছে তা আশানুরূপ না হলেও মোটামুটি ভালো। আশা করছি বিক্রি আরও বাড়বে’।

.

দামের ক্ষেত্রে রেডিমেড শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকার মধ্যে। বড়দের জিন্স ও গেভার্ডিন প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকায়। শিশুদের বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের প্যান্টও শার্টগুলো ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। আবার বড়দের পলো শার্টগুলো ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, ছোটদের ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মেয়েদের বিভিন্ন পোশাকগুলো ২০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর জুতা- সেন্ডেল থেকে শুরু করে প্রসাধনীর সব কিছুই ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।