অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চসিকের ২ হাজার ২ শত ২৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষণা

0
14543736_1175713675857342_8930324489874082238_o
.

২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য ২ হাজার ২ শত ২৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ।

আজ রবিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক বিশেষ সাধারণ সভায় এই বাজেট ঘোষনা করেন। মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছিরের এটি দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা।

এ ছাড়াও সভায় গত অর্থ বছরের ৫ শত ৯২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেয়া হয় ।

 সভায় একই সাথে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ৫ শত ৯২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেটে নিজস্ব উৎস কর ও অভিকর থেকে ২৪২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা, হাল ও অভিকর ৫৫০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৪৮ হাজার, অন্যান্য কর থেকে ২২২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, ফিস আদায় বাবদ ৬১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা, জরিমানা বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় ৭২ কেটি ১২ লক্ষ টাকা, সুদ বাবদ ৫ কোটি টাকা, বিবিধ আয় থেকে ১৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, ভর্তুকি বাবদ আয় ২৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা অর্থাৎ নিজস্ব উৎস থেকে প্রাপ্তি ১ হাজার ১ শত ৯৭ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও ত্রাণ সাহায্য ২০ লক্ষ টাকা, উন্নয়ন অনুদান ৯ শত ৮৫ কোটি ১০ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৪২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ১ হাজার ২৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে।

বাজেট বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় চট্টগ্রামকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করা, নগরীর ছাত্রীদের এবং কর্মজীবী মহিলাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশেষ রুটে ২০টি এসি বাস চালুকরণ. জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রস্তাবিত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান এর যুগোপযোগী বাস্তবায়ন, নগরীর যানজট নিরসনে বাস-ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, কালুরঘাটে গার্মেন্ট পল্লি স্থাপন, অত্যাধুনিক ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নগরভবন নির্মাণ, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও ঠান্ডাছড়ি এলাকায় পর্যটনের উন্নয়ন, সাইক্লোন সেন্টার-সহ স্কুল নির্মাণ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন, বাকলিয়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস কমপ্লেক্স হিসেবে উন্নয়ন, জাইকার সহায়তার অত্যাধুনিক সলিড ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন, নগরীতে বিদ্যমান অব্যবহৃত পাহাড়সমূহকে পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় নিয়ে সেখানে বিনোদন ও পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আবাসন সুবিধা হিসেবে গড়ে তোলা,

????????????????????????????????????
.

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৬টি খাল খনন এবং প্রয়োজনীয় পাম্প হাউস-সহ স্লুইস গেইট নির্মাণ, কর্পোরেশনের সাগরিকা স্টোর এলাকার সামগ্রিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি ও সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ, কর্পোরেশনের এলাকায় অবস্থিত আগ্রাবাদ ডেবা, পাহাড়তলী জোড়া দিঘি, বেলুয়ার দিঘি ও আসকার দিঘি ইত্যাদির সংরক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য বৃহদাকার পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করা, নগরীতে বিদ্যমান খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানমূহের সংরক্ষণ, পাহাড়ে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিবাসীদের জন্য বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ, নগরীর পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত উন্নয়ন, বিশেষ রুটে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল গঠন (পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জমাদি-সহ), পাহাড়ের পাদদেশে সুবিধাজনক স্থানে জলাধার স্থাপন, চট্টগ্রাম (সদরঘাট) হতে সুবিধাজনক রুটসমূহে নৌপরিবহণ চালুকরণ, ইনার রিং রোড নির্মাণ (কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলকে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দ্রুততম সময়ে সংযোগ স্থাপনের জন্য শাহ আমানত ব্রিজ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত চার লেন রাস্তা, বাঁধ ও সংযুক্ত খালসমূহে স্লুইস গেট নির্মাণ), নগরীতে প্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ, নতুন অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, প্রিমিয়ার ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্ল্যান্টের প্রয়োজনীয় সংস্কার, হালিশহর টিজি ও আরেফিন নগর টিজি তে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, সি.এন.জি-প্ল্যান্টে ২ টি নতুন কম্প্রেসার মেশিন স্থাপন, দামপাড়ায় ১ টি নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপন, নগরীর সকল সড়ক বাতি এলইডি বাতিতে রূপান্তর, সাগরিকাস্থ টিউব-লাইট ফ্যাক্টরিকে এল.ই.ডি. বাতি ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর, কর্পোরেশন এলাকায় রাস্তার দুই পার্শ্বে ও মিড আইল্যান্ডের বাগান এবং বিভিন্ন পার্কে রঙিন এল.ই.ডি. গার্ডেন লাইট স্থাপন, ৪১টি ওয়ার্ডের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং প্রধান প্রধান সড়কে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিক পোল স্থাপন, সেবক কলোনি-সহ অন্যান্য স্থাপনায় বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপন, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির আধুনিকায়ন ও নতুন প্রযুক্তি সংযোজন, সমগ্র নগরীকে ইবধঁঃরভরপধঃরড়হ-এর আওতায় আনয়ন সহ ৩৬ টি বিষয় উল্লেখ করেন মেয়র।

 তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৯৮৮ সালের সরকার অনুমোদিত একটি জনবল কাঠামো রয়েছে। সে জনবল কাঠামোতে বিভিন্ন পদের সংখ্যা ৩১৮০ টি। ফলে ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামোতে অনুমোদিত জনবল দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাসকারী ৬০ লক্ষ লোকের যথাযথ নাগরিক সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা বিধায় বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে কর্পোরেশনের বিশাল কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।

নাগরিকদের সেবা চাহিদা পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। নাগরিকদের যথাযথ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ২৩৪৭ জনের প্রস্তাবিত জনবলের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ১০৪৬টি পদ সৃজনে সম্মতি প্রদান করেছেন। বর্তমানে অত্র সিটি কর্পোরেশনে ৭৪৯১ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছে

ন। ইতোপূর্বে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত কর্মচারীগণ তাদের বেতনের ২০% হারে সর্বনিন্ম ১৫০০ টাকা উৎসবভাতা প্রাপ্ত হতেন। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে উৎসবভাতা বৃদ্ধি করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একমাসের বেতন দুই ঈদে সমানভাবে ভাগ করে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ একসাথে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

ইতোমধ্যে সরকার স্থায়ী কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০% হারে বাংলা নববর্ষ বা বৈশাখি ভাতা ঘোষণা করা হলে, সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে স্থায়ী কর্মচারীদের ন্যায় অস্থায়ী কর্মচারীদেরকেও ২০% হারে বাংলা নববর্ষ ভাতাকে উৎসাহভাতা হিসাবে প্রদান করা হচ্ছে। অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতনভাতা ২৭% হতে ৩৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডোর টু ডোর গমন করে বিন এর মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য আরও ২ হাজার জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন শিক্ষা বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষা হচ্ছে অতীত সংস্কৃতির বাহক, বর্তমান সভ্যতার পৃষ্ঠপোষক এবং ভবিষ্যৎ প্রগতির ধারক।

শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধকার দূরীভূত করে আলোকপ্রাপ্ত সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করে। জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে অমিত মেধা ও সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে এর বিকাশের জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা। শিক্ষা বিস্তারের ধারাবাহিকতায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রসারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ও ভূমিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-সহ সমগ্র বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে ২টি কলেজে অনার্স কোর্স চালু-সহ মোট ৭টি ডিগ্রি কলেজ, ১৪টি উচ্চ-মাধ্যমিক কলেজ, ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি ইংলিশ মিডিয়াম-সহ মোট ৭টি কিন্ডারগার্টেন, ২টি প্রাথমিক, ১টি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৫টি কম্পিউটার কলেজ (ক্যাম্পাস), ১টি থিয়েটার ইনস্টিটিউট (টিআইসি), ১টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৪টি বয়স্কশিক্ষা কেন্দ্র, ৩৫০টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং আরো কতিপয় বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

সম্প্রতি পাথরঘাটা মহিলা মহাবিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ বিশাল কর্মকা- পরিচালনা করে আসলেও আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়র বলেন, শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে গিয়ে এ সমস্যাটি উপলব্ধিতে আসে। শিক্ষা বিভাগের কাজে সমন্বয় সাধন ও যাবতীয় জটিলতা নিরসনকল্পে একটি সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। অচিরেই উক্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষা বিভাগের মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হবে।

কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সচিব আবুল হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন এবং কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।