অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাউজানে জায়গা দখলের অভিযোগ

0
.

ভুয়া ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে নামজারি করে অন্যের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট সদস্য ও পালি বিভাগের শিক্ষক ড. বিমান চন্দ্র বডুয়ার বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামের রাউজানের আধাঁর মানিক গ্রামের বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ রয়েছে জায়গা দখলের ক্ষেত্রে ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়াকে সহযোগিতা করছেন ১০ নং পূর্ব গুজরা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার উজ্জল বড়ুয়া ও সুজিত কুমারসহ একটি সংঘবদ্ধ দল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজান উপজেলার ১০ নং পূর্বগুজরা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পশ্চিম আধাঁরমানিক গ্রামের বাসিন্দা দানী গোপাল বড়ুয়া প্রকাশ মন্টু বড়ুয়া ও তার ৫ সন্তানের মধ্যে শ্যামল কান্তি বড়ুয়া (৫৮),ধীমান চন্দ্র বড়ুয়া (৫৪), বিধান চন্দ্র বড়ুয়া (৪৭), ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া (৪৩) ও শ্রীমান বড়ুয়া (৩৬ কে রেখে মারা যান।

অন্যদিকে একই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের নলিনী রঞ্জন বড়ুয়া তার তিন সন্তান দেশপ্রিয় বড়ুয়া (৫৬), দেবপ্রিয় বড়ুয়া (৪৮) ও সত্যপ্রিয় বড়ুয়া (৪৩) কে রেখে মারা যান।

কিন্তু ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার উজ্জল বড়ুয়ার সহযোগিতায় আর এস খতিয়ানে যতীন্দ্র লাল বড়ুয়ার বিক্রিত জমির ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়ে সত্যপ্রিয় বড়ুয়া গংদের মালিকানাধীন রাউজান উপজেলার আধাঁরমানিক মৌজার বি.এস খতিয়ান (নং-১১৫৮,১৩৮০ এর বি,এস দাগ নং-৬৫০,৭৫২,৭৫৮,৭৫৬) দাগের ১৫ শতক নলিনী রঞ্জন বড়ুয়ার নামে রাউজান ভুমি অফিসের প্রস্তাব ফরমে নিজেকে নলিনী রঞ্জন বড়ুয়ার  মিথ্যার আশ্রয়ে ওয়ারিশ সাজিয়ে বিক্রি করা ২৬ শতক ও অবিক্রিত আরো ১৫ শতক জায়গা ভুয়া নামজারী করে নিয়ে জবর দখল রাখেন।

যার বিরুদ্ধে সত্যপ্রিয় বড়ুয়া গং ৩২৪৪ নং খতিয়ান মূলে নামজারি খারিজের বিবিধ মামলা দায়ের করেন মামলা নং-৮৭/২০১৬-২০১৭।

উক্ত মামলায় ২০১৭ সালের একাধিক তারিখে বাদী-বিবাদীকে রাউজান সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার আদেশ দেয়া হলে বিবাদী প্রতিটি তারিখে অনুপস্থিত থাকে এবং নিজেদের পক্ষে কোন তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের ২১তারিখ সহকারী ভূমি কমিশনার জোনায়েদ কবীর সোহাগ বিবাদীর অনুপস্থিতিতে বাদী বক্তব্য ও তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে বলেন, মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভুমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন, কানুনগোর প্রতিবেদন, নালিশী নামজারী মামলার কাগজপত্রাদী, বাদীর বক্তব্য, দাখিলীয় কাগজপত্রাদী ও ভুমি অফিসের রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বি.এস ১১৫৮,১৩৮০ নং খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক নালিনী রঞ্জন বড়ুয়া।

বিবাদীর নামে নালিশী জমির ওয়ারিশ সূত্রে নামজারি খতিয়ান পর্যালোচনায় দেখা যায়, নালিশী নামজারী মামলা নং-১৩৬৭/১৫ এর বাদীর অনূকুলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ হইতে প্রদত্ত ওয়ারিশ সনদপত্রে নালিশী খতিয়ানের বি,এস রেকর্ডীয় মালিকের সাথে বিএস রেকর্ডীয় ওয়ারিশের সম্পর্কের কোন প্রমাণ ওয়ারিশ সনদপত্রে দেখা যায় না। নালিশী বি,এস দাগের নালিশী জমির বি,এস রেকর্ডিয় মালিক নলিনী রঞ্জন বড়ুয়া এবং দেশপ্রিয়, দেবপ্রিয় ও সত্যপ্রিয় বড়ুয়ার বৈধ ওয়ারিশগণ বলে উল্লেখ রয়েছে।

জায়গার প্রকৃত মলিক দাবীদার সত্যপ্রিয় বড়ুয়া পাঠক ডট নিউজকে বলেন, ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর দাপট দেখাইয়া বিভিন্ন জাল জালিয়াতিপূর্ণ দলিল তৈরী করে সেই সকল জাল দলিলকে আসল বলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নানাভাবে প্রদর্শন করে মিথ্যার আশ্রয়ে বিভিন্নভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তার সাথে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সাথে ভাল সম্পর্ক আছে বলে প্রকাশ্যে আস্ফালন এবং লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাইতেছে।

অভিযোগ করে বাদী বলেন, ড. বিমান চন্দ্রের পিতা দানী গোপাল বড়ুয়া প্রকাশ মন্টু বড়ুয়া ১৩৯/১৫ নং প্রস্তাবিত ফরমে সহকারি কমিশনার ভুমি রাউজান তামিল নং-১৩৬৭/১৫ মূলে ও ০৮/০৪/২০১৫ তারিখে আমার মৃত পিতা নলিনী রঞ্জন বড়ুয়া এবং এলাকার ধনজয় বড়ুয়াকে ওয়ারিশ সাজিয়ে অবৈধ ভুয়া বিএস ৩২৪৪ নং খতিয়ানের মাধ্যমে আমার পিতা মাতার বিক্রিত ২৬ শতকের সাথে অতিরিক্ত ১৫ শতকসহ অন্যদের জমি জবর দখল করে রাখে। তিনি প্রশ্ন করেন এক ব্যক্তি (ড. বিমানের পিতা দানী গোপাল বড়ুয়া প্রকাশ মন্টু বড়ুয়া) পৃথক তিনজনের ওয়ারিশ কেমনে হলেন..?

তিনি বলেন, স্থানীয় মেম্বার উজ্জল বড়ুয়া ও সুজিত বড়ুয়ার সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় ড. বিমান চন্দ্র একাধিক ওয়ারিশ দেখিয়ে ভুয়া নামজারীর মাধ্যমে খতিয়ান সৃষ্টি করেছে যা পরে বাতিল হয়েছে।

মামলার রায়ে তার নামজারি দাখিল অবৈধ প্রমাণিত হওয়ার পরও সে আমার জমি এখনো জোর পূর্বক জবর দখল করে রেখেছে।

এখন মেম্বারের লোকজন আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি ও নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলায় জাড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমি এলাকায় যেতে পারছি না। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে কোন প্রতিকার পায় নি বলে জানান সত্যপ্রিয় বড়ুয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলার সাবেক এসিল্যন্ড ও বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমি এসিল্যান্ড থাকাবস্থায় মামলাটি নিষ্পত্তি করেছি। এখন কি অবস্থা বলতে পারবো না।

এ বিষয়ে জানতে মেম্বার উজ্জল বড়ুয়ার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

অপর দিকে অভিযোগের বিষয়ে ঢাবির প্রভাষক বিমান বড়ুয়া পাঠক ডট নিউজকে বলেন, আমরা অন্যায় ভাবে কারো জায়গা দখল করিনি।

সত্যপ্রিয় বড়ুয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আমার পিতা তার পিতার থেকে ৫০/৬০ বছর আগে এই জায়গা কিনে নিয়েছে। তখন থেকে এ জায়গা আমাদের ভোগ দখলে। সত্যপ্রিয় আমাদের কাছে কখনো সরাসরি জায়গা দাবী করেনি। সে বাইরে থেকে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।

একাধিক ব্যাক্তির ওয়ারিশ দেখিয়ে নাম জারীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নি। বলেন, এসব জায়গার বিষয়ে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই। আমার ভাই এসব দেখাশুনা করে।