অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে শাবলের আঘাতে ধ্বংস প্রাচীন ঐতিহ্য “শেখ বাহার উল্লাহ মসজিদ“ (ভিডিও)

0
.

শত বছরের প্রাচীন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কাতালগঞ্জ শেখ বাহার উল্লাহ মসজিদটি সংস্করণের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

২৮৩ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি ইট-হাতুড়ি ও শাবলের আঘাতে জর্জরিত করে অবশেষে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১৭৩৭ সালে নির্মিত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ছিল প্রাচীন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রত্ন স্থাপনা। যা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের ইতিহাসসচেতন মানুষ ও পর্যটকের আগমন ঘটত।

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার পূর্বদিকে ঐতিহাসিক খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খান’র বাড়ির পূর্বপার্শ্বে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার পাশেই শেখ বাহার উল্লাহ মসজিদটির অবস্থান ছিল। নান্দনিক ও প্রাচীন এই মসজিদটিতে ৪টি বড় মিনার, ৪টি ছোট মিনার, ২টি ছোট গম্বুজ ও ১টি বড় গম্বুজের মাধ্যমে মসজিদটিকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল।

২৮৩ বছরের এই প্রাচীন মসজিদটি চট্টগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত ছিল। এই মসজিদটি সংরণের জন্য ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সরকারের বরাবরে আবেদন-নিবেদন করেও কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন। তিনি বলেন. গত ৯ জানুয়ারি এই মসজিদটির ধ্বংসের ইতিহাস দেখতে হলো দেশের জনগণকে।

জানাগেছে, মোঘল আমলে এই অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম যখন ইসলামাবাদ নাম নিয়ে সুবা বাংলার রাজধানী ছিল তখনই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে বলা হয়, মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর পৌত্র শেখ বাহার উল্লাহ ১৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর এই মসজিদ শেখ বাহার উল্লাহ শাহী জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে এই ধারণা করা হয়। এই মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বের একটি গুরত্বপূর্ণ মহামূল্যবান ও অতি সংবেদনশীল স্থাপনা। ভারতের দিল্লীর কেন্দ্রীয় মহাফেজখানা ও বৃটেনের লন্ডনস্থ ব্রিটিশ মিউজিয়াম এ শেখ বাহার উল্লাহ জামে মসজিদ সম্পর্কিত গুরত্বপূর্ণ দস্তাবেজ প্রায় ১৭০ বছর ধরে সযত্নে রক্ষিত ছিল। আজ এই ইতিহাসকে ধ্বংসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে নতুন একটি মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস রচিত হলো।

.

মসজিদটির সরকারি প্রত্ন সম্পদহিসেবে সংরক্ষণ করার দাবি ও ২৮৩ বছরের প্রাচীন মসজিদটি ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রহিম, প্রাক্তন সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, রেজাউল করিম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার নূর হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, শাহনুর আলম, এস এম ওসমান, ভাস্কর ডি কে দাশ মামুন, অমর কান্তি দত্ত, মোহাম্মদ সাফাত, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক দিদারুল আলম।

এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা চট্টগ্রামের এই প্রাচীন মসজিদটি ধ্বংসের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইতিহাস এই প্রাচীন মসজিদ ধ্বংসকারীকে শত বছর পর হলেও চিহ্নিত হবে। বিবেকের কাঠগড়ায় ইতিহাস হত্যাকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এই প্রাচীন মসজিদটির অবস্থান ও ইতিহাস ছিল ২৮৩ বছরের নন্দিত ইতিহাস। আজ কুচক্রী ইতিহাস অসচেতন বিবেকহীন মানুষের কারণে একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল। এই ধ্বংসের ইতিহাস লজ্জার ও দুঃখের।

বিবৃতিতে আরো বলা হল, আশপাশের জায়গাতে বহুতল মসজিদ নির্মাণ করা যেত। কারণ মসজিদের সামনে প্রচুর জায়গা রয়েছে। বিষয়টা না ভেবে প্রাচীন এই মসজিদটি অহেতুক ধ্বংস করা হলো। আমাদের আগামী প্রজন্ম যারা মসজিদ ধ্বংসের সাথে জড়িত আছে তাদেরকে ইতিহাস অসচেতন মানুষ হিসেবে বিবেচিত করবে।