বিচারক বললেন “আমার উপরও হামলা হতে পারতো আমাদের নিরাপত্তা কোথাই”!
কুমিল্লা আদালতে বিচারকের খাস কামরায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিচারক, আইনজীবি এবং সংশ্লিষ্টরা এ ঘটনায় হতভম্ব।
বিচার কাজ চলাকালে ছুরি নিয়ে এক আসামিকে অপর আসামি ধাওয়া করে বিচারকের খাস কামরায় খুনের ঘটনায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন সয়ং বিচারক।
নিহত হয়েছে। নিহত যুবকের নাম ফারুক(২৮)। ফারুক মনোহরগঞ্জ উপজেলার অহিদুর রহমানের ছেলে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘাতক হাসানকে আটক করেছে। তারা উভয়ই একটি হত্যা মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার ৩নং আমলি আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌসের সামনে এ নৃশংস ঘটনা ঘটে।
এসময় উৎকণ্ঠিত বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন “আমার সামনে একজন আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হলো। আমার উপরও হামলা হতে পারতো। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এতো নিরাপত্তার মাঝেও আসামির ছুরি নিয়ে আদালতে প্রবেশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আসামি হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি জানান, আসামিরা দুইজন সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। এরা দুজনই একটি হত্যা মামলার আসামি। তাদের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। ফারুক কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার অহিদুল্লাহর ছেলে। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। হাসান একই উপজেলার শহীদুল্লাহর ছেলে।
জানা যায়, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে বিচারক বিচার কাজ চলাকালে আসামি লাকসাম বোসপাড়ার শহিদুল্লাহ ছেলে হাসানের ছুরির আঘাতে তার মামলার অপর আসামী মনোহরগঞ্জের অহিদুল্লার ছেলে ফারুক (২৮) নিহত হন। হাসান ও ফারুক মনোহরগঞ্জ থানার জিআর ৮৩/১৩ ও এসটি ২০২৭/১৫ হত্যা মামলার আসামী।
হাসানের অভিযোগ ফারুকের কারণে সে খুন না করেও খুনের মামলার আসামী হয়েছে। মূলত এই ক্ষোভ থেকে সে পরিকল্পনা করে আজ আদালতে আসার সময় পকেটে করে ছুরি নিয়ে যায় এবং ফারুককে খুন করে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন ফারুককে অপর এক আসামি ছুরিকাঘাত করার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার আইনজীবী এপিপি নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামে হাজী আবদুল করিম হত্যার ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার ওই মামলার জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার দিন ধার্য ছিল। বেলা ১১টার দিকে এ মামলার আসামিরা আদালতে প্রবেশের সময় ৪নং আসামি ফারুককে ছুরি নিয়ে তাড়া করে ৮নং আসামি হাসান। এ সময় জীবন বাঁচাতে ফারুক বিচারকের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। সেখানে হাসান প্রবেশ করে টেবিলের উপর ফেলে ফারুককে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে ওই কক্ষের ফ্লোরে ফেলেও আঘাত করা হয়।
আদালতে অন্য একটি মামলার হাজিরা দিতে আসা কুমিল্লার বাঙ্গরা থানার এএসআই ফিরোজ এগিয়ে গিয়ে হাসানকে আটক করে।
এ সময় আদালত কক্ষে বিচারক, আইনজীবী ও অন্য আসামিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি লিয়াকত আলী বলেন, ‘আদালত কক্ষে বিচারক ফাতেমা ফেরদৌসের সামনেই হাসানকে ধাওয়া করেন ফারুক। এ সময় হাসান একটি টেবিলের নীচে লুকানোর চেষ্টা করলে তাকে ছুরিকাঘাত করেন ফারুক।’
* আদালতে বিচারকের সামনে আসামির ছুরিকাঘাতে অপর আসামী নিহত (ভিডিও)