অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব, সিলেটজুড়ে তুলকালাম

0
.

৪৫ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কেনা নিয়ে গতকাল সোমবার দিনভর ছিল হুলুস্থুল। শটগানের মিস ফায়ারে পেঁয়াজের জন্য ঝরে রক্ত। সন্ধ্যা হতেই পেঁয়াজের জায়গা নেয় লবণ।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সিলেট বিভাগজুড়ে। এমন খবরে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন সিলেট নগরের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। বাড়তি চাপে নিমিষেই ফুরিয়ে যায় নগরের বিভিন্ন দোকানের লবণের মজুত। আবার অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রির জন্য লবণ মজুত করেন। এ নিয়ে সিলেটে লবণ নিয়ে ঘটে লঙ্কাকাণ্ড।

প্রশাসন বলছে, লবণের মূল্যবৃদ্ধির খবর পুরোটাই গুজব। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ গুজব ছড়াতে পারে। ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, লবণের চাহিদামাফিক সরবরাহ রয়েছে। শিগগিরই দাম বাড়ার শঙ্কা নেই। তবে ব্যবসায়ীরা এমনটি দাবি করলেও সোমবার রাতেই অনেক দোকানে বাড়তি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার রাত ১০টার দিকে সিলেট নগরের কালীঘাট এলাকা থেকে লবণ ভর্তি দুটি ভ্যান জব্দ করে জাতীয় গোয়েন্দা এনএসআই’র প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৫০ বস্তা লবণ জব্দ করা হয়। এ সময় দুই ভ্যান চালককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও দুই ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তা ২১৬ টাকা বেশি দামে লবণ বিক্রি করেছেন বলে জানান সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সুমন্ত ব্যানার্জি।
অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে বড়লেখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে উপজেলার সাতটি দোকানের মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

গুজবকে কেন্দ্র করে এই হুলুস্থুলের প্রেক্ষিতে সোমবার সন্ধ্যায় জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। নিজের ফেসবুকে পুলিশ সুপার লেখেন, ‘প্রিয় সিলেটবাসী, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কোনো কিছুর দাম বাড়তে পারে এমন গুজবে কান না দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সিলেট নগরের বাসিন্দা আলিম আল রাজি নামের এক চিকিৎসক সোমবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, সিলেটে আরও একটি নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে! ‘দাম বেড়েছে’ – যারা এই গুজবটা ছড়িয়েছে তারা সফল। এখন সত্যি সত্যি অনেক জায়গায় আগের চেয়ে চারগুণ বেশি দামে এই দ্রব্যটি বিক্রি হচ্ছে। কিছু জায়গায় অবস্থা আরও খারাপ।

আগামীকাল (বুধবার) দাম আরও কয়েকগুণ বাড়তে পারে- এই আশঙ্কায় অনেকে দ্রব্যটি কিনে রাখছেন। ফলে অনেক দোকানে দেখা দিয়েছে সংকট। (সোমবার) বিক্রি না করে বুধবার বেশি দামে বিক্রি করবেন- এই আশায় দোকানিরাও ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন কৃত্রিম সংকট। সরকারের উচিত কঠোর অবস্থানে যাওয়া এবং পিটিয়ে এসব অসভ্যদের সোজা করে ফেলা।

সোমবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লবণ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। বেশিরভাগ মুদি দোকানেরই মজুত ফুরিয়ে গেছে। দোকানে লবণ না পেয়ে ক্রেতাদের আক্রমণাত্মক আচরণ করতেও দেখা গেছে।

সব ক্রেতারই দাবি, লবণের দাম বাড়তে যাচ্ছে এমন খবর শুনেছেন। তাই লবণ কিনতে এসেছেন তারা। তবে কোথায় এমন সংবাদ শুনেছেন এ কথা কেউ বলতে পারেননি।

অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির দায়ে জেল জরিমানা প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির খবর পেয়ে আমরা কালীঘাটে অভিযানে আসি। এ সময় লবণ ভর্তি দুটি ভ্যানসহ প্রায় ৫০ বস্তা লবণ জব্দ করা হয়। দুই ভ্যানচালককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুই ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রতি বস্তা ২১৬ টাকা বেশি দামে লবণ বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। জব্দকৃত লবণ সিলেট কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।