অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বাবা মানে শর্তহীন নিরাপদ ঠিকানা…..

0
.

বাবা মানে বিশালতা আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ঠিকানা, বাবা মানে নির্ভরতা, শর্তহীন নিরাপত্তা। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। দেশে দেশে ঘরে ঘরে সন্তানরা আজকের এদিনে প্রিয় বাবাকে একটু আলাদা করে ভালোবাসা ও সম্মান জানাবে। আজকের দিনটি শুধুই বাবার জন্যে।
বাবাহীন জীবন যেন ধূসর মরুর ঊষর বুক, শ্বাপদ সংকুল বনে দুরু দুরু হূৎকম্পন; বাবাহীন জীবন ছোট্ট ডিঙ্গি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার দুঃসাহসিক চেষ্টার নাম। বাবাকে নিয়ে নানা রকমের কাব্য তো আছেই, আছে অসংখ্য গানও।

‘মন্দ হোক আর ভালো হোক বাবা আমার বাবা, পৃথিবীতে বাবার মতো আর আছে কে বা; ‘বাবা আমার মাথার মুকুট চোখের মণি মা, তাদের ছাড়া এই পৃথিবী ভাবতে পারি না’- আরও কত কী।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় এ দিবসটি। বাবা দিবসের প্রবক্তা আমেরিকার সোনোরা স্মার্ট ডড। তার মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যখন মারা যান, তখন ডডের বয়স ছিলো মাত্র ১৬। আর ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন তখন যুদ্ধফেরত একজন সৈনিক।

মায়ের অনুপস্থিতিতে সোনোরা এবং তার ছয় ভাইবোনকে মানুষ করার গুরুদায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেন সোনোরার বাবা। সন্তানদের মায়ের অভাব কোনোদিন বুঝতে দেন নি তিনি। আর বাবার অকৃত্রিম স্নেহের ছাঁয়াতেই বেড়ে ওঠেন সোনোরা ও তার ভাইবোনরা।

সোনোরা বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন এতগুলো সন্তান মা ছাড়া একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন একজন সাহসী ও নিঃস্বার্থ ভালো বাবা, যিনি তার সন্তানদের জন্য সব সুখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন।

১৯০৯ সালে সোনোরার বয়স যখন ২৭ তখন আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বেই বেশ ঘটা করে পালন করা হতো মা দিবস। মা দিবস এর অনুষ্ঠানে সে বছর অর্থাৎ ১৯০৯ সালে চার্চে যান ডড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হলো বাবার প্রতি সম্মান জানাতে মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটা দিবস থাকা প্রয়োজন।

প্রথমদিকে বন্ধু, শুভাকাঙ্খীরা তার এ ধরনের চিন্তা হেসেই উড়িয়ে দেন। কিন্তু তথাপি তিনি দমে যাবার পাত্রী নন। বাবা দিবস পালনের পক্ষে তিনি জনমত সৃষ্টি করতে লাগলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেন মন্ত্রী জোটের কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন।

অবশেষে তার প্রস্তাব মেনে নিলেও মন্ত্রীজোট ৫ জুনের পরিবর্তে জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এইভাবে ১৯১০ সালের ১৯ জুন সোনোরার নিজ শহর ওয়াশিংটনের স্পোকেনে প্রথম বারের মতো বাবা দিবস পালিত হয়।

এর প্রায় ৬ বছর পর ১৯১৬ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ দিবসকে সমর্থন করেন। এক সময় এটা দেশটির আইন সভাতেও স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে আমেরিকায় দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন।

সেই থেকে বিশ্বজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশে দিবসটি আনন্দ আর ভালোবাসায় পালিত হয়ে আসছে। আমরা বাবার হাত ধরেই পৃথিবীকে যখন চিনেছি তখন থেকেই একটু একটু বুঝতে শিখেছি বেঁচে থাকার মানে। বাবা আমাদের জীবনে পরম বন্ধু।

তবে এ বন্ধুত্বের মধ্যে কোথায় যেন ছড়িয়ে আছে খানিক গাম্ভীর্যের মেঘ, কিন্তু ওই মেঘেই ধরা দেয় পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য। প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজ জীবন-অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন, জন্মের পর, মায়ের পরেই যে মানুষটি তার নিঃস্বার্থ স্নেহ-ভালবাসা আর দায়িত্বশীলতার শৃঙ্খলে বেঁধে সন্তানের জীবনকে নিরাপদ ও সুন্দর রাখতে চায়, তিনি হলেন জন্মদাতা বাবা।

সন্তানকে স্বনির্ভর ও সম্পন্ন মানুষ করার স্বপ্ন-সাধনাই যে মানুষটির জীবনের প্রধান ব্রত হয়ে দাঁড়ায় তিনি হলেন আমাদের প্রিয় বাবা। তাই পবিত্র ধর্মেও মায়ের পাশাপাশি বাবাকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। জীবন সংগ্রামে শ্রান্ত-ক্লান্ত আমাদের বাবা যে সময়টায় সামান্য একটু নির্ভরতা খোঁজেন আমাদের মাঝে তখন তাকে উপেক্ষা করা কী সন্তানদের উচিত?

যে বাবা সন্তানের মঙ্গল কামনা ছাড়া জীবনে অন্য কিছু কখনো চান নি, তাকে যেন আমরা কখনোই নিজেদের ব্যক্তিজীবনে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে মনে না করি।

আমরা যেন ভুলে না যাই বাবার অকৃত্রিম স্নেহের মাঝে বেড়ে উঠা আমাদের শৈশব আর কৈশোরের দিনগুলোকে। ধন্য হোক তোমাদের জীবন- সার্থক হোক তোমাদের পিতৃত্ব। বিশ্ব বাবা দিবসে পৃথিবীর শত কোটি বাবার জন্য রইলো প্রাঞ্জল শ্রদ্ধা শুভেচ্ছা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা।